অনেকেই হয়তো ভাবছেন এই গরমের মাঝে আবার কিসের শিক্ষা সফর? এখন তো গ্রীষ্মকালীন অবকাশ চলার কথা। কিন্তু শেখার আগ্রহ থাকলে আসলে সবসময়ই শেখা যায়। সেরকমই এক শিক্ষা সফর এর গল্প বলবো আজ।
শুরুতেই একটা ভালো খবর দিয়ে নিই। সম্প্রতি আমার তোলা দুইটি ছবি “North South University” কর্তৃক আয়োজিত “International Inter University Photo Exhibition (IIUPE)”-এ প্রদর্শনের জন্য মনোনীত হয়েছে। তো যাই হোক, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রীষ্মকালীন অবকাশ বিধায় আমি আমার টাঙ্গাইলের বাসাতেই ছিলাম। NSU থেকে আমাকে ফোন করে জানানো হলো ১২ জুন এর মাঝে NSU তে গিয়ে নির্বাচিত ছবির রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে। সত্যি কথা বলতে কি, ঢাকা যেতে আমার খুব বেশি ভালো লাগে না, তার একমাত্র কারন ট্রাফিক জ্যাম। বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা, কিন্তু তারপরও বলছি, বাংলাবাজার থেকে মহাখালি যেতে আমার সাধারনত সময় লাগে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা। সেই রাস্তাই একবার ফাঁকা পেয়ে আমি মাত্র ১৭ মিনিটে পৌছেছিলাম! Ripley’s Believe It Or Not-এ স্থান পাবার মতো ঘটনা। 🙂
যাই হোক, বসুন্ধরায় আমার এক চাচার বাসা থাকার সুবাদে তার বাসায় এক রাত থেকে পরদিন NSU তে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন এর কাজ শেষ করে ভাবলাম ঢাকায় যারা বন্ধু-বান্ধব আছে তাদের সাথে দেখা না করে গেলে কেমন হয়। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অত্যন্ত আপন এক বড় ভাই কিছুদিন হলো চাকরী পেয়েছেন (মাহমুদ ফয়সাল ভাই) তার সাথেও দেখা করা দরকার (ঘাড় ভেঙ্গে তো কিছু আদায় করতে হবে :D)। তো সেই উদ্দেশ্যে আমি যখন বিশ্বরোড থেকে শাহ্বাগ এর দিকে রওয়ানা দিলাম তখন ঘড়িতে বাঁজছে সকাল ১০:১৫ আর শাহ্বাগ গিয়ে পৌছালাম দুপুর ১২:৩৯ এ। বাসে একজন আবার তার মোবাইলে কাকে যেন বলছিল, “আজ রাস্তায় জ্যাম একটু কম আছে!” আহা কি আনন্দদায়ক ব্যাপার! এইটুকু রাস্তা আসতেই কত শিক্ষা পেয়ে গেলাম। পাঠক হয়তো ভাবছেন কি শিক্ষা? সেটা হলো এই দেশে থাকা যাবে না। অনেকেই হয়তো আমার এই কথায় হা হা করে উঠবেন। তোমার মতো শিক্ষিত ছেলেরা যদি বাইরে চলে যায় তাহলে দেশের উন্নতি কারা করবে? তাদের কে আমি বলবো, দেশের সবকিছু এখন ঢাকা কেন্দ্রিক। আর তার ফলাফল হচ্ছে আজকের এই ঢাকা। ছোট বেলায় পড়া পাঁচটি মৌলিক চাহিদার চারটিই (বাসস্থান এর চাহিদা ঢাকার আর পূরন করার ক্ষমতা নেই) এখন ঢাকা ছাড়া অন্য কোথাও আর পূরন করার সেরকম সুযোগ নেই (অথবা ততোটা ভালো সুযোগ নেই)। কিন্তু যে শহরে ৩০ মিনিটের রাস্তা যেতে ৩ ঘন্টা লাগে সেই শহরে থেকে দেশের কী উন্নতি করা সম্ভব?
আমি নিজে হয়তো এখন বলছি যে, ঢাকায় আমার অসহ্য লাগে। কিন্তু পাশ করে বের হবার পর আমাকে হয়তো সেই ঢাকাতেই যেতে হবে কর্মসংস্থান এর আশায়। শুধু কর্মসংস্থান নয়, আমি যদি উচ্চশিক্ষা গ্রহন করতে বিদেশ যেতে চাই তাহলেও সেই ঢাকাতেই সব কাজ করতে হবে। কিন্তু এরকম কেন হবে? পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায় তারা কখনো দেশের সবকিছু এক শহর কেন্দ্রিক করে ফেলে না। সব সুবিধাই বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। হয়তো এই শহরের শিক্ষার মান ভালো তো আরেক জায়গায় চিকিৎসা। কিন্তু তার মানে এই নয় যে চিকিৎসা নিতে অই শহরটিতে না গেলে চলবেই না। কিছুদিন আগে “প্রথম আলো’”-তে এই নিয়ে একটি চমৎকার আর্টিকেল (এক-নগরের দেশ হয়ে বাঁচবে বাংলাদেশ?) ছাপা হয়েছিল। পাঠকরা না পড়ে থাকলে পড়ে দেখতে পারেন।
তাই বলছি, এখনই যদি নাগরিক সুযোগ সুবিধা শুধুমাত্র ঢাকা কেন্দ্রিক না করে সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়ার ব্যাবস্থা না করা হয় তাহলে খুব শীঘ্রই সুপ্রিম কোর্ট হয়তো “কেন ঢাকাকে পরিত্যক্ত নগরী হিসেবে ঘোষনা দেয়া হবে না” এই মর্মে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে পনের দিনের মধ্যে কারন দর্শানোর আদেশ পাঠাতে পারেন!
শেষ পর্যন্ত আমি শাহ্বাগ থেকে আর কোথাও যাবার সাহস করি নি। সেখানেই এক বন্ধুর সাথে দেখা করে ঢাকা থেকে রীতিমতো পালিয়ে এসেছি আর বাসায় ফিরে হতাশ হয়ে ফেসবুক এ স্ট্যাটাস দিয়েছি,
“যে ঢাকা যেতে বলে, সে আপনার বন্ধু নয়!”
কি আর করবো বলুন?
12 responses to “একটি শিক্ষাসফর এর গল্প”
Rony Parvej
জুন 8th, 2010 ; 22:27 এ
হা… হা…
কথা ঠিক। আমারও ঢাকা ভাল্লাগেনা। আমি ঢাকাতে থাকতেও চাইনা।
আমাকে যদি ইচ্ছামতো থাকার জায়গা পছন্দ করার সুযোগ দেওয়া হতো তাহলে আমি রাজশাহীকে বেছে নিতাম।
ইরতেজা
জুন 8th, 2010 ; 22:33 এ
আমার বিশ্বাস বেশির ভাগ ঢাকাবাসীরই এখন ঢাকা ভালো লাগে না। 😐
তা হঠাৎ রাজশাহী কেন?
মাহমুদ ফয়সাল
জুন 8th, 2010 ; 22:27 এ
আচ্ছা!! এই ঘটনা!!
তাইতো বলি! দেখা করিস নাই কেন? তাইলে বুঝ, কী পরিমাণ কষ্ট করে অফিস করি। ঢাকায় থাকার কোন আনন্দবোধ আমার হয়না। কিন্তু জীবনধারণের যাবতীয় উপকরণ সাজিয়ে রেখে অন্য শহরগুলো সেই তুলনায় মরুভূমি করে রাখার দায়ভার কে নিবে??
ভাল্লাগেনা এই শহর!! 😦 😦
প্রতিদিন আমার তিন থেকে সাড়ে তিন ঘন্টা পথেই কাটে!!
আর হ্যাঁ। উপরে নামটা দেখতে পেলাম দেখে খুশি হইলাম 😀 😀
ইরতেজা
জুন 8th, 2010 ; 22:30 এ
আর বইলেন না ভাই। ঢাকা যাইয়া আমার ছাইড়া দে মা, মইরা বাঁচি অবস্থা। অসম্ভব ওই শহরে বাস করা। 😦
Sami
জুন 8th, 2010 ; 23:11 এ
Sourov, a really nice post! Thanks for sharing your opinion 🙂
ইরতেজা
জুন 8th, 2010 ; 23:18 এ
thanku thanku, miya bhai. 🙂
নিবিড়
জুন 9th, 2010 ; 00:14 এ
ঢাকায় যখন প্রথম প্রথম থাকা শুরু করলাম তখন দারুণ বিরক্তি লাগত। এখন কেমন যেন সয়ে গেছে, দশ মিনিটের রাস্তা যাওয়ার জন্য আধা ঘন্টা আগে বের হই। রাতে বাসায় ফিরে শহরটা কে গালিগালাজ করি কিন্তু পরের দিন আবার শহরের ভিতর দিয়ে আবার দৌড় শুরু করি কারণ সম্ভবত নাগরিক হয়ে গেছি 😦
ইরতেজা
জুন 9th, 2010 ; 00:43 এ
এইটাও একটা কথা ভাই। মানুষ পারে না এমন কোন কাজ নাই। 😐
তাপস
জুন 9th, 2010 ; 22:39 এ
এতো ভয়াবহ ব্যাপার। এক্ষুনি জোড়ালো প্রতিবাদ হয়া দরকার। এই বিষয়টা তুলে ধরে খুব ভাল কাজ করেছ।
ইরতেজা
জুন 9th, 2010 ; 23:46 এ
ব্যাপার তো ভাই ভয়াবহ অনেক আগে থেকেই। আমি শুধু একটা ফলোআপ দিলাম।
তানভির
মে 15th, 2011 ; 00:55 এ
বন্ধু, শ্যামলীর ঘটনাটা শেয়ার করলিনা, উই যে আমি-তুই 15 Dec…!!!
ইরতেজা
মে 15th, 2011 ; 01:57 এ
বন্ধু, ওই কথা আর মনে করায়া দিও না। মেজাজ খিচড়ায়া যায়। :@