দুইজন মানুষ(!) এবং দলছুট হওয়ার গল্প


মূল রচনায় যাইবার পূর্বেই আপনাদিগকে একটি গল্প বলিয়া নেই। সে অনেক কাল পূর্বের কথা। তৎকালে বর্তমানের ন্যায় আগ্নেয়াস্ত্র, আধুনিক যানবাহন কিছুই আবিষ্কৃত হয় নাই। পদযুগলই একমাত্র ভরসা ছিল এক স্থান হইতে অন্যত্র গমন করিবার। ঈদৃশ কালে একদল ব্যক্তি যাইতেছিলেন এক শ্বাপদস্বঙ্কুল জঙ্গলের মধ্য দিয়া। উক্ত জঙ্গল বাঘ-ভাল্লুকের জন্য অতি কুখ্যাত ছিল। প্রায়শই সেখানে উহাদের দেখা মিলিত। তো ভ্রমনকারী দলে দুইজন ব্যক্তির নিকট যথেষ্ট মূল্যবান কিছু স্বর্ণালঙ্কার ছিল। তাহারা দেখিলেন যে গতিতে তাহারা অগ্রসর হইতেছেন তাহাতে গন্তব্যে পৌছাইবার পূর্বেই সন্ধ্যা ঘনাইয়া আসিবার সম্ভাবনা প্রবল। ইহাতে তস্করের হাতে পড়িয়া না আবার স্বর্ণালঙ্কার হারাইতে হয়? এরূপ পরিস্থিতি বিবেচনা করিয়া তাহারা দুইজন দ্রুত অগ্রসর হইবার বন্দোবস্ত করিলেন। কিয়ৎক্ষন গত হইতে না হইতেই তাহারা দুইজন যথেষ্ট আগাইয়া গেলেন এবং সমগ্র দলকে পিছনে রাখিয়া গন্তব্যের খুব কাছাকাছি চলিয়া গেলেন ক্ষুদ্র সময়ের ব্যাবধানে। তাহারা যারপরনাই আনন্দিত হইয়া নিজেদের মধ্যে আলোচনা করিতে লাগিলেন, পশ্চাতে যাহারা পড়িয়া আছেন তাহারা নির্ঘাত আজ ব্যাঘ্রের কবলে পড়িয়া প্রাণ হারাইবেক। ইহা বলিতে না বলিতেই তাহারা দেখিলেন তাহাদের সামনে এক বৃহদাকৃতির ব্যাঘ্র আসিয়া উপস্থিত। উহাকে দেখিয়াই আন্দাজ করা যাইতেছিল যে, ক্ষুধার্ত হইয়া সে শিকারের অণ্বেষনে বাহির হইয়াছে। সামনে এরূপ ব্যাঘ্র দেখিয়া অগ্রগামী ব্যক্তিদ্বয় যারপরনাই ভীত হইয়া উঠিলেন এবং তাহারা কোনরূপ কর্ম নির্ধারনের পূর্বেই ব্যাঘ্র তাহাদের বধ করিয়া ক্ষুধার জ্বালা মিটাইয়া উক্ত স্থান পরিত্যাগ করিল। পড়িয়া রহিল ব্যক্তিদ্বয়ের পরিধেয় পোশাক এবং তাহাদের আহরিত স্বর্ণালঙ্কারসমূহ। অন্যদিকে পশ্চাতে পড়িয়া থাকা দল এক স্থানে তাঁবু খাটাইয়া রাত্রি যাপন করিয়া উষালগ্নে আবার যাত্রা শুরু করিল। পথিমধ্যে তাহারা উক্ত ব্যক্তিদ্বয়ের কাপড় এবং স্বর্ণালঙ্কার পাইয়া গেল। তাহারা তখন স্বর্ণালঙ্কারসমূহ নিজেদের মধ্যে বাটোয়ারা করিয়া পুনরায় গন্তব্যের দিকে যাত্রা করিলেন। আর ইহা হইতেই “আগে গেলে বাঘে খায়, পিছে গেলে সোনা পায়” বাগধারাটির উৎপত্তি হইলো।

যাহা হোক, উপরের গল্পটি সম্পূর্নরূপেই বানোয়াট। আমি ইহা আপন মনের মাধুরী মিশাইয়া ফাদিয়া বসিয়াছি। কিন্তু ইহার অন্তরালের ঘটনা এরূপই কিছু হইবে বলিয়া আমার বিশ্বাস। এখন পাঠক হয়তো ভাবিতেছেন হঠাৎ করিয়া আমি আপনাদিগকে বাগধারার শানে নযুল কেন ব্যাখ্যা করিতেছি, বলিতেছি তাহা এখনই। আজিকে এক ঘটনার কারনে আমরা হঠাৎ করিয়া এক বৃহদাকৃতির দল হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া পড়িয়াছি। আমরা গুটিকতক অর্বাচিন ভাবিতেছিলাম ইহাতে আমাদিগের অবস্থাও তো ওই বাঘে খাওয়া দুই ব্যক্তির ন্যায় হইয়া যাইবে। ভবিষ্যতে যখন ব্যাঘ্র আসিয়া আমাদিগের উপর হামলা চালাইবে তখন তো পিছনে পড়িয়া থাকা দল কিছুই করিবে না অথবা করিতে পারিবে না। কিন্তু না! আমাদিগের মধ্যে থাকা কতিপয় মহাজ্ঞানী-মহাজন আপনার ঈদৃশ ভ্রান্তি দূর করিতে সক্ষম হইয়াছেন। তাহারা বলিবার পড় আমি ভাবিয়া দেখিলাম, বাস্তবিকই আমি তো এরূপ চিন্তা করিয়া দেখি নাই। প্রথমত ব্যাঘ্র হইতেছে বিড়াল গোত্রীয় প্রাণী। আর কে না জানে বিড়াল অত্যন্ত আরামপ্রিয়। সুতরাং ব্যাঘ্রও তাহার ব্যতিক্রম নহে। উহা ভক্ষন করিবার উদ্দেশ্যে আসিলে উহাকে খানিক আদর করিয়া দিলে, বুকে-পিঠে হাত বুলাইয়া দিলে তাহা খুব সহজেই মানিয়া যাইবে (অথবা মানিয়া যাইবার কথা)! সঠিকরূপে তোয়াজ করিলে কে না মানে? অন্যত্র ইহা হইতেছে তৈলমর্দনের যুগ। সুতরাং ইহা ভাবিবার কোন কারনই নাই যে ব্যাঘ্রও ইহার ব্যতিক্রম হইবে। সুতরাং ব্যাঘ্রকে সঠিকরূপে তৈলমর্দন করিতে পারিলেই কেল্লাফতে। ব্যাঘ্র তো আমাদিগকে ভক্ষন করিবেই না বরং ইহাকে ব্যাবহার করিয়া আরো কর্ম সম্পাদন করিয়া লওয়া যাইবে। ঈদৃশ কর্ম সম্পাদনকালে ব্যাঘ্র হয়তো কিঞ্চিত কোপ প্রদর্শন করিয়া দুই একজনকে আচড় দিয়া বসিতে পারে, উহা কোন ব্যাপার না। ভক্ষন যে করিতেছে না ইহাই তো বেশি। এরূপ আরো বিভিন্ন সম্ভাবনা আমাদের নিকট আসিয়া উপস্থিত হইবে যদি আমরা দলছুট হইয়া আগাইয়া যাই। তখন পিছনে পড়িয়া থাকা দলই বরং আমাদিগের দিকে তাকাইয়া বলিবে,

“আগে গেলে সব পায়, পিছে গেলে ধরা খায়!”

আমার ভালো লাগা কিছু চলচ্চিত্র


অনেক দিন হয়ে গেল নতুন কোন লেখা দিচ্ছি না। গ্রামীনফোন এর ইন্টারনেট নিয়ে সমস্যার কারনে অনেক দিন ইন্টারনেট থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলাম। তাছাড়া আলসেমীরও এর পেছনে একটা বড় ভূমিকা আছে। বিরতি ভাঙার জন্যই তাই ভাবলাম আমার ভালো লাগা কিছু চলচ্চিত্র নিয়ে আজ একটা লেখা দিয়ে দিই। যদিও এরকম একটা লেখা লিখব এটা আমি বেশ অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম কিন্তু লেখা আর হয়ে উঠে নি। তবে কিছুদিন আগেই মাহমুদ ফয়সাল ভাই এরকম একটা লেখা দেয়ার জন্য আমাকে বলেছিলেন। তাই আজ মূলত তার কথায়ই লিখছি।

প্রথমেই বলে নিচ্ছি আমি যে চলচ্চিত্রগুলো সম্পর্কে এখানে লিখছি এগুলো ছাড়াও আমার পছন্দের তালিকায় আরও অনেক চলচ্চিত্র আছে। কিন্তু তাদের মধ্য থেকে এদেরকে বেছে নেয়ার একটি প্রধান কারন হচ্ছে এদের বেশির ভাগই একটু অপরিচিত। অপরিচিত বলতে আমি বুঝাচ্ছি ব্যাবসা সফল নয় অথবা অন্য কোন কারনে হয়তো অনেকেরই নজরে খুব বেশি আসে নি। যদি কোন কারনে চলচ্চিত্রগুলো আপনার না দেখা হয়ে থাকে তাহলে দেখতে পারেন। আশা করছি ভালো লাগবে।

১. Sex is Zero (2002)

     পরিচালক: Yoon Je-kyoon

     দেশ: দক্ষিন কোরিয়া

     ভাষা: কোরিয়ান

কলেজ পড়ুয়া একদল ছাত্র-ছাত্রীকে নিয়ে চলচ্চিত্রে কাহিনি তৈরি হলেও য়ুন-সিক নামের  এক তরুনই চলচ্চিত্রের মূল চরিত্র। বিভিন্ন হাসি-তামাশার মধ্যে দিয়ে কাহিনি এগিয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত এক চমৎকার রোমান্টিক সিনেমাতেই পরিবর্তিত হয় এটি। অসাধারন ভাবে পরিচালক চলচ্চিত্রের নামকে সার্থকতা দিতে সক্ষম হয়েছেন। তবে বিভিন্ন দৃশ্য অনেকের কাছেই আপত্তিকর লাগতে পারে। 😐

২. Trade (2007)

     পরিচালক: Marco Kreuzpainter

     দেশ: জার্মানী

     ভাষা: ইংরেজী

আদ্রিয়ানা নামের ১৩ বছরের দরিদ্র এক মেক্সিকান কিশোরীর অপহরনকে ঘিরেই মূলত গড়ে উঠেছে চলচ্চিত্রের কাহিনি। অপহরনের পর তাকে পাচার করে দেয়া হয় পতিতাবৃত্তির জন্য। আর তাকে খুজতেই পথে নেমে আসে তার ১৭ বছর বয়সী ভাই। আর এর মধ্য দিয়েই অত্যন্ত চমৎকার ভাবে এগিয়ে গিয়েছে সিনেমার কাহিনি। এর মাঝে উঠে এসেছে নারী পাচার এর অনেক হৃদয় বিদারক ঘটনা।

৩. Diary of a Nymphomaniac (2008)

     পরিচালক: Christian Molina

     দেশ: স্পেন

     ভাষা: স্প্যানিশ

একজন nymphomaniac (যৌন আসক্ত) নারীর জীবনকে নিয়েই চলচ্চিত্রের কাহিনি পরিনতির দিকে গিয়েছে। ভ্যালেরি নামের ওই নারীর খোলামেলা যৌন জীবন এবং এক পর্যায়ে জীবন সম্পর্কে তার উপলব্ধি আর আপনজনের অভাব বোধই সিনেমার মূল উপজীব্য। খুবই চমৎকার ভাবে এক অদ্ভূৎ জীবনধারার চিত্র তুলে ধরেছেন পরিচালক। তবে কাহিনির খাতিরেই অত্যন্ত খোলামেলা ভাবে বিভিন্ন যৌন দৃশ্য দেখানো হয়েছে যা অনেকের কাছেই আপত্তিকর মনে হতে পারে।

৪. The Boy in the Stripped Pyjamas (2008)

     পরিচালক: Mark Herman

     দেশ: যুক্তরাষ্ট্র

     ভাষা: ইংরেজী

আইরিশ লেখক John Boyne এর লেখা উপন্যাস এর উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে এটি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এক নাজি কমান্ডার এর ৮ বছর বয়সী ছেলে এবং সমবয়সী এক ইহুদী শিশুর বন্ধুত্বকে ঘিরেই সিনেমার কাহিনি পরিনত হয়ে অত্যন্ত ট্র্যাজিক ভাবে শেষ হয়েছে। নাজি বাহিনীর আগ্রাসন এবং ধ্বংসযজ্ঞ সম্পর্কে সাধারন মানুষের অজ্ঞতা এবং মনোভাবও এখানে অসাধারনভাবে ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

৫. Crossing Over (2009)

     পরিচালক: Wayne Kramer

     দেশ: যুক্তরাষ্ট্র

     ভাষা: ইংরেজী

যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসরত কিছু অভিবাসী এবং নাগরিকত্ব লাভে ইচ্ছুক কয়েকজনকে নিয়েই প্রধানত সিনেমার কাহিনি তৈরী হয়েছে। সেই সাথে বর্ডার সমস্যা, জাল কাগজের ব্যাবহার, গ্রিন কার্ড প্রসেসিং সিস্টেম এবং তাতে দূর্নীতি সহ আরো অনেক বিষয় উঠে এসেছে। মজার বিষয় হচ্ছে অবৈধ অভিবাসী পরিবারটি একটি বাংলাদেশী পরিবার। যুক্তরাষ্ট্রকে বলা হয় Land of opportunity, আর সেখানকার নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য মানুষ কি কি করতে পারে তা খুব সুন্দর ভাবে তুলে ধরা হয়েছে এই সিনেমাটিতে।

৬. Oye! (2009)

     পরিচালক: Anand Ranga

     দেশ: ভারত

     ভাষা: তেলেগু

পরিচালক আনন্দ রাঙ্গার পরিচালিত প্রথম সিনেমা এটি। শুরুতেই পরিচালক তার অনেকগুলো ভালো লাগা চলচ্চিত্রের নাম উল্লেখ করেছেন এবং সিনেমাটিতে উল্লেখিত চলচ্চিত্রের বিভিন্ন অংশের সাথেই আপনি মিল খুজে পাবেন। কিন্তু তারপরও অপ্রয়োজনীয় কিছু চটুল অংশ বাদ দিলে সিনেমাটি আপনাকে মুগ্ধ করবে বলেই আমার বিশ্বাস।

৭. অন্তহীন (২০০৯)

     পরিচালক: অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরী

     দেশ: ভারত

     ভাষা: বাংলা

২০০৯ সালে ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কারে শেষ্ঠ চলচ্চিত্র সহ ৪ টি বিভাগে পুরষ্কার পেয়েছিল এই চলচ্চিত্রটি। যদিও কাহিনি যথেষ্ট ধীর গতিতে অগ্রসর হয় এবং অনেকের পক্ষেই হয়ত ধৈর্য্য ধরে রাখা কষ্টকর হতে পারে। কিন্তু তারপরও পরিচালক যথেষ্ট নান্দনিকতার পরিচয় দিতে পেরেছেন উপস্থাপনে। বর্তমান ভারতের শহুরে মানুষদের ধ্যান-ধারনাও বেশ ভালো ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক।

৮. Vinnaithaandi Varuvaayaa (2010)

     পরিচালক: Gautham Menon

     দেশ: ভারত

     ভাষা: তামিল

কার্তিক নামের এক হিন্দু তরুন এবং তার চেয়ে এক বছরের বড় জেসী নামের এক খ্রীস্টান তরুনীর ভালোবাসার কাহিনিকে ঘিরেই সিনেমা এগিয়ে গিয়েছে। ভিন্নধর্মী একটি কাহিনি এবং চমৎকার পরিচালনার কারনে পৌনে ৩ ঘন্টার এই সিনেমা আপনাকে আটকে রাখবে পুরোটা সময়। সেই সাথে তৃষা কৃষ্ণান এর অভিনয়ও সত্যি প্রশংসনীয়।

আপাতত এই ৮ টি চলচ্চিত্রের নামই মনে আসছে। এর মোটামোটি সবগুলোই ড্রামা টাইপের সিনেমা। আপনি যদি এককভাবে শুধুমাত্র এ্যাকশন-এ্যাডভেঞ্চার সিনেমার ভক্ত না হয়ে থাকেন তাহলে সিনেমা গুলো আপনার ভালো লাগবে বলেই আমার বিশ্বাস। ভবিষ্যতে আরো কিছু সিনেমার নাম দেয়ার ইচ্ছে রইলো।

‘মুক্তবুদ্ধি’র চর্চা এবং একজন বোকা মানব


বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রবেশ করিয়াছি তাহা প্রায় আড়াই বৎসর হইয়াছে। সবকিছু সঠিক পথে চলিলে হয়তো দেখা যাইবে আর দেড় কি দুই বৎসরের মাথায়ই আপন নামের শেষে প্রকৌশলী শব্দটি বসাইবার অধিকার অর্জন করিয়া ফেলিব। আহা, কি আনন্দের ব্যাপারই না হইবে তাহা। কিন্তু একটি দুঃখ কিন্তু মনে সবসময়ই তাড়াইয়া বেড়াইবে, তাহা হইলো; এমনই এক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্জন করিলাম যেখানে ‘মুক্তবুদ্ধি’র চর্চার কোন সুযোগই নাই। সারাক্ষন সকলেই শুধু পড়িবার কথাই বলে। ইহা কোন কথা হইলো? বিশ্ববিদ্যালয়ে আসিয়া যদি আপন জ্ঞান চতুর্দিকে বিকশিত করার সুযোগ না’ই পাই তাহা হইলে আর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কি সার্থকতা?

ইহাই ভাবিতাম আমি চার-পাঁচদিন পূর্বেও। কিন্তু হঠাৎই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পদের কিছু রদবদল ঘটিয়া গেল। ভাবিলাম, দেখা যাক এইবার কি হয়। নতুন ব্যক্তি, নিশ্চয়ই নতুন কিছু করিবেন। আমার ধারনা যে একেবারেই সঠিক তাহা একদিন গত হইতে না হইতেই প্রমান হইয়া গেল। ছাত্রাবাসে দেখিলাম উপাচার্য মহোদয় হইতে বার্তা আসিয়াছে,”আর কোন বাঁধা নাই; এখন সকল ছাত্র ‘মুক্তবুদ্ধি’র চর্চা করিতে পারিবে। আমাদিগের বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সঠিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ তৈয়ারি করিতে হইবে।” ইহা জানিয়া আমি যারপরনাই প্রীত হইয়া গেলাম। ভাবিলাম, যাক এইবার বুঝি আমার অপূর্ন সাধ কিঞ্চিত মিটিবে। কেননা কুয়েটের প্রোগ্রামিং প্রতিযোগীতা বিষয়ক সংগঠন SGIPC এবং আলোকচিত্রী সমিতি KUETPS এই দুইটির প্রতিষ্ঠার সাথেই আমি প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত। এইবার আর পায় কে? প্রতিষ্ঠা যখন করিয়াছি আর ‘মুক্তবুদ্ধি’র চর্চাও যখন উন্মুক্ত, তখন তো এইবার কোমরে দড়ি বাঁধিয়া নামিতে হইবে। শুধু প্রতিষ্ঠা করিলেই কি চলিবে নাকি, তাহাদের শক্ত অবস্থানে লইয়া যাইতে হইবে না। মনে মনে ইহাও ভাবিতেছিলাম, দুই দুইটা ‘মুক্তবুদ্ধি’র চর্চা হয় এমন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন আমি, উপাচার্য খুশি হইয়া আমাকে বিশেষ কোন পুরষ্কার না দিয়া দেন। ইহা ভাবিতে ভাবিতে আমি যখন ছাত্রাবাসের বিভিন্ন কক্ষে ঘুরিয়া বেড়াইতেছিলাম তখন দেখি বিভিন্নজন বিভিন্ন অপপ্রচার চালাইতেছে এই ‘মুক্তবুদ্ধি’র চর্চার উন্মুক্তকরন লইয়া। মনে মনে ভাবিলাম, এই সকল ছাত্র হইতে দেশ কি পাইবে? ইহারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্পন করিয়াছে, অথচ এখনো বাল্যকালের বিদ্যালয়ের মনোভাব ছাড়িতে সমর্থ হয় নাই। হায় কি দুঃখ!

দুঃখিত মন লইয়া আনসারী ভাই এর দোকনে নাস্তা করিতে যাইয়া দেখি এলাহী কান্ড। ছাত্ররা দলে দলে ‘মুক্তবুদ্ধি’র চর্চা করিতে নামিয়া পড়িয়াছে। তাহারা দেখি রীতিমতো মিছিল করিয়া ইহা উদযাপন করিতেছে। ইহা দেখিয়া আমার দুঃখ গায়েব হইয়া গেল। এত মানুষ ‘মুক্তবুদ্ধি’র চর্চা করিতে নামিয়াছে, আর আমি কিনা কিছু কূপমন্ডুক এর কথায় মন খারাপ করিয়া ঘুরিতেছি। কি বোকা আমি!

খানিক সময় মিছিলটি পর্যবেক্ষন করিবার পর বুঝিতে পারিলাম ইহা একটি রাজনৈতিক মিছিল। এইবারে ধন্দে পড়িয়া গেলাম। আমি তো জানতাম আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক কোন কর্মকান্ড চালানো সম্পুর্ন নিষিদ্ধ। তাহলে এই মিছিল কোন স্পর্ধায় বাহির করিল তাহারা? ছাত্রাবাসে আসিয়া আবার খুজিলাম যে রাজনীতিও কি আমাদিগের বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্মুক্ত করা হইয়াছে নাকি? কিন্তু কিছুই খুজিয়া পাহিলাম না। মনে একটা ক্ষীন সন্দেহ উঁকি দিতেছিল, ইহার সাথে আবার ‘মুক্তবুদ্ধি’ চর্চার কোন সম্পর্ক নাই তো? কালবিলম্ব না করিয়া অন্তর্জাল জগতে আসিয়া উঁকি দিলাম ছাত্র রাজনীতি বিষয়ে। বিস্ময়ের সাথে লক্ষ করিলাম, এই বিষয়ে যাহাই দেখি সব বাংলাদেশ সম্পর্কিত। ইহা আবার কি ব্যাপার? খানিক সময় ইহা লইয়া মাথা খাটাইবার পর মনে হইল যে, রাজনীতিও বোধহয় ‘মুক্তবুদ্ধি’ চর্চারই একটা অংশ। কতিপয় জ্ঞানী ব্যক্তির সহিত আলাপ করিয়া জানিতে পারিলাম যে, রাজনীতি নাকি অতি উচ্চশ্রেনীর ‘মুক্তবুদ্ধি’র চর্চা। আর তাহাতেই সকলে এত আনন্দিত হইয়া ‘মুক্তবুদ্ধি’র চর্চা করিতে ঝাপাইয়া পড়িয়াছে। আবারো আমি যে এক গন্ডমূর্খ, তাহার প্রমান পাইলাম।

ভাবিতেছি আর বিলম্ব করা চলে না। যেহেতু আমি কুয়েটে ‘মুক্তবুদ্ধি’ চর্চার একজন অগ্রনী সৈনিক সেহেতু এক্ষনই নতুন কোন রাজনৈতিক সংগঠন তৈয়ারি করিয়া মাঠে নামিয়া যাইতে হইবে। নতুবা আমার পুরষ্কারটা না অন্য কেহ ছিনাইয়া লইয়া যায়!

Bookmark and Share

বিস্ময় (শেষাংশ)


(প্রথমেই দুঃখ প্রকাশ করছি এতোটা দেরি করার জন্য। বিভিন্ন ব্যস্ততার জন্য এতদিন গল্পটির শেষ অংশটুকু দিতে পারি নি)

রকিব ব্যাবসয়ার খাতিরে বেশির ভাগ সময়ই বাইরে থাকে, সুতরাং মুনিরা স্ত্রী হিসেবে তার কাছ থেকে যে সময়টুকু আশা করে তা বেশির ভাগ সময়ই সে পায় না। সে ক্ষেত্রে অন্য কোন সুদর্শন পুরুষ মানুষ এর প্রতি তার আকৃষ্ট হওয়াটাই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হলো না। মুনিরা বুঝতে পারলো যে সে ধীরে ধীরে জাহিদ এর প্রতি দূর্বল হয়ে যাচ্ছে। যদিও সে মনকে বারবার প্রবোধ দেবার চেষ্টা করছিল যে, এটা অন্যায়। কিন্তু কেন যেন মন তা মানছিল না। মুনিরা যখন এই মানসিক দ্বন্দে ভেবেই পাচ্ছিল না কি করবে তখনই একদিন জাহিদ এর কাছ থেকে প্রস্তাবটা এল।

সেদিন ছিল মঙ্গলবার। আসিফকে স্কুলে রেখে এসে মুনিরা বরাবরের মতোই যুথীর পার্লারে গিয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখে জাহিদ বসে আছে। মুনিরাকে দেখেই সে বলল, আরে আসুন আসুন, আপনার কথাই ভাবছিলাম।

মুনিরা অবাক হবার ভান করে বলল, কেন, আমার কথাই ভাববেন কেন? ঘরে সুন্দরী বউ আছে, কিন্তু তারপরও কি মনে করে আমার কথা?

জাহিদ খানিক হেসে উত্তর দিল, সে যাকগে। চলুন কোথাও বসে একটু চা খেয়ে আসি।

মুনিরাও সানন্দে রাজি হয়ে যায়। জাহিদ চা খাবার কথা বলে নিয়ে গেল এক চাইনিজ রেস্টুরেন্টে। সেখানকার মৃদু আলোতে এম্নিতেই সবকিছু কেমন যেন রহস্যময় লাগে, তার উপর বিভিন্ন টেবিলে জুটি বেধে বসে আছে আজকালকার ছেলে-মেয়েরা। মুনিরা এদের দেখে কেমন যেন লজ্জা পেয়ে যায়। এখানে উপস্থিত কেউই যে স্বামী-স্ত্রী না তা দেখেই বোঝা যায়। সে নিজে একজন বিবাহিতা নারী, সেও এসেছে অন্য এক পুরুষের সাথে। এই ভেবেই সে যেন কেমন অস্বস্তি বোধ করছিল। জাহিদ তাকে নিয়ে কোনার এক টেবিলে গিয়ে বসলো। ওয়েটারকে দু’কাপ কফি দেবার কথা বলে মুনিরার সাথে বিভিন্ন কথা বলতে লাগলো। হঠাৎ করেই সে মুনিরাকে বলে বসলো, মুনিরা আমি তোমাকে ভালবাসি।

মুনিরা চমকে উঠে জাহিদ এর দিকে তাকালো। জাহিদ এসব কি কথা বলছে? মুনিরার নিজের মনের মাঝেও একথা ছিল। জাহিদও যে তাকে পছন্দ করতো তাও সে বেশ বুঝতে পারতো। তাই বলে সরাসরি ভালবাসি বলে ফেলবে?

জাহিদ মুনিরার হাত ধরে বললো, মুনিরা আমি জানি তুমিও আমাকে ভালবাস। বল, বাস না?

ঘটনার আকস্মিকতায় মুনিরা কেমন যেন স্থবির হয়ে গেছে। সে আড়ষ্ট ভঙ্গিতে মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় যে, সেও মন থেকে জাহিদকে চায়।

দুদিক থেকেই সম্মতি থাকায় তাদের মাঝে আর কোন বাধা থাকে না। যদিও দুইজনেই বিবাহিত কিন্তু সে কথা ভুলে গিয়ে দুজনেই প্রেমে মত্ত হয়ে ওঠে। আগে মুনিরার বাসায় জাহিদের যাতায়াত ছিল না, এখন সেটাও প্রায় নিয়মিত হয়ে দাড়িয়েছে। মুনিরার বাসা বেশির ভাগ সময় খালিই থাকে। তাই তেমন কোন সমস্যাও নেই।

সেদিন রবিবার ছিল। রকিব কি একটা কাজে নারায়নগঞ্জ গিয়েছিল। তার ফিরতে ফিরতে তিনদিন লেগে যাবে। আসিফের সামান্য জ্বর এসেছিল। সে স্কুলে যায় নি। বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে ছিল। এসময় হঠাৎ জাহিদ এসে হাজির। মুনিরারও একা একা ভালো লাগছিল না, মনে মনে তাই জাহিদকে এই মূহুর্তে আশা করছিল। ড্রইং রুমে বসে গল্প করতে করতেই জাহিদ মুনিরার সাথে বেশ অন্তরঙ্গ হয়ে বসে। এতদিন ধরে তাদের সম্পর্ক চলছে। এর মাঝে তা যথেষ্ঠই গভীরতা পেয়েছে। সামাজিক এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ এর সীমাও তারা বহুবারই ছাড়িয়ে গিয়েছে। এতদিন জাহিদ যখন আসত তখন বাসা খালিই থাকত, আজ যদিও আসিফ বাসায় আছে। কিন্তু সে ঘুমিয়ে আছে ভেবে মুনিরা সেই চিন্তাটা মাথা থেকে সরিয়ে দিল। এর মাঝেই তারা যথেষ্ঠ অন্তরঙ্গ হয়ে পড়লো। হঠাৎই জাহিদের হাতের ধাক্কায় সোফার পাশের টেবিল থেকে একটা পিতল এর শোপিস পড়ে যায়। ঝনঝন শব্দ করে ওঠে তাতে। কিন্তু ওইদিকে খেয়াল করার কোন সময়ই নেই তখন তাদের।

অন্যদিকে শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় আসিফের। সে মাকে ডাকতে গিয়েও কি মনে করে যেন ডাকল না। বিছানা থেকে উঠে মাকে খুজতে গেল। খুজতে খুজতে ড্রইং রুমে এসে মাকে এই অবস্থায় দেখে সে হতভম্ব হয়ে যায়। সে তার ছোট্ট জীবনে কখনো এ ধরনের ঘটনার সম্মুখিন তো কখনো হয়ই নি সেইসাথে নিজের মাকে এই অবস্থায় দেখে সে বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে থাকে। তার এখন কি করা উচিৎ তা সে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিল না।

হঠাৎই দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা আসিফের দিকে চোখ যায় মুনিরার। চমকে লাফ দিয়ে উঠে কাপড় ঠিক করে নেয় সে। লজ্জায় সে তখন থরথর করে কাঁপছে। সেইসাথে একটা অজানা ভয়ও তাকে গ্রাস করছে। লজ্জায়, অপমানে, ভয়ে মুনিরার মাথা একেবারে ফাঁকা হয়ে যায় তখন। সে ভাবে এই মূহুর্তে আসিফকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়াটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। ছুটে গিয়ে সে আসিফকে ধরে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে আসে।

ড্রইং রুমে এসে সে কেমন যেন উদ্ভ্রান্ত দৃষ্টিতে জাহিদের দিকে তাকায়। জাহিদ নিজেও বিপদ খানিকটা আঁচ করতে পারছিল। এ খবর যদি কোন ভাবে যূথী অথবা রকিবের কানে যায়, তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। যূথী তাকে একজন আদর্শ স্বামী হিসেবে মানে। কিন্তু আসলে তা একেবারেই ভুল। আসিফের অভ্যাসই হচ্ছে পরকীয়া করে বেড়ানো। মুনিরার আগেও সে আরও দুইজনের সাথে এভাবে মিলিত হয়েছিল। অবশ্য শুধু পরকীয়ার আনন্দের জন্যই যে সে এমনটা করে তা বললে ভুল হবে। অর্থও এখানে একটা ভূমিকা রাখে। কেননা সে যাদের যাদের সাথে পরকীয়া করেছে, তারা সকলেই তার থেকে তূলনামুলক ভাবে ধনী। কিন্তু কখনোই এমন বিপদে পড়ে নি সে। আজকে বিপদ থেকে উদ্ধার পাবার জন্য কি করা যায় তা দ্রুত ভাবতে লাগলো সে। প্রথমেই মাথায় এল আসিফকে একেবারে সরিয়ে ফেলা। কিন্তু পরমূহুর্তে ভাবলো, একেবারে বাচ্চা মানুষ; আগে কিছু বুঝানোর চেষ্টা করা যাক। তারপর যদি না বোঝে তাহলে বালিশ চাপা দিয়ে দুই মিনিট ধরলেই হবে। সে মুনিরার দিকে তাকিয়ে বললো, চল দেখি ওকে ব্যাপারটা বুঝানোর চেষ্টা করি। তারপর দেখা যাক কি করা যায়।

মুনিরা কোন কথা না বলে চুপ করে দাড়িয়ে রইল। তার মাথায় তখন কিছুই ঢুকছিল না। জাহিদ তাকে ধরে নিয়ে আসিফের ঘরে এসে উপস্থিত হয়। আসিফ তখনো চোখ খুলে শুয়ে আছে। তাকে কেমন যেন মৃত মানুষের মতো দেখাচ্ছিল। বিস্মিত চোখে সে ঘরের ছাদের দিকে তাকিয়ে ছিল। জাহিদ তার কাছে গিয়ে দাড়ানোর পরও তার মাঝে কোন ভাবান্তর হলো না। জাহিদ আস্তে করে আসিফের পাশে বসলো, একবার মুনিরার দিকে তাকালো, তারপর আসিফের দিকে তাকিয়েই খানিকটা চমকে উঠলো। দেখলো আসিফের গলার কাছে দুই হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির ছাপ। ঠোটের কোঁনা দিয়েও খানিক রক্ত বের হয়ে এসেছে। এরকম কিছু সে ভাবতেই পারে নি। সে একবার আসিফের বুকের উপর হাত রাখলো, তারপরেই নিশ্চিত হয়ে গেল। জাহিদ অবাক হয়ে মুনিরার দিকে তাকালো। সে তখনো অপ্রকৃতিস্থের মতো দাঁড়িয়ে আছে। তারপর মাথা ঘুরিয়ে আসিফের দিকে তাকালো। নিথর হয়ে পড়ে আছে আসিফ। তার চোখ দুটো তখনো খোলা।  প্রাণহীন সে চোখে তখনো রাজ্যের বিস্ময়।

Bookmark and Share

বিস্ময়


আসিফ এবার মাত্র নার্সারীতে পড়ে। খুবই চঞ্চল। সারাদিন শুধু হইচই করে কাটায়। ওর মা মুনিরার সারাটা দিনই চলে যায় আসিফ এর পেছনে। আসিফ মাকে যেমন যন্ত্রনা দেয় ঠিক তেমনি ভালোবাসে। মা ওর যন্ত্রনায় অস্থির হয়ে মাঝে মাঝে বলে বসে, বেশি যন্ত্রনা করলে কিন্তু তোকে এতিমখানায় নিয়ে রেখে আসবো। আসিফ তখন ছুটে এসে মায়ের বুকে মাথা গুজে কাঁদতে শুরু করে।

মুনিরা তখন ওকে সান্ত্বনা দেয়, পাগল ছেলে আমার। তুই হচ্ছিস আমার বুকের ধন। তোকে কি কখনো আমি এতিমখানায় রেখে আসতে পারি। তোকে ছাড়া যে আমি বাঁচতেই পারব না।

মায়ের আশ্বাস পেয়ে খানিকটা শান্ত হয় আসিফ।

আসিফের বাবা রকিব একজন ব্যাবসায়ী। ব্যাবসার খাতিরে তাকে মাঝেমাঝেই ঢাকার বাইরে ছুটতে হয়। আসিফকে দেয়ার মতো সময় সে খুব বেশী বের করতে পারে না। তারপরও চেষ্টা করে অন্তত বন্ধের দিনগুলো ছেলের সঙ্গে কাটাতে। আসিফও মুখিয়ে থাকে সেই দিনগুলোর জন্য। বাবাকে সে প্রচন্ড ভালোবাসে। বাবার সাথে বাইরে গেলেই মজা। শুধু যদি বাবাকে একবার বলা হয়, বাবা ওই জিনিসটা চাই, সেটা খেতে ইচ্ছে করছে। বাবা সাথে সাথে তা কিনে দেবে। আসিফের বাবা রকিব মানুষটাও খুবই ভালো। কখনোই ছেলেকে বকাঝকা করেন না। মুনিরা যখন আসিফকে বকাঝকা করেন তখন রকিব হাসতে হাসতে বলেন, বকছ কেন? এই বয়সের বাচ্চারা যদি একটু দুষ্টুমি না করে তাহলে কখন করবে? বাবার আস্কারা পেয়ে আসিফও নতুন উদ্যমে নেমে পড়ে। মুনিরা তখন তার রাগ ঝাড়তে শুরু করেন রকিব এর উপর। রকিব সব কিছু হাসি মুখে শুনে যান।

এভাবেই চলছিল তিন সদস্যের এই ছোট্ট পরিবারের জীবন।

 

মুনিরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স শেষ করলেও এখন পুরোদস্তুর গৃহিনী। আসিফ যে সময়টা স্কুলে থাকে তখন তার করার মতো কিছু থাকে না। তাই টুকটাক হাতের কাজ কিছু করার চেষ্টা করে। রকিব অনেকদিন ধরে যদিও বলছে যে, ঘরে বসে না থেকে চাকরী-বাকরী কিছু কর। তোমার সময়টাও ভালো কাটবে তাছাড়া নিজেও কিছুটা স্বাবলম্বী হতে পারবে। কিন্তু মুনিরা তাতে কান দেয় নি। তার ধারনা চাকরী করলে যদি আসিফ এর প্রতি অযত্ন হয়!

সেদিন আসিফকে স্কুলে দিয়ে বাসায় ফিরছিল মুনিরা। রাস্তায় হঠাৎই তার ভার্সিটি জীবনের বান্ধবী যুথীর সাথে দেখা হয়ে গেল। ভার্সিটিতে থাকা অবস্থায় দুজনে খুবই কাছের বান্ধবী ছিল। কিন্তু মুনিরার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর থেকে আর খুব বেশি যোগাযোগ ছিল না দুজনের মধ্যে। একথা সেকথার পর মুনিরা জানতে পারলো, পাগলীটা বিয়ে করেছে। ভার্সিটিতে থাকতে সবসময় বলতো, বিয়ে আমি জীবনেও করব না। একজন পুরুষ মানুষের সাথে এক বিছানায় থাকা আমার পক্ষে অসম্ভব। আর তাছাড়া পুরুষ মানুষকে কোন বিশ্বাস আছে নাকি। আজ এই মেয়ের সাথে কাল ওই মেয়ের সাথে।

মুনিরা তাই একটু খোঁচা দিয়ে বললো, কিরে, খুব না বলতি জীবনেও বিয়ে করবো না। এখন কেন?

যুথী একটু হেসে উত্তর দেয়, নাহ্‌, জাহিদ অন্য সব পুরুষদের মতো না। অন্য কোন মেয়ের দিকে ও তাকায়ই না। সে কথা বাদ দে। কাছেই আমি নতুন একটা বিউটি পার্লার খুলেছি, চল তোকে নিয়ে যাই।

মুনিরার হাতে কোন কাজ নেই, তাই সে আর আপত্তি করলো না। বিউটি পার্লারে গিয়ে ঢুকতেই দেখতে পেল বেশ সুদর্শন একজন পুরুষ বসে আছে। যুথী পরিচয় করিয়ে দিলো, এই হচ্ছে জাহিদ। মুনিরা মনে মনে প্রশংসা না করে পারলো না। পাগলীটা বেশ হ্যান্ডসাম এক হাসব্যান্ড পেয়েছে। রকিব এর সবদিকই ভালো শুধু গায়ের রংটা একটু ময়লা। সেটা নিয়ে মুনিরার মনে একটা গোপন অতৃপ্তি থাকলেও কখনো কাউকে কিছু বলে নি। কিন্তু যুথীর হাসব্যান্ড জাহিদ সত্যিই একজন পছন্দ হওয়ার মতো ছেলে। পুরনো বান্ধবীর সাথে আড্ডা মেরেই সেদিন আসিফ এর স্কুলের সময়টুকু কাটিয়ে দিল মুনিরা।

পরদিন আসিফকে স্কুলে দিয়ে আবার যুথীর বিউটি পার্লারে যায় মুনিরা। সেদিন যুথী ছিলনা সেখানে। বদলে জাহিদ সবকিছু দেখাশোনা করছিল। জাহিদ এর সাথেই কথা বলে ঘন্টাখানেক কাটিয়ে দিল মুনিরা।

পরদিন আবারো বিউটি পার্লারে গিয়ে উপস্থিত হলো মুনিরা। আজকেও যুথী ছিল না। জাহিদের সাথেই খানিক সময় গল্প করে কাটিয়ে দিল মুনিরা। এভাবেই চলতে লাগলো বেশ কিছুদিন। প্রায়ই বিউটি পার্লারে যুথী থাকতো না। তখন জাহিদ থাকতো। ওর সাথে কথা বলতে বেশ লাগতো মুনিরার। জাহিদেরও যে বেশ ভালোই লাগতো তা মুনিরা পরিষ্কার বুঝতে পারতো।

 

(আগামী পোস্টে সমাপ্য)

বিশ্বকাপের মাতাল হাওয়া


দীর্ঘ চার বছরের অপেক্ষার পর এসে গেছে ফুটবল বিশ্বকাপ। যথারীতি বিভিন্ন দলের সমর্থকরা তাদের বাড়ির ছাদে লাগিয়েছেন প্রিয় দলের পতাকা। এক্ষেত্রে অবশ্য ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার সমর্থকরাই এগিয়ে। তবে অন্যরাও কম যান না। কিন্তু আমি যতবারই এই পতাকাগুলো দেখি তখন কেমন জানি হতাশ লাগে। কেন আমাদের নিজের দেশের পতাকা না উড়িয়ে অন্য দেশের পতাকা উড়াতে হয়। আমরা কি নিজের দেশের পতাকা আজ বিশ্বকাপ উপলক্ষে গর্বের সাথে উড়াতে পারতাম না? অবশ্যই পারতাম!
আপনারা নিশ্চয়ই এতক্ষনে হাসতে শুরু করেছেন। ভাবছেন আবারো আমি পাগলের প্রলাপ বকছি। কিন্তু সত্যি বলছি, আসলেও এমনটা হতেও পারতো! বিশ্বাস না হলে বাংলাদেশের র‌্যাঙ্কিংটা দেখুন (Bangladesh: FIFA/Coca-Cola World Ranking)। এখানে দেয়া আছে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ অবস্থান ছিল ১১০ (১৯৯৬ সালে)। এবারের বিশ্বকাপে এবং প্রতি বিশ্বকাপেই এমন অনেক দল থাকে যাদের অবস্থান এর কাছাকাছি এবং ১৯৯৬ সালের দিকে তারচেয়েও খারাপ ছিল। তাহলে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কেন এমন হলো? কেন আমাদের ফুটবলের অবস্থা দিনে দিনে উন্নতির বদলে অবনতি হচ্ছে? এর একটা কারন হিসেবে বলা যায় ক্রিকেট এর ব্যাপক আগ্রাসন। ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশ অংশগ্রহন করার যোগ্যতা অর্জন করার পর থেকে ফুটবল-এ সেই যে ভাটা পরেছে তা আর কাটেওনি, কাটবেও না মনে হয়! আমার এখনো মনে আছে ছোটবেলায় যখন জাতীয় লীগ এর খেলাগুলো হতো তখন মোহামেডান, আবাহনীর সমর্থকদের সেকি উত্তেজনা। অথচ এখন কেউ তার খবরও রাখে না। দুঃখ দুঃখ!!!
যেহেতু আমাদের দেশ বিশ্বকাপ খেলছে না সেহেতু আমরা বিশ্বকাপে অন্য দেশকে সমর্থন দিতেই পারি। কিন্তু তাই বলে তাদের পতাকা কেন উড়াতে হবে, এটা আমার মাথায় ঢুকে না। এতে একদিকে যেমন আমাদের দেশের আইন ভঙ্গ করা হয় অন্যদিকে অন্য আরেকটি দেশের পতাকাকেও অবমাননা করা হয় (কেননা কোন দেশের পতাকাই সঠিক নিয়ম অনুযায়ী বানানো হয় না এবং সব দেশেরই পতাকার ব্যাপারে বেশ কিছু আইন আছে)। সেই সাথে যে পরিমান কাপড় অপচয় করা হয় তার কথা কি আর বলবো! একটা ছোট্ট হিসাব দিই। ধরুন সারা বাংলাদেশে ১ লক্ষ পতাকা উড়ানো হয়েছে, গড়ে প্রত্যেক পতাকার দৈর্ঘ্য ২ গজ, তার মানে প্রায় ২ লক্ষ গজ কাপড়ের কি নির্লজ্জ অপচয়। আমাদের মতো একটা গরিব দেশে এই কথা ভাবতেও কষ্ট হয়।
ঢাকা নিউমার্কেট এ উড়ছে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সমর্থকদের পতাকা
কিছুদিন আগে জার্মান প্রবাসী আমার এক বোন তার ফেসবুক-এ স্ট্যাটাস দিয়েছে, “কি খেল! আমার ব্রাজিলিয়ান বান্ধবী তার প্রোফাইল এ ব্রাজিল এর ছবি দেয় নি অথচ বাংলাদেশী বান্ধবী ব্রাজিল এর ছবি লাগিয়েছে।” মনে তখন প্রশ্ন এলো, জাতি হিসেবে আমরা কি কখনোই আত্মসম্মানবোধ অর্জন করতে পারব না?
আমি বিশ্বকাপের সবগুলো খেলা না দেখলেও ভালো দলগুলোর খেলা দেখার চেষ্টা করি। একক ভাবে কোন দলের প্রতি আমার তেমন দূর্বলতা নেই, কোন খেলোয়ার এর খেলা ভালো লাগলে তার খেলাটা দেখার চেষ্টা করি। কিন্তু যখন বিভিন্ন দলের সমর্থকদের (আসলে অন্ধভক্ত) দেখি তখন তাদের জন্য কেমন যেন করুনা হয়। অনেকেই আছে (সবাই নয়) যারা মনে করে তাদের সমর্থিত দল বাদে অন্য দল যেমন খেলতেই জানে না তেমনি তাদের সমর্থকরাও ফুটবল খেলার কিছুই বোঝে না। এক দলের সমর্থকরা অন্য দলের সমর্থকদের সাথে কথার যুদ্ধ থেকে এক পর্যায়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে এমন ঘটনা তো আমদের ইতিহাসে আছেই। যে জাতি অন্যদেশের খেলা নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হতে পারে তারা রাজনৈতিক সংঘর্ষে লিপ্ত হবে এটাতো খুবই স্বাভাবিক। স্কুল এর কোন এক ক্লাসের বাংলা বইয়ে একটা প্রবন্ধ ছিল (নামটা এখন মনে পরছে না), সেখানে লেখক বলেছেন, “একটি উচ্চ জাতির সংস্পর্ষে আসিয়াও আমরা তাহাদের গুনগুলো রপ্ত না করিয়া দোষগুলো আত্মসাৎ করিয়াছি।” এই কথাটা যে কতোটা সত্য তা বিশ্বকাপ এলেই আরো ভালোভাবে অনুধাবন করা যায়। কেননা সারা পৃথিবীতে ইংরেজদের খেলা নিয়ে সহিংসতা এবং হুলিগান বিখ্যাত আর আমরা কিনা তাই অনুসরন করছি। এ লজ্জা কোথায় রাখি। তবে এর মাঝেও একটা ভালো খবর দিই, টাঙ্গাইলের কোন এক জায়গায় আমার এক বন্ধু দেখেছে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার পতাকা সেলাই করে লাগানো আর তাতে লেখা, “ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা সমর্থক মৈত্রী সঙ্ঘ”। এটা দেখে মনে তাও কিছুটা আশার সঞ্চার হয় যে, পতাকা হয়তো তারা টাঙিয়েছে কিন্তু তারা যে সংঘর্ষে যাবে না সে ব্যাপারে তারা ঘোষনা দিয়ে রেখেছে।
জানি আমার এই লেখা পড়ে অনেক অন্ধভক্তই হয়তো নাখোশ হবেন কিন্তু আমি তাদেরকে বলবো, আসুন আমরা খেলা দেখি, সবাই মিলে এর মজা নিই, অন্যদের সাথে তর্ক করি কিন্তু তা যেন গঠনমূলক হয় এবং কাউকে আঘাত না করে। নিজের দেশের সম্মান বজায় রাখি, অন্যদেশকেও সম্মান করি। আর সবচেয়ে বড় কথা, বাংলাদেশকে কি করে বিশ্বকাপে দেখা যায় তার স্বপ্ন দেখি এবং তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করি।

Bookmark and Share

একটি শিক্ষাসফর এর গল্প


অনেকেই হয়তো ভাবছেন এই গরমের মাঝে আবার কিসের শিক্ষা সফর? এখন তো গ্রীষ্মকালীন অবকাশ চলার কথা। কিন্তু শেখার আগ্রহ থাকলে আসলে সবসময়ই শেখা যায়। সেরকমই এক শিক্ষা সফর এর গল্প বলবো আজ।

শুরুতেই একটা ভালো খবর দিয়ে নিই। সম্প্রতি আমার তোলা দুইটি ছবি “North South University” কর্তৃক আয়োজিত “International Inter University Photo Exhibition (IIUPE)”-এ প্রদর্শনের জন্য মনোনীত হয়েছে। তো যাই হোক, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রীষ্মকালীন অবকাশ বিধায় আমি আমার টাঙ্গাইলের বাসাতেই ছিলাম। NSU থেকে আমাকে ফোন করে জানানো হলো ১২ জুন এর মাঝে NSU তে গিয়ে নির্বাচিত ছবির রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে। সত্যি কথা বলতে কি, ঢাকা যেতে আমার খুব বেশি ভালো লাগে না, তার একমাত্র কারন ট্রাফিক জ্যাম। বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা, কিন্তু তারপরও বলছি, বাংলাবাজার থেকে মহাখালি যেতে আমার সাধারনত সময় লাগে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা। সেই রাস্তাই একবার ফাঁকা পেয়ে আমি মাত্র ১৭ মিনিটে পৌছেছিলাম! Ripley’s Believe It Or Not-এ স্থান পাবার মতো ঘটনা। 🙂
যাই হোক, বসুন্ধরায় আমার এক চাচার বাসা থাকার সুবাদে তার বাসায় এক রাত থেকে পরদিন NSU তে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন এর কাজ শেষ করে ভাবলাম ঢাকায় যারা বন্ধু-বান্ধব আছে তাদের সাথে দেখা না করে গেলে কেমন হয়। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অত্যন্ত আপন এক বড় ভাই কিছুদিন হলো চাকরী পেয়েছেন (মাহমুদ ফয়সাল ভাই) তার সাথেও দেখা করা দরকার (ঘাড় ভেঙ্গে তো কিছু আদায় করতে হবে :D)। তো সেই উদ্দেশ্যে আমি যখন বিশ্বরোড থেকে শাহ্‌বাগ এর দিকে রওয়ানা দিলাম তখন ঘড়িতে বাঁজছে সকাল ১০:১৫ আর শাহ্‌বাগ গিয়ে পৌছালাম দুপুর ১২:৩৯ এ। বাসে একজন আবার তার মোবাইলে কাকে যেন বলছিল, “আজ রাস্তায় জ্যাম একটু কম আছে!” আহা কি আনন্দদায়ক ব্যাপার! এইটুকু রাস্তা আসতেই কত শিক্ষা পেয়ে গেলাম। পাঠক হয়তো ভাবছেন কি শিক্ষা? সেটা হলো এই দেশে থাকা যাবে না। অনেকেই হয়তো আমার এই কথায় হা হা করে উঠবেন। তোমার মতো শিক্ষিত ছেলেরা যদি বাইরে চলে যায় তাহলে দেশের উন্নতি কারা করবে? তাদের কে আমি বলবো, দেশের সবকিছু এখন ঢাকা কেন্দ্রিক। আর তার ফলাফল হচ্ছে আজকের এই ঢাকা। ছোট বেলায় পড়া পাঁচটি মৌলিক চাহিদার চারটিই (বাসস্থান এর চাহিদা ঢাকার আর পূরন করার ক্ষমতা নেই) এখন ঢাকা ছাড়া অন্য কোথাও আর পূরন করার সেরকম সুযোগ নেই (অথবা ততোটা ভালো সুযোগ নেই)। কিন্তু যে শহরে ৩০ মিনিটের রাস্তা যেতে ৩ ঘন্টা লাগে সেই শহরে থেকে দেশের কী উন্নতি করা সম্ভব?

জ্যামহীন রাস্তা

এরকম জ্যামহীন রাস্তা ঢাকাবাসীর জন্য এখন ধূসর অতীত

আমি নিজে হয়তো এখন বলছি যে, ঢাকায় আমার অসহ্য লাগে। কিন্তু পাশ করে বের হবার পর আমাকে হয়তো সেই ঢাকাতেই যেতে হবে কর্মসংস্থান এর আশায়। শুধু কর্মসংস্থান নয়, আমি যদি উচ্চশিক্ষা গ্রহন করতে বিদেশ যেতে চাই তাহলেও সেই ঢাকাতেই সব কাজ করতে হবে। কিন্তু এরকম কেন হবে? পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায় তারা কখনো দেশের সবকিছু এক শহর কেন্দ্রিক করে ফেলে না। সব সুবিধাই বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। হয়তো এই শহরের শিক্ষার মান ভালো তো আরেক জায়গায় চিকিৎসা। কিন্তু তার মানে এই নয় যে চিকিৎসা নিতে অই শহরটিতে না গেলে চলবেই না। কিছুদিন আগে “প্রথম আলো’”-তে  এই নিয়ে একটি চমৎকার আর্টিকেল (এক-নগরের দেশ হয়ে বাঁচবে বাংলাদেশ?) ছাপা হয়েছিল। পাঠকরা না পড়ে থাকলে পড়ে দেখতে পারেন।

তাই বলছি, এখনই যদি নাগরিক সুযোগ সুবিধা শুধুমাত্র ঢাকা কেন্দ্রিক না করে সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়ার ব্যাবস্থা না করা হয় তাহলে খুব শীঘ্রই সুপ্রিম কোর্ট হয়তো “কেন ঢাকাকে পরিত্যক্ত নগরী হিসেবে ঘোষনা দেয়া হবে না” এই মর্মে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে পনের দিনের মধ্যে কারন দর্শানোর আদেশ পাঠাতে পারেন!

শেষ পর্যন্ত আমি শাহ্‌বাগ থেকে আর কোথাও যাবার সাহস করি নি। সেখানেই এক বন্ধুর সাথে দেখা করে ঢাকা থেকে রীতিমতো পালিয়ে এসেছি আর বাসায় ফিরে হতাশ হয়ে ফেসবুক এ স্ট্যাটাস দিয়েছি,

“যে ঢাকা যেতে বলে, সে আপনার বন্ধু নয়!”

কি আর করবো বলুন?

Bookmark and Share

‘ফেসবুক’ বন্ধ; আরও একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ


সম্প্রতি বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগের অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি বুনটস্থান; ‘ফেসবুক’ বন্ধ করিয়া দেওয়া হইয়াছে। জনমনে ইহা লইয়া যারপরনাই ক্ষোভ পরিলক্ষিত হইতেছে। অধিকাংশই (সকলেই নয়) বলিতেছেন ইহা কিরূপ কর্ম হইল। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়িবার প্রতিশ্রুতি দিয়া ক্ষমতারোহন করিয়া এখন ডিজিটাল যোগাযোগ মাধ্যমকেই রুদ্ধ করিয়া দিতেছে! সরকারের ‘ফেসবুক’ বন্ধের এই সিদ্ধান্তে বাংলাদশের face এ যে কালিমা পড়িল এবং যে সকল ফ্যাসাদ হইল তাহা সরকার কিরূপে মোচন করিবে? ইহা তো আরেকটি মৌলবাদী দেশের (নাম উল্লেখ করিতে চাহিতেছি না) ন্যায় হইয়া গেল। ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু আমার মনে হয় জনগন আরো একটি বার সরকারকে ভুল বুঝিয়াছেন। সরকার সর্বদাই দেখিয়া আসিতেছে কিসে জনগনের মঙ্গল হয়, ডিজিটাল বাংলাদেশ এর স্বপ্ন সহজে বাস্তবায়ন করা যায়। সে লক্ষ্যে যে সরকার এক কালজয়ী সিদ্ধান্ত গ্রহন করিয়াছে তাহা আমি আমার পূর্বের রচনাতে উল্লেখ করিয়াছি। অত্র রচনাতেও ডিজিটাল বাংলাদেশ এর সেই স্বপ্ন নিয়ে আরো কিছুটা আলোচনা করার প্রয়োজনীয়তা দেখিতেছি।

গত ১৫ই জৈষ্ঠ্য (২৯ মে) যখন ‘ফেসবুক’ বন্ধ করিয়া দেওয়া হয় তখন আমি রেলগাড়িতে অবস্থান করিতেছিলাম। স্বাভাবিকভাবেই আমি ‘ফেসবুক’ বন্ধের ব্যাপারে অবগত ছিলাম না। কিন্তু কিছুক্ষন এর মাঝেই আমি আমার ভ্রাম্যমান দূরালাপনীতে বেশ কয়েকটি ক্ষুদে বার্তা পেয়ে গেলাম, বাংলাদেশে ‘ফেসবুক’ বন্ধ করিয়া দেওয়া হইয়াছে এই বিষয়ে। অনেকেই আমার সহিত যোগাযোগ করিয়া জিজ্ঞাসা করিল, এখন কি হইবে? আমি তখন মুচকি হাসি দিয়া বলিয়াছিলাম, ইহা কোন ঘটনা হইল। সরকার চলে ডালে ডালে, আমি চলি পাতায় পাতায়। ‘ফেসবুক’ এ প্রবেশ করা তো কোন ব্যাপারই নয়। কিন্তু বাড়িতে আসিয়া আপন গণনাযন্ত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন ছলচাতুরী করিয়া যখন ‘ফেসবুক’ এ প্রবেশ করিতে সক্ষম হইলাম তখনই আমি বুঝিতে পারিলাম কি ভুল উক্তিটাই না আমি করিয়াছিলাম! আসলে হইবে আমি চলি পাতায় পাতায় আর সরকার চলে শিরায় শিরায়। কেন? কারন ‘ফেসবুক’ এ প্রবেশ করিয়া দেখি আমার বেশ কিছু বন্ধু (যাহারা বাংলাদেশেই অবস্থান করিতেছে) সেখানে উপস্থিত। এর মাঝে সকলেই যে প্রযুক্তি বিষয়ে যথেষ্ঠ দক্ষ তাহা নয়। তাহলে? তখনই বুঝিতে পারিলাম আসলে সরকার কি করিতে চাহিতেছে। যদিও আমার অগ্রজ এক ভ্রাতা এই বিষয়ে সামান্য আভাষ দিয়াছেন ‘ফেসবুক’ এ, কিন্তু আমি এখানে তাহা কিঞ্চিত বিস্তারিত লিখিতেছি।

যখন অন্তর্জালে কোনকিছু আটকাইয়া দেওয়া হয় তখন তাহা ব্যাবহার করিতে চাহিলে bypass (বিকল্প পথ) করিতে হয়। এই বিকল্প পথের ব্যাপারটি কিঞ্চিত জটিল, বিশেষ করিয়া যাহাদের প্রযুক্তি জ্ঞান তুলনামূলক কম তাহাদের জন্য ইহা প্রায় অসাধ্য। এই কর্মে সবচেয়ে প্রচলিত ব্যাবস্থাটি হইতেছে, proxy ব্যাবহার করা। যাহাদের প্রযুক্তি জ্ঞান সীমিত তাহারা তো বটেই, যথেষ্ঠ প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন অনেকেও এই বিষয়ে অবগত নন। কিন্তু একটি কথা, প্রয়োজন কোন আইন মানে না। জনগনও এখানে কোন আইনের তোয়াক্কা না করিয়া শিখিয়া লইয়াছে এই জটিল ব্যাপারগুলো। আর তাহার ফল; সকলেই ‘ফেসবুক’ ব্যাবহার করিতেছে, কিন্তু একটু ভিন্ন পন্থায়। ইহাতে বেশ কয়েকটি লাভ হইল; এক, যাহারা ‘ফেসবুক’ চিনিত না তাহারা চিনিয়া ফেলিল পত্রিকার সংবাদ এর সুবাদে, দুই, যাহারা ‘ফেসবুক’ ব্যাবহার করেন তাহারা নতুন একটি প্রাযুক্তিক বিষয় সম্পর্কে অবগত হইল, তিন, যাহারা proxy ব্যাবহার করিয়া ‘ফেসবুক’ এ প্রবেশ করিয়াছেন; তাহারা অন্য কোন দেশের ‘ফেসবুক’ এর মাধ্যমে প্রবেশ করিয়াছেন যাহাদের অনেকেরই প্রধান ভাষা ইংরেজী নয় (যেমন, জার্মানি, ফ্রান্স, ইউক্রেন)। সেই সুবাদে সেই দেশের ভাষা সম্পর্কেও খানিকটা জানা হইয়া গিয়ছে। আপাতত আমি এক ঢিলে তিন পক্ষী দেখিতেছি, কিন্তু আমার বিশ্বাস সরকার এক ঢিলে শতশত পক্ষী মারিয়াছে, যাহা আপন ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে আসিতেছে না।

এখন পাঠক প্রশ্ন করিতে পারেন, তা সরকার যখন শিখাইতেই ইচ্ছুক তখন এইরূপে কেন? অন্যভাবে কি পারা যাইত না? এইখানে আমার একটি গদ্যের কথা মনে পড়িতেছে। ইহা হয়তো অনেকেই শুনিয়াছেন, তথাপিও বলিতেছি।

দুই ফাঁকিবাজ ভ্রাতাকে পড়াইবার দায়িত্ব লইয়াছেন এক শিক্ষক। তিনি বিভিন্ন প্রকারে চেষ্টা করিয়া যখন কোনভাবেই তাহাদের পাঠদান করিতে সক্ষম হইলেন না তখন তিনি বুদ্ধি করিয়া ভ্রাতাদ্বয়কে ফুলবাগানে বেড়াইতে লইয়া গেলেন। খানিক হাওয়া খাইবার পর তিনি জ্যেষ্ঠ ভ্রাতাকে বলিলেন, ওই বৃক্ষটিতে কইটি ফুল আছে কহিতে পারো? জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা উত্তরে কহিল, তিনটি। তখন শিক্ষক তাহাকে বলিলেন, বৃক্ষটিতে যদি আরো দুইটি ফুল ফুটে তাহা হইলে কয়টি হইবে কহিতে পারো? সাথে সাথে কনিষ্ঠ ভ্রাতা চিৎকার দিয়া উঠিল, দাদা উত্তর দিস্‌ না কিন্তু। মাস্টারমশাই আমাদিগকে গণিত শিখাইবার চেষ্টা করিতেছেন।

আমাদিগের অবস্থাও হইয়াছে ওই ফাঁকিবাজ ভ্রাতাদ্বয়ের ন্যায়। আমরা কোন ক্রমেই আর শিক্ষা গ্রহন করিতে চাহি না। তাই সরকার এই প্রচেষ্টা লইয়াছিল বলিয়া আমার বিশ্বাস। সৌভাগ্যক্রমে জনগন এই ফাঁকিটি ধরিতে না পারিয়া শিক্ষাগ্রহন করিয়া ফেলিয়াছে। আহা! জনগনকে লইয়া এতো চিন্তা করে এমন সরকার পৃথিবীর আর কোন দেশে খুজিয়া পাওয়া যাইবে? ইহা ভাবিয়াই আনন্দে আর গর্বে বুক একশ হাত ফুলিয়া উঠিতেছে। সাধেই কি আর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য বলিয়াছিলেন,

“সাবাস্‌ বাংলাদেশ; পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়

জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার; তবু মাথা নোয়াবার নয়।”


Bookmark and Share

মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পথে এক ধাপ


কিছুদিন মাত্র গত হইয়াছে মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের। সিংহ ভাগ শিক্ষার্থীই তাহাদের জীবনে প্রথমবারের মতো এত বৃহৎ আকৃতির কোন পরীক্ষাতে অবতীর্ন হইয়াছিল। দীর্ঘ দশ বছরের সাধনার ফসল তাহারা অবশেষে পাইয়াছে। অনেকেই হয়ত কাঙ্খিত ফল পাইয়া আনন্দে আত্মহারা, কেহ হয়তো কাঙ্খিত ফল না পাইয়া দুঃখে বাক্যহারা আবার কেহবা অকৃতকার্য হইয়া গৃহ হইতে বহিষ্কৃত হইয়া সর্বহারা। বর্তমানে এই তিনটি দল প্রতীয়মান হইলেও আশা প্রকাশ করিতেছি সেই দিন আর বেশী দূরে নাই যখন শুধুমাত্র দুইটি দলই টিকিয়া থাকিবে। কোন দুইটি? প্রথম এবং শেষ দুইটি! পাঠক বোধকরি এতক্ষনে ভ্রু কুঞ্চিত করিয়া ভাবিতেছেন, এই পাগলটি কি প্রলাপ বকিতেছে! তাহলে পাঠকদিগকে আমার অনুরোধ, একটু ধৈর্য ধারন করিয়া আমার রচনাটি পড়িয়া সমাপ্ত করিলে আশা করিতেছি আপনারাও আমার সহিত একমত হইবেন।

বর্তমান সরকার যখন ক্ষমতার আরোহন করার লক্ষ্যে নির্বাচনে অবতীর্ন হইয়াছিলেন তখন তাহারা নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ করিয়াছিলেন যে, বাংলাদেশকে; ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপে গড়িয়া তুলিবেন। বর্তমান যুগটাই হইতেছে কম্পিউটার তথা গণনাযন্ত্রের যুগ। এই যুগে উক্ত যন্ত্রটি ছাড়া বাঁচিয়া থাকা প্রায় অসম্ভব হইয়া পড়িয়াছে। হাটে-ঘাটে, গ্রামে-গঞ্জে, শহর-বন্দরে সকল স্থানে উক্ত যন্ত্রটির দৌড়াত্ম। যোগাযোগ হইতে শুরু করিয়া বিনোদন সকল ক্ষেত্রে আমরা এই যন্ত্রটির উপর পূর্ণমাত্রায় নির্ভরশীল হইয়া পড়িয়াছি। পরিস্থিতি এমন হইয়া গিয়াছে যে, পূর্বকালের বিভিন্ন সময়কে যেমন বিভিন্ন নামে আখ্যায়িত করা হইতো (যথা প্রাগৈতিহাসিক যুগ, অন্ধকার যুগ, মধ্যযুগ, আধুনিক যুগ) তেমনি করিয়া বর্তমান কালের নাম হইয়া গিয়াছে “ডিজিটাল যুগ”। এই ডিজিটাল যুগের বাসিন্দা হইয়া আমদিগের দেশও ডিজিটাল হইয়া যাইবে এবং পৃথিবীকে সম্মুখপানে আগাইয়া লইয়া যাইতে সহায়তা করিবে ইহাই তো হইবে সাধারন জনগনের কামনা। এতদ কারনে সংসদ নির্বাচনের সময় ইশতেহারের উক্ত আশ্বাস এক বৃহৎ ভূমিকা পালন করিবে তাহা বলাই বাহুল্য। হইয়াছেও তাহাই। জনগন তাহাদের মঙ্গল কিসে হয় তাহা খুবই ভালো বুঝিতে পারে সর্বকালেই।

নতুন সরকার ক্ষমতা হাতে লওয়ার পর সাধারন জনগন ভাবিয়াছিল এইবার হয়তো ঘরে ঘরে এই আধুনিক গণনাযন্ত্রটি পৌছাইয়া যাইবে। আকাশে-বাতাসে ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবাতাস বইবে। কেহ কেহ হয়তো ভাবিয়াছেলেন দেশের নাম পরিবর্তন করিয়া “গণপ্রজাতন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশ” রাখা হইবে। কিন্তু জনগন অত্যন্ত হতাশ হইয়া দেখিতেছিল যে সরকার এইরূপ কোন পদক্ষেপই গ্রহন করিতেছে না। তথাপি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, বিদ্যুত সমস্যা লইয়া জনগন যারপরনাই ত্যাক্ত-বিরক্ত হইয়া উঠিয়াছিল। কিন্তু সরকার তাহাদের পরিকল্পনা যে কতটা সুচিন্তিত ভাবে করিয়াছে তাহা সাধারন জনগন অনুধাবন করিতে পারঙ্গম হয় নাই। তাহার কারনেই এই সকল অসুহিষ্ণতা তৈয়ারি হইয়াছে। কিন্তু সম্প্রতি সরকার মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ করিয়া বুঝাইয়া দিয়াছে যে তাহারা জনগনকে মিথ্যা আশ্বাস দেন নাই। পাঠক হয়তো ভাবিতেছেন, ইহা কিরূপ কথা হইলো। মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলের সহিত ডিজিটাল বাংলাদেশের কি সম্পর্ক হইতে পারে? আছে, সম্পর্ক অবশ্যই আছে।

আপনারা যাহারা ডিজিটাল ব্যবস্থাটির সম্পর্কে কিঞ্চিত অবগত আছেন, তাহারা হয়তো জানিয়া থাকিবেন যে ডিজিটাল ব্যবস্থায় ১ এবং ০ ব্যতিত অন্য কিছু নাই। ব্যপারটা আপনাদের নিকট আজব ঠেকিলেও ইহাই সত্য। ধরা যাক আপনি ইংরিজী ভাষায় লিখিতে চাহিতেছেন ‘A’ তাহা হইলে ডিজিটাল মাধ্যমে তাহা ১০০০০০১ রূপে প্রতিস্থাপিত হইয়া যাইবে এবং গণনাযন্ত্র তাহা সেই রূপেই হিসাব করিবে। ইহাই ডিজিটাল ব্যবস্থার মূল তত্ব এবং ইহার উপরই দাড়াইয়া আছে বর্তমান যুগ। সরকার এই ব্যবস্থাটিকে এখন চাহিতেছেন সকল স্থানে ছড়াইয়া দিতে। সে লক্ষ্যে তাহারা অনেকদূর অগ্রসরও হইয়া গিয়াছেন। মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলই সে কথা বলিয়া দেয়। বর্তমানে দেশে যেভাবে পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয় সেই নিয়মে সর্বোচ্চ ফলাফল হইতেছে জিপিএ ৫। স্বভাবতই সর্বোচ্চ ফলাফল অর্জন করাটা দুষ্কর হইবারই কথা, কিন্তু যখন প্রায় ৯ লক্ষ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৮২,৯৬১ জন তা অর্জন করিয়া ফেলে তখন কিঞ্চিত অবাক হইতেই হয়। ইহা দেখিয়া আমিও অবাক হইয়াছিলাম। কিন্তু ক্ষনকাল এই বিষয় লইয়া ভাবিবার পরেই আমি বুঝিতে পারিলাম সরকার নিশ্চয়ই এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহন করিয়াছে। যেহেতু একজন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় কৃতকার্য হইয়াছে ইহার চেয়ে একজন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ ফলাফল অর্জন করিয়াছে ইহা শুনিতে অধিকতর উত্তম লাগে তাই সরকার নিশ্চয়ই সিদ্ধান্ত লইয়াছে যাহারা কৃতকার্য হইবে তাহাদের সকলকে সর্বোচ্চ ফলাফল প্রদান করা হইবে। অন্য সকলকে অকৃতকার্য করা হইবে। শিক্ষার্থীরা যতদিন না সর্বোচ্চ ফলাফল অর্জনে সক্ষম হইবে ততদিন পর্যন্ত তাহাদের কৃতকার্য হইবার কোন যোগ্যতাই নাই। তাহা হইলে দেখা যাইতেছে যে পরীক্ষার ফলাফলও ১ এবং ০ এই রূপ হইয়া গিয়াছে। আর তাহাই যদি হইয়া থাকে তাহা হইলে সরকারকে অবশ্যই সাধুবাদ জানাইতে হইবে, কেননা শিক্ষিত মানুষ ব্যতিত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া কখনোই সম্ভব হইবে না। এখন যদি সেই শিক্ষিত হইবার প্রথম সোপানটাই ডিজিটাল হইয়া যায়, তাহা হইলে তো শিক্ষার্থীগণ প্রথম হইতেই ডিজিটাল ব্যবস্থা কি তাহা বুঝিয়া যাইবে। আরো কয়েক সোপান আরোহন করিবার পর তাহারাই সম্পূর্নরূপে ডিজিটাল হইয়া যাইবে। যখন মানুষ সকলই ডিজিটাল; তখন বাংলাদেশ ডিজিটাল না হইয়া যাইবে কোথায়।

আমি তাই শিক্ষার্থীগণের নিকট আবেদন করিতেছি যেন তাহারা সরকারকে সহায়তা করে যাহাতে সরকার জিপিএ ৫ এবং অকৃতকার্য এর মধ্যবর্তী যে সকল ফলাফল আছে তাহাকে বাতিল বলিয়া ঘোষনা করিতে পারে। কেননা ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে এখন তাহারাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করিতেছে।

তথ্যঃ এসএসসির ফল: সাফল্যের আনন্দ দেশজুড়ে

Bookmark and Share

ছাত্র রাজনীতি, গুজব এবং একটি বিশ্ববিদ্যালয়


মূল রচনায় যাইবার পূর্বেই আপনাদিগকে আপন বাল্যকালে পঠিত একটি গদ্য বলিয়া লই।

সে অনেক কাল পূর্বের কথা। তৎকালে রাজা-রানীদের যুগ অতিবাহিত হইতেছিল। সেই কালেরই কোন এক রাজার কাহিনী। রাজার ছিল বৃহদাকৃতির রাজত্ব। রাজ্যের সকলেই সেইখানে সুখে-শান্তিতে বসবাস করিতেছিল। তথাপিও দিনকতক ধরিয়া রাজ্যের সকলেরই আনন্দের মাত্রা কিঞ্চিত অধিক বলিয়াই প্রতীয়মান ছিল। তাহার কারন হইতেছে অতীব শীঘ্রই মহামন্য রাজা মশাই এর ঘর আলো করিয়া তাহার প্রথম সন্তান এর জন্ম হইতে যাইতেছে। রাজবদ্যি সঠিক দিনক্ষণ জানাইয়া দিয়াছেন। সকলেই অধীর আগ্রহের সহিত অপেক্ষা করিতেছিল সেই দিনটির জন্য। দেখিতে দেখিতেই সেই শুভদিন আসিয়া উপস্থিত হইল। কিন্তু নতুন নবজাতককে দেখিয়া উপস্থিত সকলেই কমবেশি মনক্ষুন্ন হইলেন। তাহার কারন আর কিছুই নহে, নবজাতকের গাত্রবর্ণ স্বাভাবিকের চাইতে কিঞ্চিত অধিক কৃষ্ণ। উক্ত সন্দেশটি যখন রাজপ্রাসাদ হইতে বাহিরে একান ওকান ঘুরিয়া প্রচার হইল তখন এইরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হইল।

প্রথম কানে গেল, রানীমা এক কৃষ্ণ বর্ণের পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়াছেন। উহা যখন প্রথম কান ঘুরিয়া দ্বিতীয় কানে গেল তখন তাহা হইল, রানীমা এক অতীব কৃষ্ণ বর্ণের সন্তানের জন্ম দিয়াছেন। তৃতীয় কানে গেল, রানীমা কুচকুচে কৃষ্ণ বর্ণের এক সন্তানের জন্ম দিয়াছেন। চতুর্থ কানে তাহা হইল, রানীমা একেবারে কাকের ন্যায় কৃষ্ণ বর্ণের এক সন্তানের জন্ম দিয়াছেন। পঞ্চম কানে, রানীমা এমনতর কৃষ্ণ বর্ণের এক সন্তানের জন্ম দিয়াছেন যে তাহাকে দেখিয়া কাক বলিয়া ভ্রম হয়। ষষ্ঠ কানে, রানীমার গর্ভ হইতে এক কাকের জন্ম হইয়াছে। সপ্তম কানে, রানীমার গর্ভ হইতে একটি কাকের জন্ম হইয়াছে এবং তাহা উড়িয়া গিয়াছে। আর শেষ পর্যন্ত অষ্টম কানে যাইয়া তাহা হইলো, রানীমার গর্ভ হইতে এক ঝাঁক কাক বাহির হইয়া উড়িয়া চলিয়া গিয়াছে।

এইবারে আমার মূল রচনায় আসিতেছি। যাহারা বাংলাদেশে অবস্থান করিতেছেন এবং যাহারা করিতেছেন না তাহারাও বিভিন্ন সন্দেশপত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশের বর্তমান ছাত্র রাজনীতি সম্পর্কে অবগত আছেন। ইহা বাংলাদেশের এক অমূল্য সম্পদ। ইহার চর্চার কারনেই হয়তো আজ আমরা একটি স্বাধীন দেশে বসবাস করার অধিকার অর্জন করিয়াছি। সুতরাং দেশের কল্যাণে ইহার অবদান অস্বীকার করিবার উপায় কোনরূপেই আমাদিগের হস্তে নাই। কোন এককালে এই দেশে বিভিন্ন শাসকরা বিভিন্ন রূপে অনাচার চালাইয়াছেন। সেইকালে এই ছাত্রগণই আমাদের দেশকে মুক্ত করিয়াছে। ইহা যে আমাদের দেশের কত বড় সম্পদ তাহার একটা উদাহরন দেই। আপনি যদি বিখ্যাত অনুসন্ধান যন্ত্র Google এর মাধ্যমে এই বিষয়ে কোন তথ্যের খোঁজ করেন তাহা হইলে যে ফলাফল গুলো আসিবে তাহার অধিকাংশই বাংলাদেশ সম্পর্কিত। কিন্তু বর্তমানে আমরা একটি স্বাধীন দেশে বসবাস করিতেছি, তাহা বলিয়া কি আমাদিগের ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজন ফুরাইয়া গিয়াছে? অবশ্যই তাহা নহে। নিম্নে আমি বর্তমান কালে আমাদিগের দেশে ছাত্র রাজনীতির কি অপার প্রয়োজনীয়তা রহিয়াছে সেই বিষয়ে আলোকপাত করিবার চেষ্টা করিতেছি।

আপনারা সকলেই জানিয়া থাকিবেন যে, বর্তমানে জনসংখ্যাকে বাংলাদেশের প্রথম এবং প্রধান সমস্যারূপে চিহ্নিত করা হইয়াছে। জনসংখ্যা এতটাই বৃদ্ধি পাইয়াছে যে আজকাল শিশু-কিশোরদের ক্রীড়া করিবার মাঠ তো দূরের কথা, মানুষের বসবাস করিবার স্থানই খুজিয়া পাওয়া দুষ্কর হইয়া উঠিয়াছে। সেই দিন হয়তো খুব বেশি দূরে নাই যেদিন উপর হইতে তাকাইলে শুধু মানুষই দেখা যাইবে, মানবের দেয়াল ভেদ করিয়া মৃত্তিকা দেখিবার কোন উপক্রম থাকিবে না। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে যাইয়া সরকারের অবস্থা হইয়াছে একেবারে মধ্য সমুদ্রে পতিত পিপিলিকার ন্যায়। এমতাবস্থায় সরকারকে সহায়তা করিতে ছাত্র সমাজ না আগাইয়া আসিলে আর কাহারা আগাইয়া আসিবে? হইয়াছেও তাহাই। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষা গ্রহনরত ছাত্ররা হইতেছে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানরা। যেকোন বিষয়ই তাহারা অত্যন্ত দ্রুততার সহিত বুঝিতে পারঙ্গম। এইখানেও তাহারা বুঝিতে পারিয়াছে যে, দেশের এই জনসংখ্যা সমস্যার যদি সমাধান না করা যায়, তাহা হইলে এই দেশ আর বসবাসের যোগ্য থাকিবে না। সেই মর্মে তাহারা একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করিয়াছে। তাহা হইলো, বর্তমানে যে জনসংখ্যা আছে তাহা কমাইতে হইবে। এই ক্ষেত্রে কি করা যায়? হ্যা, পাঠক ঠিকই ধরিয়াছেন, যাহারা জীবিত আছে তাহাদের খতম করিয়া দিলেই তো ল্যাঠা চুকিয়া যায়। বিচক্ষন ছাত্র রাজনীতিকরাও তাহাই ভাবিয়াছেন এবং এই মহৎ কর্মেই তাহাদের সময় ব্যয় করিয়া দেশের এক অশেষ উপকার সাধন করিতেছেন। তথাপিও কিছু কিছু ব্যক্তি অর্বাচিন এর ন্যায় বক্তব্য দিতেছেন যে, ছাত্ররা বেপরোয়া হইয়া উঠিয়াছে, তাহাদের এই মূহুর্তে থামানো উচিৎ। কিন্তু ইহা বলিয়া তাহারা যে তাহাদের জ্ঞানের মাঝে এক সুবিশাল ঘাটতি রহিয়াছে ইহাই প্রমান করিতেছেন তাহা বুঝিতে সমর্থ হইতেছেন না। শুধু খতম করিয়াই নয়, এই সকল মহান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আরো একটি চমৎকার পন্থা অবলম্বন করিতেছেন। তাহা হইতেছে বিভিন্ন নারীদের (বিশেষ করিয়া তাহাদেরই সহপাঠিনীদের) বিভিন্ন রূপে অপদস্থ করিতেছেন। ইহাতে অনেক নারীই তাহাদের মূল্যহীন জীবন দীর্ঘায়িত করার কোনরূপ বাসনা আর পোষন করিতেছে না। ইহাতে যেমন দেশের একজন মানুষ কমিয়া উপকার হইলো, তেমনি ভবিষ্যতেও আরো কিছু জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা হইতেও দেশ আশঙ্কামুক্ত হইলো। কতই না সুগঠিত চিন্তা এই সকল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের। আহা, মধু মধু!

শুধু কি এইখানেই শেষ? না না, তাহা হইবে কেন। আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, ‘দৌড়’ স্বাস্থের জন্য একটি অত্যন্ত উপকারী ব্যায়াম। কিন্তু নাগরিক এই ব্যস্ত জীবনে নিয়ম করিয়া দৌড়াইবেন এমন সময় কাহার আছে। সেই কারনেই ছাত্র রাজনীতিকরা সকলের সুস্বাস্থ সুনিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থা করেছেন ‘ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া’ নামক এক চমকপ্রদ ব্যবস্থার। ইহা একটি অতিশয় সুন্দর বন্দোবস্ত। এই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মাঝে পড়িলে আপনাকে চাচা, আপন প্রাণ বাঁচা; এই বাক্যটি মনে করিয়া দৌড়াইতেই হইবে। ইহাতে একদিকে যেমন আপনার ব্যায়ামও হইবে অন্যদিকে তেমন মনও ভালো থাকিবে। কেননা সকলেই অবগত, সুস্থ দেহ; সুন্দর মন।

আমি নিজে যে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অধ্যয়নরত তাহাতে অতীতে ছাত্র রাজনীতি বিদ্যমান ছিল না। ছাত্র-ছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আসিয়া তাহাদের শিক্ষার পাট চুকাইয়া যাইত মাত্র চারটি বছরে। কিন্তু ইহাতে যে এক বিপদের সম্ভাবনা রহিয়াছে তাহা ছাত্র রাজনীতিকগণ ব্যতিত আর কেহ আঁচ করিতে সমর্থ হন নাই। ভাবিতেছেন ইহাতে আবার কিরূপ বিপদ উপস্থিত হইতে পারে? তাহা হইলে বলিতেছি। একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্পন করে যখন তাহার বয়স অষ্টাদশ কিংবা উনবিংশ বৎসরহয়। মাত্র চারটি বছরে শিক্ষা জীবনের সমাপ্তি ঘটিলে দ্বাবিংশ অথবা ত্রয়োবিংশ বৎসর বয়স হইতে না হইতেই সে অর্থ উপার্জনের সক্ষমতা অর্জন করিয়া ফেলে। আর এইখানেই বিপত্তি ঘটিয়া যায়। বর্তমান যুগে দূরালাপনি অত্যন্ত সহজলভ্য হওয়ার দরূন বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকেই দেখা যায় জুটি পাতাইয়া আলাপচারিতায় মাতিয়া উঠিতে। ইহাদের মাঝে অনেকেই হয়তো শুধুমাত্র আনন্দের নিমিত্তে এই কর্মে সময় ব্যয় করিয়া থাকেন, কিন্তু সত্যিকার অর্থেই ভবিষ্যতের কথা ভাবিয়া একে অপরকে মন দিয়া বসিয়াছেন এমন জুটিও কম খুজিয়া পাওয়া যাইবে না। তাহা হইলে কি দাড়াইতেছে, সম্পর্ককে একটি সামাজিকভাবে স্বীকৃত বন্ধন দিতে হইলে বিবাহ করা আবশ্যক। কিন্তু আমাদের যে সমাজ ব্যবস্থা বিদ্যমান, তাহাতে পুরুষ যদি অর্থ উপার্জনে নিয়োজিত না থাকেন তবে বিবাহ করা চলে না। তাই যখন আমাদের এই সকল ছাত্ররা এত অল্প বয়সে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করিয়া কর্মজীবনে পদার্পন করিয়া স্বাবলম্বী হইতেছেন তখন তাহার মনের স্বপ্নের রানীকে সত্বর নিজ গৃহে আনার লক্ষ্যে বিবাহ করিবার কথা ভাবিতেছেন। আপনারা হয়তো ভাবিতেছেন ইহাতে সমস্যা কোথায়। হ্যা, সমস্যা আছে বৈকি। জনসংখ্যা সমস্যা নিরসনে সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। তাহার মধ্যে বাল্যবিবাহ রোধও একটি। পূর্বে বিবাহের যে ন্যূনতম বয়স নির্ধারন করা হইয়াছিল শুনিতেছি বর্তমানে তাহা আরো বাড়াইয়া দেয়া হইবে। কিন্তু সত্যি কথা বলিতে কি, অর্থোপার্জনক্ষম একজন ব্যক্তির যখন বিবাহ করিবার বাসনা হইবে তখন কি এই আইন আর তাহাকে নিরস্থ করিতে পারিবে? সেই ক্ষেত্রে একটাই প্রতিকার, বিশ্ববিদ্যালয় জীবন যথাসম্ভব দীর্ঘায়িত করিতে হইবে। পারিলে শেষই হইতে দেওয়া যাইবে না। এক্ষেত্রে ছাত্র রাজনীতি এক অমূল্য ভূমিকা পালন করিতেছে। ভবিষ্যতের এই সমস্যাটি পূর্বেই অনুধাবন করিয়া তা প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য আমি এই সকল রাজনীতিকদের প্রতি কৃতজ্ঞ।

খালি করিয়া যাইতেছে কুয়েটের ছাত্ররা

কিছুদিন পূর্বেই এই রাজনীতির জের ধরিয়া আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ হইয়া গিয়াছে। কিন্তু ইহা যে দেশের এক অমোঘ উপকার সাধনের নিমিত্তে করা হইয়াছে তাহা অনেকেই বুঝিতে সমর্থ হয় নাই, আর তাই তাহারা বিভিন্নরূপে কোলাহল তৈয়ারি করিয়াছে কবে বিশ্ববিদ্যালয় খুলিবে এই বলিয়া। সেই সকল অজ্ঞানীরা বিভিন্নরূপে গুজব ছড়াইয়াছেন যে, বিশ্ববিদ্যালয় খুলিয়া যাইতেছে। তাহাদের গুজব কতটা বৃহৎ রূপ ধারন করিয়াছিল তাহা নিশ্চয় পাঠক রচনার শুরুতেই আমি যে গদ্যটি লিখিয়াছিলাম তাহা থেকে ধারনা করিতে পারিতেছেন। এইসব গুজব প্রচারকারীগণ ধারনা করিয়াছিলেন গুজবে কান লাগাইয়া সকল শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত হইবে আর তখন বিশ্ববিদ্যালয় আপনাতেই খুলিয়া যাইবে। কিন্তু দেশের এই ক্ষতিটি তাহারা কেন করিতে চাহিতেছেন? ইহাতে নিশ্চয়ই তাহাদের কোন গুপ্ত উপকার সাধিত হইবে। না হইলে নিজের দেশের এত বড় ক্ষতিসাধন তাহারা কেন করিতে চাহিবেন? কিন্তু তাহাদেরকে বলিতেছি, গুজব ছড়াইয়া কোন লাভ হইবে না। কারন ইহা আমাদিগের মঙ্গলের নিমিত্তেই করা হইয়াছে। আর আপন ভালো যদি কেহ না বুঝিতে পারে তখন তাহাকে কি বলিব। কেননা বলা হইয়া থাকে, আপন ভালো পাগলেও বোঝে।

পুনশ্চ: সম্প্রতি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় খুলিয়া দেয়ার ঘোষনা দেওয়া হইয়াছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছাত্র রাজনীতিকগণ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করিয়া আবারো দেশের উপকার সাধনে নিমিত্ত হইবেন।

Bookmark and Share