Posts tagged ‘irteza’

দুইজন মানুষ(!) এবং দলছুট হওয়ার গল্প


মূল রচনায় যাইবার পূর্বেই আপনাদিগকে একটি গল্প বলিয়া নেই। সে অনেক কাল পূর্বের কথা। তৎকালে বর্তমানের ন্যায় আগ্নেয়াস্ত্র, আধুনিক যানবাহন কিছুই আবিষ্কৃত হয় নাই। পদযুগলই একমাত্র ভরসা ছিল এক স্থান হইতে অন্যত্র গমন করিবার। ঈদৃশ কালে একদল ব্যক্তি যাইতেছিলেন এক শ্বাপদস্বঙ্কুল জঙ্গলের মধ্য দিয়া। উক্ত জঙ্গল বাঘ-ভাল্লুকের জন্য অতি কুখ্যাত ছিল। প্রায়শই সেখানে উহাদের দেখা মিলিত। তো ভ্রমনকারী দলে দুইজন ব্যক্তির নিকট যথেষ্ট মূল্যবান কিছু স্বর্ণালঙ্কার ছিল। তাহারা দেখিলেন যে গতিতে তাহারা অগ্রসর হইতেছেন তাহাতে গন্তব্যে পৌছাইবার পূর্বেই সন্ধ্যা ঘনাইয়া আসিবার সম্ভাবনা প্রবল। ইহাতে তস্করের হাতে পড়িয়া না আবার স্বর্ণালঙ্কার হারাইতে হয়? এরূপ পরিস্থিতি বিবেচনা করিয়া তাহারা দুইজন দ্রুত অগ্রসর হইবার বন্দোবস্ত করিলেন। কিয়ৎক্ষন গত হইতে না হইতেই তাহারা দুইজন যথেষ্ট আগাইয়া গেলেন এবং সমগ্র দলকে পিছনে রাখিয়া গন্তব্যের খুব কাছাকাছি চলিয়া গেলেন ক্ষুদ্র সময়ের ব্যাবধানে। তাহারা যারপরনাই আনন্দিত হইয়া নিজেদের মধ্যে আলোচনা করিতে লাগিলেন, পশ্চাতে যাহারা পড়িয়া আছেন তাহারা নির্ঘাত আজ ব্যাঘ্রের কবলে পড়িয়া প্রাণ হারাইবেক। ইহা বলিতে না বলিতেই তাহারা দেখিলেন তাহাদের সামনে এক বৃহদাকৃতির ব্যাঘ্র আসিয়া উপস্থিত। উহাকে দেখিয়াই আন্দাজ করা যাইতেছিল যে, ক্ষুধার্ত হইয়া সে শিকারের অণ্বেষনে বাহির হইয়াছে। সামনে এরূপ ব্যাঘ্র দেখিয়া অগ্রগামী ব্যক্তিদ্বয় যারপরনাই ভীত হইয়া উঠিলেন এবং তাহারা কোনরূপ কর্ম নির্ধারনের পূর্বেই ব্যাঘ্র তাহাদের বধ করিয়া ক্ষুধার জ্বালা মিটাইয়া উক্ত স্থান পরিত্যাগ করিল। পড়িয়া রহিল ব্যক্তিদ্বয়ের পরিধেয় পোশাক এবং তাহাদের আহরিত স্বর্ণালঙ্কারসমূহ। অন্যদিকে পশ্চাতে পড়িয়া থাকা দল এক স্থানে তাঁবু খাটাইয়া রাত্রি যাপন করিয়া উষালগ্নে আবার যাত্রা শুরু করিল। পথিমধ্যে তাহারা উক্ত ব্যক্তিদ্বয়ের কাপড় এবং স্বর্ণালঙ্কার পাইয়া গেল। তাহারা তখন স্বর্ণালঙ্কারসমূহ নিজেদের মধ্যে বাটোয়ারা করিয়া পুনরায় গন্তব্যের দিকে যাত্রা করিলেন। আর ইহা হইতেই “আগে গেলে বাঘে খায়, পিছে গেলে সোনা পায়” বাগধারাটির উৎপত্তি হইলো।

যাহা হোক, উপরের গল্পটি সম্পূর্নরূপেই বানোয়াট। আমি ইহা আপন মনের মাধুরী মিশাইয়া ফাদিয়া বসিয়াছি। কিন্তু ইহার অন্তরালের ঘটনা এরূপই কিছু হইবে বলিয়া আমার বিশ্বাস। এখন পাঠক হয়তো ভাবিতেছেন হঠাৎ করিয়া আমি আপনাদিগকে বাগধারার শানে নযুল কেন ব্যাখ্যা করিতেছি, বলিতেছি তাহা এখনই। আজিকে এক ঘটনার কারনে আমরা হঠাৎ করিয়া এক বৃহদাকৃতির দল হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া পড়িয়াছি। আমরা গুটিকতক অর্বাচিন ভাবিতেছিলাম ইহাতে আমাদিগের অবস্থাও তো ওই বাঘে খাওয়া দুই ব্যক্তির ন্যায় হইয়া যাইবে। ভবিষ্যতে যখন ব্যাঘ্র আসিয়া আমাদিগের উপর হামলা চালাইবে তখন তো পিছনে পড়িয়া থাকা দল কিছুই করিবে না অথবা করিতে পারিবে না। কিন্তু না! আমাদিগের মধ্যে থাকা কতিপয় মহাজ্ঞানী-মহাজন আপনার ঈদৃশ ভ্রান্তি দূর করিতে সক্ষম হইয়াছেন। তাহারা বলিবার পড় আমি ভাবিয়া দেখিলাম, বাস্তবিকই আমি তো এরূপ চিন্তা করিয়া দেখি নাই। প্রথমত ব্যাঘ্র হইতেছে বিড়াল গোত্রীয় প্রাণী। আর কে না জানে বিড়াল অত্যন্ত আরামপ্রিয়। সুতরাং ব্যাঘ্রও তাহার ব্যতিক্রম নহে। উহা ভক্ষন করিবার উদ্দেশ্যে আসিলে উহাকে খানিক আদর করিয়া দিলে, বুকে-পিঠে হাত বুলাইয়া দিলে তাহা খুব সহজেই মানিয়া যাইবে (অথবা মানিয়া যাইবার কথা)! সঠিকরূপে তোয়াজ করিলে কে না মানে? অন্যত্র ইহা হইতেছে তৈলমর্দনের যুগ। সুতরাং ইহা ভাবিবার কোন কারনই নাই যে ব্যাঘ্রও ইহার ব্যতিক্রম হইবে। সুতরাং ব্যাঘ্রকে সঠিকরূপে তৈলমর্দন করিতে পারিলেই কেল্লাফতে। ব্যাঘ্র তো আমাদিগকে ভক্ষন করিবেই না বরং ইহাকে ব্যাবহার করিয়া আরো কর্ম সম্পাদন করিয়া লওয়া যাইবে। ঈদৃশ কর্ম সম্পাদনকালে ব্যাঘ্র হয়তো কিঞ্চিত কোপ প্রদর্শন করিয়া দুই একজনকে আচড় দিয়া বসিতে পারে, উহা কোন ব্যাপার না। ভক্ষন যে করিতেছে না ইহাই তো বেশি। এরূপ আরো বিভিন্ন সম্ভাবনা আমাদের নিকট আসিয়া উপস্থিত হইবে যদি আমরা দলছুট হইয়া আগাইয়া যাই। তখন পিছনে পড়িয়া থাকা দলই বরং আমাদিগের দিকে তাকাইয়া বলিবে,

“আগে গেলে সব পায়, পিছে গেলে ধরা খায়!”

বিশ্বকাপের মাতাল হাওয়া


দীর্ঘ চার বছরের অপেক্ষার পর এসে গেছে ফুটবল বিশ্বকাপ। যথারীতি বিভিন্ন দলের সমর্থকরা তাদের বাড়ির ছাদে লাগিয়েছেন প্রিয় দলের পতাকা। এক্ষেত্রে অবশ্য ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার সমর্থকরাই এগিয়ে। তবে অন্যরাও কম যান না। কিন্তু আমি যতবারই এই পতাকাগুলো দেখি তখন কেমন জানি হতাশ লাগে। কেন আমাদের নিজের দেশের পতাকা না উড়িয়ে অন্য দেশের পতাকা উড়াতে হয়। আমরা কি নিজের দেশের পতাকা আজ বিশ্বকাপ উপলক্ষে গর্বের সাথে উড়াতে পারতাম না? অবশ্যই পারতাম!
আপনারা নিশ্চয়ই এতক্ষনে হাসতে শুরু করেছেন। ভাবছেন আবারো আমি পাগলের প্রলাপ বকছি। কিন্তু সত্যি বলছি, আসলেও এমনটা হতেও পারতো! বিশ্বাস না হলে বাংলাদেশের র‌্যাঙ্কিংটা দেখুন (Bangladesh: FIFA/Coca-Cola World Ranking)। এখানে দেয়া আছে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ অবস্থান ছিল ১১০ (১৯৯৬ সালে)। এবারের বিশ্বকাপে এবং প্রতি বিশ্বকাপেই এমন অনেক দল থাকে যাদের অবস্থান এর কাছাকাছি এবং ১৯৯৬ সালের দিকে তারচেয়েও খারাপ ছিল। তাহলে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কেন এমন হলো? কেন আমাদের ফুটবলের অবস্থা দিনে দিনে উন্নতির বদলে অবনতি হচ্ছে? এর একটা কারন হিসেবে বলা যায় ক্রিকেট এর ব্যাপক আগ্রাসন। ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশ অংশগ্রহন করার যোগ্যতা অর্জন করার পর থেকে ফুটবল-এ সেই যে ভাটা পরেছে তা আর কাটেওনি, কাটবেও না মনে হয়! আমার এখনো মনে আছে ছোটবেলায় যখন জাতীয় লীগ এর খেলাগুলো হতো তখন মোহামেডান, আবাহনীর সমর্থকদের সেকি উত্তেজনা। অথচ এখন কেউ তার খবরও রাখে না। দুঃখ দুঃখ!!!
যেহেতু আমাদের দেশ বিশ্বকাপ খেলছে না সেহেতু আমরা বিশ্বকাপে অন্য দেশকে সমর্থন দিতেই পারি। কিন্তু তাই বলে তাদের পতাকা কেন উড়াতে হবে, এটা আমার মাথায় ঢুকে না। এতে একদিকে যেমন আমাদের দেশের আইন ভঙ্গ করা হয় অন্যদিকে অন্য আরেকটি দেশের পতাকাকেও অবমাননা করা হয় (কেননা কোন দেশের পতাকাই সঠিক নিয়ম অনুযায়ী বানানো হয় না এবং সব দেশেরই পতাকার ব্যাপারে বেশ কিছু আইন আছে)। সেই সাথে যে পরিমান কাপড় অপচয় করা হয় তার কথা কি আর বলবো! একটা ছোট্ট হিসাব দিই। ধরুন সারা বাংলাদেশে ১ লক্ষ পতাকা উড়ানো হয়েছে, গড়ে প্রত্যেক পতাকার দৈর্ঘ্য ২ গজ, তার মানে প্রায় ২ লক্ষ গজ কাপড়ের কি নির্লজ্জ অপচয়। আমাদের মতো একটা গরিব দেশে এই কথা ভাবতেও কষ্ট হয়।
ঢাকা নিউমার্কেট এ উড়ছে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সমর্থকদের পতাকা
কিছুদিন আগে জার্মান প্রবাসী আমার এক বোন তার ফেসবুক-এ স্ট্যাটাস দিয়েছে, “কি খেল! আমার ব্রাজিলিয়ান বান্ধবী তার প্রোফাইল এ ব্রাজিল এর ছবি দেয় নি অথচ বাংলাদেশী বান্ধবী ব্রাজিল এর ছবি লাগিয়েছে।” মনে তখন প্রশ্ন এলো, জাতি হিসেবে আমরা কি কখনোই আত্মসম্মানবোধ অর্জন করতে পারব না?
আমি বিশ্বকাপের সবগুলো খেলা না দেখলেও ভালো দলগুলোর খেলা দেখার চেষ্টা করি। একক ভাবে কোন দলের প্রতি আমার তেমন দূর্বলতা নেই, কোন খেলোয়ার এর খেলা ভালো লাগলে তার খেলাটা দেখার চেষ্টা করি। কিন্তু যখন বিভিন্ন দলের সমর্থকদের (আসলে অন্ধভক্ত) দেখি তখন তাদের জন্য কেমন যেন করুনা হয়। অনেকেই আছে (সবাই নয়) যারা মনে করে তাদের সমর্থিত দল বাদে অন্য দল যেমন খেলতেই জানে না তেমনি তাদের সমর্থকরাও ফুটবল খেলার কিছুই বোঝে না। এক দলের সমর্থকরা অন্য দলের সমর্থকদের সাথে কথার যুদ্ধ থেকে এক পর্যায়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে এমন ঘটনা তো আমদের ইতিহাসে আছেই। যে জাতি অন্যদেশের খেলা নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হতে পারে তারা রাজনৈতিক সংঘর্ষে লিপ্ত হবে এটাতো খুবই স্বাভাবিক। স্কুল এর কোন এক ক্লাসের বাংলা বইয়ে একটা প্রবন্ধ ছিল (নামটা এখন মনে পরছে না), সেখানে লেখক বলেছেন, “একটি উচ্চ জাতির সংস্পর্ষে আসিয়াও আমরা তাহাদের গুনগুলো রপ্ত না করিয়া দোষগুলো আত্মসাৎ করিয়াছি।” এই কথাটা যে কতোটা সত্য তা বিশ্বকাপ এলেই আরো ভালোভাবে অনুধাবন করা যায়। কেননা সারা পৃথিবীতে ইংরেজদের খেলা নিয়ে সহিংসতা এবং হুলিগান বিখ্যাত আর আমরা কিনা তাই অনুসরন করছি। এ লজ্জা কোথায় রাখি। তবে এর মাঝেও একটা ভালো খবর দিই, টাঙ্গাইলের কোন এক জায়গায় আমার এক বন্ধু দেখেছে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার পতাকা সেলাই করে লাগানো আর তাতে লেখা, “ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা সমর্থক মৈত্রী সঙ্ঘ”। এটা দেখে মনে তাও কিছুটা আশার সঞ্চার হয় যে, পতাকা হয়তো তারা টাঙিয়েছে কিন্তু তারা যে সংঘর্ষে যাবে না সে ব্যাপারে তারা ঘোষনা দিয়ে রেখেছে।
জানি আমার এই লেখা পড়ে অনেক অন্ধভক্তই হয়তো নাখোশ হবেন কিন্তু আমি তাদেরকে বলবো, আসুন আমরা খেলা দেখি, সবাই মিলে এর মজা নিই, অন্যদের সাথে তর্ক করি কিন্তু তা যেন গঠনমূলক হয় এবং কাউকে আঘাত না করে। নিজের দেশের সম্মান বজায় রাখি, অন্যদেশকেও সম্মান করি। আর সবচেয়ে বড় কথা, বাংলাদেশকে কি করে বিশ্বকাপে দেখা যায় তার স্বপ্ন দেখি এবং তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করি।

Bookmark and Share

একটি শিক্ষাসফর এর গল্প


অনেকেই হয়তো ভাবছেন এই গরমের মাঝে আবার কিসের শিক্ষা সফর? এখন তো গ্রীষ্মকালীন অবকাশ চলার কথা। কিন্তু শেখার আগ্রহ থাকলে আসলে সবসময়ই শেখা যায়। সেরকমই এক শিক্ষা সফর এর গল্প বলবো আজ।

শুরুতেই একটা ভালো খবর দিয়ে নিই। সম্প্রতি আমার তোলা দুইটি ছবি “North South University” কর্তৃক আয়োজিত “International Inter University Photo Exhibition (IIUPE)”-এ প্রদর্শনের জন্য মনোনীত হয়েছে। তো যাই হোক, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রীষ্মকালীন অবকাশ বিধায় আমি আমার টাঙ্গাইলের বাসাতেই ছিলাম। NSU থেকে আমাকে ফোন করে জানানো হলো ১২ জুন এর মাঝে NSU তে গিয়ে নির্বাচিত ছবির রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে। সত্যি কথা বলতে কি, ঢাকা যেতে আমার খুব বেশি ভালো লাগে না, তার একমাত্র কারন ট্রাফিক জ্যাম। বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা, কিন্তু তারপরও বলছি, বাংলাবাজার থেকে মহাখালি যেতে আমার সাধারনত সময় লাগে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা। সেই রাস্তাই একবার ফাঁকা পেয়ে আমি মাত্র ১৭ মিনিটে পৌছেছিলাম! Ripley’s Believe It Or Not-এ স্থান পাবার মতো ঘটনা। 🙂
যাই হোক, বসুন্ধরায় আমার এক চাচার বাসা থাকার সুবাদে তার বাসায় এক রাত থেকে পরদিন NSU তে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন এর কাজ শেষ করে ভাবলাম ঢাকায় যারা বন্ধু-বান্ধব আছে তাদের সাথে দেখা না করে গেলে কেমন হয়। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অত্যন্ত আপন এক বড় ভাই কিছুদিন হলো চাকরী পেয়েছেন (মাহমুদ ফয়সাল ভাই) তার সাথেও দেখা করা দরকার (ঘাড় ভেঙ্গে তো কিছু আদায় করতে হবে :D)। তো সেই উদ্দেশ্যে আমি যখন বিশ্বরোড থেকে শাহ্‌বাগ এর দিকে রওয়ানা দিলাম তখন ঘড়িতে বাঁজছে সকাল ১০:১৫ আর শাহ্‌বাগ গিয়ে পৌছালাম দুপুর ১২:৩৯ এ। বাসে একজন আবার তার মোবাইলে কাকে যেন বলছিল, “আজ রাস্তায় জ্যাম একটু কম আছে!” আহা কি আনন্দদায়ক ব্যাপার! এইটুকু রাস্তা আসতেই কত শিক্ষা পেয়ে গেলাম। পাঠক হয়তো ভাবছেন কি শিক্ষা? সেটা হলো এই দেশে থাকা যাবে না। অনেকেই হয়তো আমার এই কথায় হা হা করে উঠবেন। তোমার মতো শিক্ষিত ছেলেরা যদি বাইরে চলে যায় তাহলে দেশের উন্নতি কারা করবে? তাদের কে আমি বলবো, দেশের সবকিছু এখন ঢাকা কেন্দ্রিক। আর তার ফলাফল হচ্ছে আজকের এই ঢাকা। ছোট বেলায় পড়া পাঁচটি মৌলিক চাহিদার চারটিই (বাসস্থান এর চাহিদা ঢাকার আর পূরন করার ক্ষমতা নেই) এখন ঢাকা ছাড়া অন্য কোথাও আর পূরন করার সেরকম সুযোগ নেই (অথবা ততোটা ভালো সুযোগ নেই)। কিন্তু যে শহরে ৩০ মিনিটের রাস্তা যেতে ৩ ঘন্টা লাগে সেই শহরে থেকে দেশের কী উন্নতি করা সম্ভব?

জ্যামহীন রাস্তা

এরকম জ্যামহীন রাস্তা ঢাকাবাসীর জন্য এখন ধূসর অতীত

আমি নিজে হয়তো এখন বলছি যে, ঢাকায় আমার অসহ্য লাগে। কিন্তু পাশ করে বের হবার পর আমাকে হয়তো সেই ঢাকাতেই যেতে হবে কর্মসংস্থান এর আশায়। শুধু কর্মসংস্থান নয়, আমি যদি উচ্চশিক্ষা গ্রহন করতে বিদেশ যেতে চাই তাহলেও সেই ঢাকাতেই সব কাজ করতে হবে। কিন্তু এরকম কেন হবে? পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায় তারা কখনো দেশের সবকিছু এক শহর কেন্দ্রিক করে ফেলে না। সব সুবিধাই বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। হয়তো এই শহরের শিক্ষার মান ভালো তো আরেক জায়গায় চিকিৎসা। কিন্তু তার মানে এই নয় যে চিকিৎসা নিতে অই শহরটিতে না গেলে চলবেই না। কিছুদিন আগে “প্রথম আলো’”-তে  এই নিয়ে একটি চমৎকার আর্টিকেল (এক-নগরের দেশ হয়ে বাঁচবে বাংলাদেশ?) ছাপা হয়েছিল। পাঠকরা না পড়ে থাকলে পড়ে দেখতে পারেন।

তাই বলছি, এখনই যদি নাগরিক সুযোগ সুবিধা শুধুমাত্র ঢাকা কেন্দ্রিক না করে সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়ার ব্যাবস্থা না করা হয় তাহলে খুব শীঘ্রই সুপ্রিম কোর্ট হয়তো “কেন ঢাকাকে পরিত্যক্ত নগরী হিসেবে ঘোষনা দেয়া হবে না” এই মর্মে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে পনের দিনের মধ্যে কারন দর্শানোর আদেশ পাঠাতে পারেন!

শেষ পর্যন্ত আমি শাহ্‌বাগ থেকে আর কোথাও যাবার সাহস করি নি। সেখানেই এক বন্ধুর সাথে দেখা করে ঢাকা থেকে রীতিমতো পালিয়ে এসেছি আর বাসায় ফিরে হতাশ হয়ে ফেসবুক এ স্ট্যাটাস দিয়েছি,

“যে ঢাকা যেতে বলে, সে আপনার বন্ধু নয়!”

কি আর করবো বলুন?

Bookmark and Share

‘ফেসবুক’ বন্ধ; আরও একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ


সম্প্রতি বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগের অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি বুনটস্থান; ‘ফেসবুক’ বন্ধ করিয়া দেওয়া হইয়াছে। জনমনে ইহা লইয়া যারপরনাই ক্ষোভ পরিলক্ষিত হইতেছে। অধিকাংশই (সকলেই নয়) বলিতেছেন ইহা কিরূপ কর্ম হইল। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়িবার প্রতিশ্রুতি দিয়া ক্ষমতারোহন করিয়া এখন ডিজিটাল যোগাযোগ মাধ্যমকেই রুদ্ধ করিয়া দিতেছে! সরকারের ‘ফেসবুক’ বন্ধের এই সিদ্ধান্তে বাংলাদশের face এ যে কালিমা পড়িল এবং যে সকল ফ্যাসাদ হইল তাহা সরকার কিরূপে মোচন করিবে? ইহা তো আরেকটি মৌলবাদী দেশের (নাম উল্লেখ করিতে চাহিতেছি না) ন্যায় হইয়া গেল। ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু আমার মনে হয় জনগন আরো একটি বার সরকারকে ভুল বুঝিয়াছেন। সরকার সর্বদাই দেখিয়া আসিতেছে কিসে জনগনের মঙ্গল হয়, ডিজিটাল বাংলাদেশ এর স্বপ্ন সহজে বাস্তবায়ন করা যায়। সে লক্ষ্যে যে সরকার এক কালজয়ী সিদ্ধান্ত গ্রহন করিয়াছে তাহা আমি আমার পূর্বের রচনাতে উল্লেখ করিয়াছি। অত্র রচনাতেও ডিজিটাল বাংলাদেশ এর সেই স্বপ্ন নিয়ে আরো কিছুটা আলোচনা করার প্রয়োজনীয়তা দেখিতেছি।

গত ১৫ই জৈষ্ঠ্য (২৯ মে) যখন ‘ফেসবুক’ বন্ধ করিয়া দেওয়া হয় তখন আমি রেলগাড়িতে অবস্থান করিতেছিলাম। স্বাভাবিকভাবেই আমি ‘ফেসবুক’ বন্ধের ব্যাপারে অবগত ছিলাম না। কিন্তু কিছুক্ষন এর মাঝেই আমি আমার ভ্রাম্যমান দূরালাপনীতে বেশ কয়েকটি ক্ষুদে বার্তা পেয়ে গেলাম, বাংলাদেশে ‘ফেসবুক’ বন্ধ করিয়া দেওয়া হইয়াছে এই বিষয়ে। অনেকেই আমার সহিত যোগাযোগ করিয়া জিজ্ঞাসা করিল, এখন কি হইবে? আমি তখন মুচকি হাসি দিয়া বলিয়াছিলাম, ইহা কোন ঘটনা হইল। সরকার চলে ডালে ডালে, আমি চলি পাতায় পাতায়। ‘ফেসবুক’ এ প্রবেশ করা তো কোন ব্যাপারই নয়। কিন্তু বাড়িতে আসিয়া আপন গণনাযন্ত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন ছলচাতুরী করিয়া যখন ‘ফেসবুক’ এ প্রবেশ করিতে সক্ষম হইলাম তখনই আমি বুঝিতে পারিলাম কি ভুল উক্তিটাই না আমি করিয়াছিলাম! আসলে হইবে আমি চলি পাতায় পাতায় আর সরকার চলে শিরায় শিরায়। কেন? কারন ‘ফেসবুক’ এ প্রবেশ করিয়া দেখি আমার বেশ কিছু বন্ধু (যাহারা বাংলাদেশেই অবস্থান করিতেছে) সেখানে উপস্থিত। এর মাঝে সকলেই যে প্রযুক্তি বিষয়ে যথেষ্ঠ দক্ষ তাহা নয়। তাহলে? তখনই বুঝিতে পারিলাম আসলে সরকার কি করিতে চাহিতেছে। যদিও আমার অগ্রজ এক ভ্রাতা এই বিষয়ে সামান্য আভাষ দিয়াছেন ‘ফেসবুক’ এ, কিন্তু আমি এখানে তাহা কিঞ্চিত বিস্তারিত লিখিতেছি।

যখন অন্তর্জালে কোনকিছু আটকাইয়া দেওয়া হয় তখন তাহা ব্যাবহার করিতে চাহিলে bypass (বিকল্প পথ) করিতে হয়। এই বিকল্প পথের ব্যাপারটি কিঞ্চিত জটিল, বিশেষ করিয়া যাহাদের প্রযুক্তি জ্ঞান তুলনামূলক কম তাহাদের জন্য ইহা প্রায় অসাধ্য। এই কর্মে সবচেয়ে প্রচলিত ব্যাবস্থাটি হইতেছে, proxy ব্যাবহার করা। যাহাদের প্রযুক্তি জ্ঞান সীমিত তাহারা তো বটেই, যথেষ্ঠ প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন অনেকেও এই বিষয়ে অবগত নন। কিন্তু একটি কথা, প্রয়োজন কোন আইন মানে না। জনগনও এখানে কোন আইনের তোয়াক্কা না করিয়া শিখিয়া লইয়াছে এই জটিল ব্যাপারগুলো। আর তাহার ফল; সকলেই ‘ফেসবুক’ ব্যাবহার করিতেছে, কিন্তু একটু ভিন্ন পন্থায়। ইহাতে বেশ কয়েকটি লাভ হইল; এক, যাহারা ‘ফেসবুক’ চিনিত না তাহারা চিনিয়া ফেলিল পত্রিকার সংবাদ এর সুবাদে, দুই, যাহারা ‘ফেসবুক’ ব্যাবহার করেন তাহারা নতুন একটি প্রাযুক্তিক বিষয় সম্পর্কে অবগত হইল, তিন, যাহারা proxy ব্যাবহার করিয়া ‘ফেসবুক’ এ প্রবেশ করিয়াছেন; তাহারা অন্য কোন দেশের ‘ফেসবুক’ এর মাধ্যমে প্রবেশ করিয়াছেন যাহাদের অনেকেরই প্রধান ভাষা ইংরেজী নয় (যেমন, জার্মানি, ফ্রান্স, ইউক্রেন)। সেই সুবাদে সেই দেশের ভাষা সম্পর্কেও খানিকটা জানা হইয়া গিয়ছে। আপাতত আমি এক ঢিলে তিন পক্ষী দেখিতেছি, কিন্তু আমার বিশ্বাস সরকার এক ঢিলে শতশত পক্ষী মারিয়াছে, যাহা আপন ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে আসিতেছে না।

এখন পাঠক প্রশ্ন করিতে পারেন, তা সরকার যখন শিখাইতেই ইচ্ছুক তখন এইরূপে কেন? অন্যভাবে কি পারা যাইত না? এইখানে আমার একটি গদ্যের কথা মনে পড়িতেছে। ইহা হয়তো অনেকেই শুনিয়াছেন, তথাপিও বলিতেছি।

দুই ফাঁকিবাজ ভ্রাতাকে পড়াইবার দায়িত্ব লইয়াছেন এক শিক্ষক। তিনি বিভিন্ন প্রকারে চেষ্টা করিয়া যখন কোনভাবেই তাহাদের পাঠদান করিতে সক্ষম হইলেন না তখন তিনি বুদ্ধি করিয়া ভ্রাতাদ্বয়কে ফুলবাগানে বেড়াইতে লইয়া গেলেন। খানিক হাওয়া খাইবার পর তিনি জ্যেষ্ঠ ভ্রাতাকে বলিলেন, ওই বৃক্ষটিতে কইটি ফুল আছে কহিতে পারো? জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা উত্তরে কহিল, তিনটি। তখন শিক্ষক তাহাকে বলিলেন, বৃক্ষটিতে যদি আরো দুইটি ফুল ফুটে তাহা হইলে কয়টি হইবে কহিতে পারো? সাথে সাথে কনিষ্ঠ ভ্রাতা চিৎকার দিয়া উঠিল, দাদা উত্তর দিস্‌ না কিন্তু। মাস্টারমশাই আমাদিগকে গণিত শিখাইবার চেষ্টা করিতেছেন।

আমাদিগের অবস্থাও হইয়াছে ওই ফাঁকিবাজ ভ্রাতাদ্বয়ের ন্যায়। আমরা কোন ক্রমেই আর শিক্ষা গ্রহন করিতে চাহি না। তাই সরকার এই প্রচেষ্টা লইয়াছিল বলিয়া আমার বিশ্বাস। সৌভাগ্যক্রমে জনগন এই ফাঁকিটি ধরিতে না পারিয়া শিক্ষাগ্রহন করিয়া ফেলিয়াছে। আহা! জনগনকে লইয়া এতো চিন্তা করে এমন সরকার পৃথিবীর আর কোন দেশে খুজিয়া পাওয়া যাইবে? ইহা ভাবিয়াই আনন্দে আর গর্বে বুক একশ হাত ফুলিয়া উঠিতেছে। সাধেই কি আর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য বলিয়াছিলেন,

“সাবাস্‌ বাংলাদেশ; পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়

জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার; তবু মাথা নোয়াবার নয়।”


Bookmark and Share

ছাত্র রাজনীতি, গুজব এবং একটি বিশ্ববিদ্যালয়


মূল রচনায় যাইবার পূর্বেই আপনাদিগকে আপন বাল্যকালে পঠিত একটি গদ্য বলিয়া লই।

সে অনেক কাল পূর্বের কথা। তৎকালে রাজা-রানীদের যুগ অতিবাহিত হইতেছিল। সেই কালেরই কোন এক রাজার কাহিনী। রাজার ছিল বৃহদাকৃতির রাজত্ব। রাজ্যের সকলেই সেইখানে সুখে-শান্তিতে বসবাস করিতেছিল। তথাপিও দিনকতক ধরিয়া রাজ্যের সকলেরই আনন্দের মাত্রা কিঞ্চিত অধিক বলিয়াই প্রতীয়মান ছিল। তাহার কারন হইতেছে অতীব শীঘ্রই মহামন্য রাজা মশাই এর ঘর আলো করিয়া তাহার প্রথম সন্তান এর জন্ম হইতে যাইতেছে। রাজবদ্যি সঠিক দিনক্ষণ জানাইয়া দিয়াছেন। সকলেই অধীর আগ্রহের সহিত অপেক্ষা করিতেছিল সেই দিনটির জন্য। দেখিতে দেখিতেই সেই শুভদিন আসিয়া উপস্থিত হইল। কিন্তু নতুন নবজাতককে দেখিয়া উপস্থিত সকলেই কমবেশি মনক্ষুন্ন হইলেন। তাহার কারন আর কিছুই নহে, নবজাতকের গাত্রবর্ণ স্বাভাবিকের চাইতে কিঞ্চিত অধিক কৃষ্ণ। উক্ত সন্দেশটি যখন রাজপ্রাসাদ হইতে বাহিরে একান ওকান ঘুরিয়া প্রচার হইল তখন এইরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হইল।

প্রথম কানে গেল, রানীমা এক কৃষ্ণ বর্ণের পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়াছেন। উহা যখন প্রথম কান ঘুরিয়া দ্বিতীয় কানে গেল তখন তাহা হইল, রানীমা এক অতীব কৃষ্ণ বর্ণের সন্তানের জন্ম দিয়াছেন। তৃতীয় কানে গেল, রানীমা কুচকুচে কৃষ্ণ বর্ণের এক সন্তানের জন্ম দিয়াছেন। চতুর্থ কানে তাহা হইল, রানীমা একেবারে কাকের ন্যায় কৃষ্ণ বর্ণের এক সন্তানের জন্ম দিয়াছেন। পঞ্চম কানে, রানীমা এমনতর কৃষ্ণ বর্ণের এক সন্তানের জন্ম দিয়াছেন যে তাহাকে দেখিয়া কাক বলিয়া ভ্রম হয়। ষষ্ঠ কানে, রানীমার গর্ভ হইতে এক কাকের জন্ম হইয়াছে। সপ্তম কানে, রানীমার গর্ভ হইতে একটি কাকের জন্ম হইয়াছে এবং তাহা উড়িয়া গিয়াছে। আর শেষ পর্যন্ত অষ্টম কানে যাইয়া তাহা হইলো, রানীমার গর্ভ হইতে এক ঝাঁক কাক বাহির হইয়া উড়িয়া চলিয়া গিয়াছে।

এইবারে আমার মূল রচনায় আসিতেছি। যাহারা বাংলাদেশে অবস্থান করিতেছেন এবং যাহারা করিতেছেন না তাহারাও বিভিন্ন সন্দেশপত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশের বর্তমান ছাত্র রাজনীতি সম্পর্কে অবগত আছেন। ইহা বাংলাদেশের এক অমূল্য সম্পদ। ইহার চর্চার কারনেই হয়তো আজ আমরা একটি স্বাধীন দেশে বসবাস করার অধিকার অর্জন করিয়াছি। সুতরাং দেশের কল্যাণে ইহার অবদান অস্বীকার করিবার উপায় কোনরূপেই আমাদিগের হস্তে নাই। কোন এককালে এই দেশে বিভিন্ন শাসকরা বিভিন্ন রূপে অনাচার চালাইয়াছেন। সেইকালে এই ছাত্রগণই আমাদের দেশকে মুক্ত করিয়াছে। ইহা যে আমাদের দেশের কত বড় সম্পদ তাহার একটা উদাহরন দেই। আপনি যদি বিখ্যাত অনুসন্ধান যন্ত্র Google এর মাধ্যমে এই বিষয়ে কোন তথ্যের খোঁজ করেন তাহা হইলে যে ফলাফল গুলো আসিবে তাহার অধিকাংশই বাংলাদেশ সম্পর্কিত। কিন্তু বর্তমানে আমরা একটি স্বাধীন দেশে বসবাস করিতেছি, তাহা বলিয়া কি আমাদিগের ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজন ফুরাইয়া গিয়াছে? অবশ্যই তাহা নহে। নিম্নে আমি বর্তমান কালে আমাদিগের দেশে ছাত্র রাজনীতির কি অপার প্রয়োজনীয়তা রহিয়াছে সেই বিষয়ে আলোকপাত করিবার চেষ্টা করিতেছি।

আপনারা সকলেই জানিয়া থাকিবেন যে, বর্তমানে জনসংখ্যাকে বাংলাদেশের প্রথম এবং প্রধান সমস্যারূপে চিহ্নিত করা হইয়াছে। জনসংখ্যা এতটাই বৃদ্ধি পাইয়াছে যে আজকাল শিশু-কিশোরদের ক্রীড়া করিবার মাঠ তো দূরের কথা, মানুষের বসবাস করিবার স্থানই খুজিয়া পাওয়া দুষ্কর হইয়া উঠিয়াছে। সেই দিন হয়তো খুব বেশি দূরে নাই যেদিন উপর হইতে তাকাইলে শুধু মানুষই দেখা যাইবে, মানবের দেয়াল ভেদ করিয়া মৃত্তিকা দেখিবার কোন উপক্রম থাকিবে না। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে যাইয়া সরকারের অবস্থা হইয়াছে একেবারে মধ্য সমুদ্রে পতিত পিপিলিকার ন্যায়। এমতাবস্থায় সরকারকে সহায়তা করিতে ছাত্র সমাজ না আগাইয়া আসিলে আর কাহারা আগাইয়া আসিবে? হইয়াছেও তাহাই। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষা গ্রহনরত ছাত্ররা হইতেছে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানরা। যেকোন বিষয়ই তাহারা অত্যন্ত দ্রুততার সহিত বুঝিতে পারঙ্গম। এইখানেও তাহারা বুঝিতে পারিয়াছে যে, দেশের এই জনসংখ্যা সমস্যার যদি সমাধান না করা যায়, তাহা হইলে এই দেশ আর বসবাসের যোগ্য থাকিবে না। সেই মর্মে তাহারা একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করিয়াছে। তাহা হইলো, বর্তমানে যে জনসংখ্যা আছে তাহা কমাইতে হইবে। এই ক্ষেত্রে কি করা যায়? হ্যা, পাঠক ঠিকই ধরিয়াছেন, যাহারা জীবিত আছে তাহাদের খতম করিয়া দিলেই তো ল্যাঠা চুকিয়া যায়। বিচক্ষন ছাত্র রাজনীতিকরাও তাহাই ভাবিয়াছেন এবং এই মহৎ কর্মেই তাহাদের সময় ব্যয় করিয়া দেশের এক অশেষ উপকার সাধন করিতেছেন। তথাপিও কিছু কিছু ব্যক্তি অর্বাচিন এর ন্যায় বক্তব্য দিতেছেন যে, ছাত্ররা বেপরোয়া হইয়া উঠিয়াছে, তাহাদের এই মূহুর্তে থামানো উচিৎ। কিন্তু ইহা বলিয়া তাহারা যে তাহাদের জ্ঞানের মাঝে এক সুবিশাল ঘাটতি রহিয়াছে ইহাই প্রমান করিতেছেন তাহা বুঝিতে সমর্থ হইতেছেন না। শুধু খতম করিয়াই নয়, এই সকল মহান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আরো একটি চমৎকার পন্থা অবলম্বন করিতেছেন। তাহা হইতেছে বিভিন্ন নারীদের (বিশেষ করিয়া তাহাদেরই সহপাঠিনীদের) বিভিন্ন রূপে অপদস্থ করিতেছেন। ইহাতে অনেক নারীই তাহাদের মূল্যহীন জীবন দীর্ঘায়িত করার কোনরূপ বাসনা আর পোষন করিতেছে না। ইহাতে যেমন দেশের একজন মানুষ কমিয়া উপকার হইলো, তেমনি ভবিষ্যতেও আরো কিছু জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা হইতেও দেশ আশঙ্কামুক্ত হইলো। কতই না সুগঠিত চিন্তা এই সকল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের। আহা, মধু মধু!

শুধু কি এইখানেই শেষ? না না, তাহা হইবে কেন। আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, ‘দৌড়’ স্বাস্থের জন্য একটি অত্যন্ত উপকারী ব্যায়াম। কিন্তু নাগরিক এই ব্যস্ত জীবনে নিয়ম করিয়া দৌড়াইবেন এমন সময় কাহার আছে। সেই কারনেই ছাত্র রাজনীতিকরা সকলের সুস্বাস্থ সুনিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থা করেছেন ‘ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া’ নামক এক চমকপ্রদ ব্যবস্থার। ইহা একটি অতিশয় সুন্দর বন্দোবস্ত। এই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মাঝে পড়িলে আপনাকে চাচা, আপন প্রাণ বাঁচা; এই বাক্যটি মনে করিয়া দৌড়াইতেই হইবে। ইহাতে একদিকে যেমন আপনার ব্যায়ামও হইবে অন্যদিকে তেমন মনও ভালো থাকিবে। কেননা সকলেই অবগত, সুস্থ দেহ; সুন্দর মন।

আমি নিজে যে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অধ্যয়নরত তাহাতে অতীতে ছাত্র রাজনীতি বিদ্যমান ছিল না। ছাত্র-ছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আসিয়া তাহাদের শিক্ষার পাট চুকাইয়া যাইত মাত্র চারটি বছরে। কিন্তু ইহাতে যে এক বিপদের সম্ভাবনা রহিয়াছে তাহা ছাত্র রাজনীতিকগণ ব্যতিত আর কেহ আঁচ করিতে সমর্থ হন নাই। ভাবিতেছেন ইহাতে আবার কিরূপ বিপদ উপস্থিত হইতে পারে? তাহা হইলে বলিতেছি। একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্পন করে যখন তাহার বয়স অষ্টাদশ কিংবা উনবিংশ বৎসরহয়। মাত্র চারটি বছরে শিক্ষা জীবনের সমাপ্তি ঘটিলে দ্বাবিংশ অথবা ত্রয়োবিংশ বৎসর বয়স হইতে না হইতেই সে অর্থ উপার্জনের সক্ষমতা অর্জন করিয়া ফেলে। আর এইখানেই বিপত্তি ঘটিয়া যায়। বর্তমান যুগে দূরালাপনি অত্যন্ত সহজলভ্য হওয়ার দরূন বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকেই দেখা যায় জুটি পাতাইয়া আলাপচারিতায় মাতিয়া উঠিতে। ইহাদের মাঝে অনেকেই হয়তো শুধুমাত্র আনন্দের নিমিত্তে এই কর্মে সময় ব্যয় করিয়া থাকেন, কিন্তু সত্যিকার অর্থেই ভবিষ্যতের কথা ভাবিয়া একে অপরকে মন দিয়া বসিয়াছেন এমন জুটিও কম খুজিয়া পাওয়া যাইবে না। তাহা হইলে কি দাড়াইতেছে, সম্পর্ককে একটি সামাজিকভাবে স্বীকৃত বন্ধন দিতে হইলে বিবাহ করা আবশ্যক। কিন্তু আমাদের যে সমাজ ব্যবস্থা বিদ্যমান, তাহাতে পুরুষ যদি অর্থ উপার্জনে নিয়োজিত না থাকেন তবে বিবাহ করা চলে না। তাই যখন আমাদের এই সকল ছাত্ররা এত অল্প বয়সে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করিয়া কর্মজীবনে পদার্পন করিয়া স্বাবলম্বী হইতেছেন তখন তাহার মনের স্বপ্নের রানীকে সত্বর নিজ গৃহে আনার লক্ষ্যে বিবাহ করিবার কথা ভাবিতেছেন। আপনারা হয়তো ভাবিতেছেন ইহাতে সমস্যা কোথায়। হ্যা, সমস্যা আছে বৈকি। জনসংখ্যা সমস্যা নিরসনে সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। তাহার মধ্যে বাল্যবিবাহ রোধও একটি। পূর্বে বিবাহের যে ন্যূনতম বয়স নির্ধারন করা হইয়াছিল শুনিতেছি বর্তমানে তাহা আরো বাড়াইয়া দেয়া হইবে। কিন্তু সত্যি কথা বলিতে কি, অর্থোপার্জনক্ষম একজন ব্যক্তির যখন বিবাহ করিবার বাসনা হইবে তখন কি এই আইন আর তাহাকে নিরস্থ করিতে পারিবে? সেই ক্ষেত্রে একটাই প্রতিকার, বিশ্ববিদ্যালয় জীবন যথাসম্ভব দীর্ঘায়িত করিতে হইবে। পারিলে শেষই হইতে দেওয়া যাইবে না। এক্ষেত্রে ছাত্র রাজনীতি এক অমূল্য ভূমিকা পালন করিতেছে। ভবিষ্যতের এই সমস্যাটি পূর্বেই অনুধাবন করিয়া তা প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য আমি এই সকল রাজনীতিকদের প্রতি কৃতজ্ঞ।

খালি করিয়া যাইতেছে কুয়েটের ছাত্ররা

কিছুদিন পূর্বেই এই রাজনীতির জের ধরিয়া আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ হইয়া গিয়াছে। কিন্তু ইহা যে দেশের এক অমোঘ উপকার সাধনের নিমিত্তে করা হইয়াছে তাহা অনেকেই বুঝিতে সমর্থ হয় নাই, আর তাই তাহারা বিভিন্নরূপে কোলাহল তৈয়ারি করিয়াছে কবে বিশ্ববিদ্যালয় খুলিবে এই বলিয়া। সেই সকল অজ্ঞানীরা বিভিন্নরূপে গুজব ছড়াইয়াছেন যে, বিশ্ববিদ্যালয় খুলিয়া যাইতেছে। তাহাদের গুজব কতটা বৃহৎ রূপ ধারন করিয়াছিল তাহা নিশ্চয় পাঠক রচনার শুরুতেই আমি যে গদ্যটি লিখিয়াছিলাম তাহা থেকে ধারনা করিতে পারিতেছেন। এইসব গুজব প্রচারকারীগণ ধারনা করিয়াছিলেন গুজবে কান লাগাইয়া সকল শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত হইবে আর তখন বিশ্ববিদ্যালয় আপনাতেই খুলিয়া যাইবে। কিন্তু দেশের এই ক্ষতিটি তাহারা কেন করিতে চাহিতেছেন? ইহাতে নিশ্চয়ই তাহাদের কোন গুপ্ত উপকার সাধিত হইবে। না হইলে নিজের দেশের এত বড় ক্ষতিসাধন তাহারা কেন করিতে চাহিবেন? কিন্তু তাহাদেরকে বলিতেছি, গুজব ছড়াইয়া কোন লাভ হইবে না। কারন ইহা আমাদিগের মঙ্গলের নিমিত্তেই করা হইয়াছে। আর আপন ভালো যদি কেহ না বুঝিতে পারে তখন তাহাকে কি বলিব। কেননা বলা হইয়া থাকে, আপন ভালো পাগলেও বোঝে।

পুনশ্চ: সম্প্রতি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় খুলিয়া দেয়ার ঘোষনা দেওয়া হইয়াছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছাত্র রাজনীতিকগণ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করিয়া আবারো দেশের উপকার সাধনে নিমিত্ত হইবেন।

Bookmark and Share

অভ্র কর্তৃক আইন ভঙ্গ ও কিছু কথা…


সাম্প্রতিক সময়ে অন্তর্জাল জগত থেকে সংবাদপত্র সকল জায়গায় একটি বিষয় অত্যন্ত আলোচিত হইতেছে, তাহা হইলো “অভ্র কি বিজয় এর প্রতিলিপি।” প্রাথমিক দিককালে আমি ‘অভ্র’ এর প্রতি আপন দূর্বলতা পোষন করিয়াছি। ‘অভ্র’ এর সহশ্রষ্ঠা জনাব মেহেদি হাসান এর লেখনিকে বেদ বাক্য ধরিয়া ভাবিয়াছি, ‘অভ্র’ কে ‘বিজয়’ এর প্রতিলিপি বলিয়া জনাব মোস্তফা জব্বার কি নিচুতাই না দেখাইতেছেন! ‘অভ্র’ তে ব্যবহৃত ‘ইউনিবিজয়’ কোন প্রকারেই ‘বিজয়’ এর প্রতিলিপি হইতে পারে না। ইহা জনাব মোস্তফা জব্বার এর একটি অপপ্রচার মাত্র। জনাব মোস্তফা জব্বার এর এ সকল অপপ্রচার এর দরুন অন্তর্জাল জগতের অনেক বাসিন্দাই তাহার ওপর যারপরনাই বিরক্ত হইয়াছেন। তাহাকে বিভিন্ন ভাবে নিন্দা-মন্দ করিয়া বলিয়াছেন, বয়সের দরুন তাহার বুদ্ধি লোপ পাইয়াছে। তিনি বাংলা ভাষার বিকাশের পথে এক অন্তরায়। বাহান্ন সালে যেমন পাকিস্তানি সরকার বাংলা ভাষাকে দমাইয়া রাখিবার চেষ্টা করিয়াছিল, বর্তমানে জনাব মোস্তফা জব্বার তাহাই করিতেছেন। শুধু তাহাই নহে, অতি আগ্রহী ব্যক্তিগণ তাহাকে আপন পিতৃভ্রাতা এবং মাতৃভ্রাতা বলিয়া সম্বোধন করিয়াছেন। বলাই বাহুল্য, ইহা তাহার প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন স্বরূপ করা হয় নাই; তাহাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করিয়া করা হইয়াছে। অন্তর্জাল জগতের একজন সক্রিয় বাসিন্দা হওয়ার দরূন ইহা অনেক পূর্বেই আপন দৃষ্টিগোচর হইয়াছে এবং এতদিন ধরিয়া ইহা অত্যন্ত পুলকের সহিত উপভোগ করিতেছিলাম। কেননা পরিস্থিতি যথেষ্ঠ আনন্দদায়ক বলিয়াই প্রতিয়মান হইতেছিল আপনার নিকটে।
কিন্তু, আজিকে জনাব মোস্তফা জব্বার তাহার চমৎকার এক লেখনির (আইনের চোখে অভ্র ও অন্য কিছু বাংলা সফটওয়্যারের পাইরেসি) মাধ্যমে আপনার ধারনাকে ভুল বলিয়া প্রমান করিয়াছেন। তিনি সহজ বাক্যে বুঝাইয়া দিয়াছেন যে, জনাব মেহেদি হাসান তাহার কৌশলি লেখনির মাধ্যমে সাধারন জনগনকে কেমন করিয়া ভুল পথে চালিত করিবার অপচেষ্টা চালাইতেছেন। জনাব মোস্তফা জব্বার এর উক্ত সুখপাঠ্যটি আমার মুদিত চক্ষুপত্র উন্মোচন করিয়াছে এবং এখন আমি আশংকার সহিত লক্ষ্য করিলাম যে, জনাব মেহেদি হাসান জনগনকে ভ্রান্ত করার পথে কতখানি অগ্রসর হইয়া গিয়াছেন। জনাব মোস্তফা জব্বার আমাদের সামনে দেশে প্রবর্তিত মেধাস্বত্ব আইন তুলিয়া ধরিয়াছেন এবং সে আইন অনুসারে আমাদের ন্যায় অর্বাচিনদের ইহা বুঝাইবার প্রচেষ্টা লইয়াছেন যে ‘ইউনিবিজয়’ কোন কোন ক্ষেত্রে মেধাস্বত্ব লঙ্ঘন করিয়াছে। যাহারা আমার এই দীর্ঘ লেখায় বিরক্ত হইতে আরম্ভ করিয়াছেন অথবা বিরক্ত হইয়া গিয়াছেন, তাহাদের নিকট আমার অনুরোধ কিঞ্চিত ধৈর্য্য ধারন করিয়া আমার এ লেখাটি পড়িয়া সমাপ্ত করুন। ইহাতে আপনার উপকার বই অপকার হইবে না। নিচে আমি মেধাস্বত্ব আইন ও তার প্রয়োগ সম্পর্কে খানিকটা আলোকপাত করিবার চেষ্টা করিতেছি।
মেধাস্বত্ব আইন ২০০০ (২০০৫ সালে সংশোধিত) অনুসারে, ধারা ২(৮)(ঙ) তে মেধাস্বত্ব লঙ্ঘনকারী অনুলিপির সংজ্ঞা হিসেবে বলা হইয়াছে, ‘৩[(ঙ) কম্পিউটার প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে, কোন কম্পিউটার প্রোগ্রামের সম্পূর্ণ বা অংশবিশেষের পুনরুৎপাদন বা ব্যবহার।’
এইখানে “কম্পিউটার প্রোগ্রাম” বলিতে গণনাযন্ত্রকে দেয়া বিশেষ কিছু লিপিবদ্ধ নির্দেশনা-কে বোঝানো হইতেছে। বিজ্ঞ পাঠকগন নিশ্চয়ই বুঝিতে পারিয়াছেন উক্ত আইনে কি বুঝানো হইয়াছে। উক্ত আইন অনুসারে যদি কোন গণনাযন্ত্রে এমন কোন নির্দেশনা সম্পুর্ন অথবা তাহার অংশবিশেষ নির্দেশনার আসল মালিকের অনুমতি ব্যতিরেকে পুনর্ব্যবহার করা হয় যাহার মেধস্বত্ব করা রহিয়াছে তাহা হইলে তাহা আইন ভঙ্গ করিবে। এই ক্ষেত্রে যে ব্যক্তি ওই নির্দেশনা ব্যবহার করিয়াছেন অবশ্যই আইনের চোখে তিনি দোষী বলিয়া সাব্যস্ত হইবেন। যেহেতু ‘বিজয়’ এর মেধাস্বত্ব করা রহিয়াছে এবং ‘ইউনিবিজয়’ এ ‘বিজয়’ এর কিছু অংশ ব্যবহার করা হইয়াছে এবং ‘ইউনিবিজয়’ ‘অভ্র’ এর একটি অংশ, সেহেতু ‘অভ্র’ অবশ্যই মেধাস্বত্ব লঙ্ঘন করিয়াছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস জনাব মেহেদি হাসান এই বিপদ পূর্বেই অনুধাবন করিতে সমর্থ হইয়াছেন এবং নিজে আইনের হাত হইতে বাঁচিতে এখন বিভিন্ন আগডুম-বাগডুম বুলি আওড়াইতেছেন। কিন্তু আর নয়, দেশের মানুষ এখন মেধাস্বত্ব আইন জানিয়া গিয়াছে। সুতরাং জনাব মেহেদি হাসান কে আইন এর হাত থেকে আর কেউ বাঁচাতে পারবে না।
বিজ্ঞ পাঠকগন এখন নিশ্চয়ই বুঝিতে পারিয়াছেন যে, ‘অভ্র’ কিরূপে দেশের মেধাস্বত্ব আইন ভঙ্গ করিয়াছে। দেশের একজন সুনাগরিক হিসেবে আমাদের অবশ্যই আইনের প্রতি স্রদ্ধাশীল হইতে হইবে। আর জনাব মেহেদি হাসানের এ সকল হীন চক্রান্তককে নস্যাত করে দেশে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করিতে হইবেই। নতুবা আমাদের দেশ কখনোই শীর্ষ দূর্নীতিগ্রস্থ দেশের তকমা থেকে মুক্ত হইতে পারিবে না।
তবে এই ক্ষেত্রে নতুন আরেকটি বিষয় উঠিয়া আসিয়াছে। কেননা জনাব মোস্তফা জব্বার কেঁচো খুঁড়িতে গিয়া অজগর সর্প উত্তোলন করিয়া ফেলিয়াছেন। আর তাহা হইতেছে, আইন অনুযায়ী মেধাস্বত্ব আইনের আওতায় আনা হইয়াছে অর্থাৎ নিবন্ধন করা হইয়াছে এমন কোন নির্দেশিকার অংশবিশেষও ব্যবহার করা যাইবে না। আমি জানি না ‘বিজয়’ এ কোন নির্দেশক ভাষা ব্যবহার করা হইয়াছে তবে তাহা ‘সি’ নামক একটি বহুল প্রচলিত ভাষা হইবার যথেষ্ঠ সম্ভাবনা রহিয়াছে। আর তাহাই যদি হইয়া থাকে তাহা হইলে আমি এবং আমার সকল সহপাঠী বন্ধুগন এক বিরাট অন্যায় সাধন করিয়া বসিয়াছি। “গণনাযন্ত্র বিজ্ঞান” এর ছাত্র হওয়ার দরূন আমাদিগকে কতিপয় নির্দেশক ভাষা রপ্ত করানো হইয়াছে। তাহার মধ্যে ‘সি’ অন্যতম। এই ক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে ‘সি’ ভাষায় লিখিত সকল নির্দেশনার শুরুতেই “void main” অথবা “int main” বলিয়া একটি বাক্য লিখিতে হয়। এখন যদি ‘বিজয়’; ‘সি’ ভাষা কর্তৃক লিখিত হয় তাহা হইলে আমি এবং আমার সকল সহপাঠী বন্ধুগন আপন অজান্তেই দেশের আইন ভঙ্গ করিয়া বসিয়াছি। যেহেতু জনাব মোস্তফা জব্বার যারা যারা ‘বিজয়’ এর মেধাস্বত্ব ভঙ্গ করিয়াছে তাহাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করিবার বন্দোবস্ত করিতেছেন, সেহেতু আমরাও নিশ্চয়ই ইহার বাহিরে থাকিব না। কারন মেধাস্বত্ব আইন লঙ্ঘন করিবার অভিযোগ আমাদের ওপরেও বর্তায়। এমতাবস্থায় আমি জনাব মোস্তফা জব্বার এর নিকট একটি অনুরোধ করিতে চাহি; আর তাহা হইতেছে, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় এ যখন পদার্পন করিয়াছিলাম তখন নিতান্তই অবুঝ ছিলাম। শিক্ষকগন আমাদের সঠিক না বেঠিক শিক্ষা প্রদান করিতেছেন তাহার পার্থক্য নিরুপন করিবার ক্ষমতা তখনও আমাদের হইয়া উঠে নাই। সুতরাং ‘সি’ ভাষায় “void main” বাক্যটি ব্যবহার যে অবৈধ এবং তাহা মেধাস্বত্ব আইন লঙ্ঘন করে তাহা সম্পর্কে আমরা অবগত ছিলাম না। জানা থাকিলে আমরা অবশ্যই এত বড় দুরাচারে লিপ্ত হইতাম না। যেহেতু আমরা আইন ভঙ্গ করিয়াই ফেলিয়াছি সেহেতু আমাদের বিরুদ্ধে আপনি মকদ্দমা করিলে আমাদের কিছুই বলার থাকিবে না। কিন্তু আমাদিগের ন্যায় অজ্ঞদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করাটা কি আপনার ঠিক হইবে? আমার মনে হয় আমাদিগের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে যাহারা আমাদের এই হীন কার্যে লিপ্ত করাইয়াছেন তাহাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করাটাই যুক্তিযুক্ত হইবে। সেক্ষেত্রে প্রভাষক জনাব রুশদি শামস- এর নাম সবার আগে আসিবে। কেননা উক্ত শিক্ষকই আমাদের ‘সি’ ভাষা বিষয়ে জ্ঞান দান করিয়াছেন এবং শিক্ষক হইয়াও আমাদেরকে এত বড় পাপাচারের দিকে ঠেলিয়া দিয়াছেন। এর পরেই নাম আসিবে তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক জনাব ড. এম. এম. এ. হাশেম এর নাম। উনি উক্ত শিক্ষককে ইন্ধন যোগাইয়াছেন। সুতরাং আপন অনুরোধ হইতেছে, মকদ্দমা করিলে উক্ত দুই শিক্ষককে প্রধান আসামি করাই বোধহয় যুক্তিযুক্ত হইবে। কেননা উনারা আমাদিগের ন্যায় অনেক কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীর অজ্ঞানতার সুযোগ নিয়া এহেন হীন কার্যে লিপ্ত করাইয়াছেন, করাইতেছেন এবং করাইতে থাকিবেন।
আমি আরো কিছু বিষয়ে আলোকপাত করিতে ইচ্ছুক ছিলাম। কিন্তু লেখার কলেবর এতটাই বড় হইয়া গিয়াছে যে আমি ইহাকে আর বৃদ্ধি করিবার সাহস করিতেছি না। ইতোমধ্যেই আমার মনের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হইয়া গিয়াছে যে, এত বড় কলেবর এর লেখা কতজন পাঠক ধৈর্য্য ধরিয়া পড়িবেন। উক্ত কারনেই আমি আমার লেখনির এখানেই সমাপ্তি টানছি। ভবিষ্যতের কোন লেখনিতে আপনাদের সামনে আরো কিছু বিষয় তুলে ধরার ইচ্ছা পোষন করছি। লেখনির কোথাও কোন ভুল দেখিলে পাঠক তাহা আপন গুনে ক্ষমা করিয়া দিবেন বলিয়া আশা করিতেছি।
বি. দ্র.: ‘অভ্র’, ‘বিজয়’ এবং ‘সি’ আপন আপন মালিক কর্তৃক নিবন্ধিত নাম।

Bookmark and Share