আমার ভালো লাগা কিছু চলচ্চিত্র
অনেক দিন হয়ে গেল নতুন কোন লেখা দিচ্ছি না। গ্রামীনফোন এর ইন্টারনেট নিয়ে সমস্যার কারনে অনেক দিন ইন্টারনেট থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলাম। তাছাড়া আলসেমীরও এর পেছনে একটা বড় ভূমিকা আছে। বিরতি ভাঙার জন্যই তাই ভাবলাম আমার ভালো লাগা কিছু চলচ্চিত্র নিয়ে আজ একটা লেখা দিয়ে দিই। যদিও এরকম একটা লেখা লিখব এটা আমি বেশ অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম কিন্তু লেখা আর হয়ে উঠে নি। তবে কিছুদিন আগেই মাহমুদ ফয়সাল ভাই এরকম একটা লেখা দেয়ার জন্য আমাকে বলেছিলেন। তাই আজ মূলত তার কথায়ই লিখছি।
প্রথমেই বলে নিচ্ছি আমি যে চলচ্চিত্রগুলো সম্পর্কে এখানে লিখছি এগুলো ছাড়াও আমার পছন্দের তালিকায় আরও অনেক চলচ্চিত্র আছে। কিন্তু তাদের মধ্য থেকে এদেরকে বেছে নেয়ার একটি প্রধান কারন হচ্ছে এদের বেশির ভাগই একটু অপরিচিত। অপরিচিত বলতে আমি বুঝাচ্ছি ব্যাবসা সফল নয় অথবা অন্য কোন কারনে হয়তো অনেকেরই নজরে খুব বেশি আসে নি। যদি কোন কারনে চলচ্চিত্রগুলো আপনার না দেখা হয়ে থাকে তাহলে দেখতে পারেন। আশা করছি ভালো লাগবে।
১. Sex is Zero (2002)
পরিচালক: Yoon Je-kyoon
দেশ: দক্ষিন কোরিয়া
ভাষা: কোরিয়ান
কলেজ পড়ুয়া একদল ছাত্র-ছাত্রীকে নিয়ে চলচ্চিত্রে কাহিনি তৈরি হলেও য়ুন-সিক নামের এক তরুনই চলচ্চিত্রের মূল চরিত্র। বিভিন্ন হাসি-তামাশার মধ্যে দিয়ে কাহিনি এগিয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত এক চমৎকার রোমান্টিক সিনেমাতেই পরিবর্তিত হয় এটি। অসাধারন ভাবে পরিচালক চলচ্চিত্রের নামকে সার্থকতা দিতে সক্ষম হয়েছেন। তবে বিভিন্ন দৃশ্য অনেকের কাছেই আপত্তিকর লাগতে পারে। 😐
২. Trade (2007)
পরিচালক: Marco Kreuzpainter
দেশ: জার্মানী
ভাষা: ইংরেজী
আদ্রিয়ানা নামের ১৩ বছরের দরিদ্র এক মেক্সিকান কিশোরীর অপহরনকে ঘিরেই মূলত গড়ে উঠেছে চলচ্চিত্রের কাহিনি। অপহরনের পর তাকে পাচার করে দেয়া হয় পতিতাবৃত্তির জন্য। আর তাকে খুজতেই পথে নেমে আসে তার ১৭ বছর বয়সী ভাই। আর এর মধ্য দিয়েই অত্যন্ত চমৎকার ভাবে এগিয়ে গিয়েছে সিনেমার কাহিনি। এর মাঝে উঠে এসেছে নারী পাচার এর অনেক হৃদয় বিদারক ঘটনা।
৩. Diary of a Nymphomaniac (2008)
পরিচালক: Christian Molina
দেশ: স্পেন
ভাষা: স্প্যানিশ
একজন nymphomaniac (যৌন আসক্ত) নারীর জীবনকে নিয়েই চলচ্চিত্রের কাহিনি পরিনতির দিকে গিয়েছে। ভ্যালেরি নামের ওই নারীর খোলামেলা যৌন জীবন এবং এক পর্যায়ে জীবন সম্পর্কে তার উপলব্ধি আর আপনজনের অভাব বোধই সিনেমার মূল উপজীব্য। খুবই চমৎকার ভাবে এক অদ্ভূৎ জীবনধারার চিত্র তুলে ধরেছেন পরিচালক। তবে কাহিনির খাতিরেই অত্যন্ত খোলামেলা ভাবে বিভিন্ন যৌন দৃশ্য দেখানো হয়েছে যা অনেকের কাছেই আপত্তিকর মনে হতে পারে।
৪. The Boy in the Stripped Pyjamas (2008)
পরিচালক: Mark Herman
দেশ: যুক্তরাষ্ট্র
ভাষা: ইংরেজী
আইরিশ লেখক John Boyne এর লেখা উপন্যাস এর উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে এটি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এক নাজি কমান্ডার এর ৮ বছর বয়সী ছেলে এবং সমবয়সী এক ইহুদী শিশুর বন্ধুত্বকে ঘিরেই সিনেমার কাহিনি পরিনত হয়ে অত্যন্ত ট্র্যাজিক ভাবে শেষ হয়েছে। নাজি বাহিনীর আগ্রাসন এবং ধ্বংসযজ্ঞ সম্পর্কে সাধারন মানুষের অজ্ঞতা এবং মনোভাবও এখানে অসাধারনভাবে ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
৫. Crossing Over (2009)
পরিচালক: Wayne Kramer
দেশ: যুক্তরাষ্ট্র
ভাষা: ইংরেজী
যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসরত কিছু অভিবাসী এবং নাগরিকত্ব লাভে ইচ্ছুক কয়েকজনকে নিয়েই প্রধানত সিনেমার কাহিনি তৈরী হয়েছে। সেই সাথে বর্ডার সমস্যা, জাল কাগজের ব্যাবহার, গ্রিন কার্ড প্রসেসিং সিস্টেম এবং তাতে দূর্নীতি সহ আরো অনেক বিষয় উঠে এসেছে। মজার বিষয় হচ্ছে অবৈধ অভিবাসী পরিবারটি একটি বাংলাদেশী পরিবার। যুক্তরাষ্ট্রকে বলা হয় Land of opportunity, আর সেখানকার নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য মানুষ কি কি করতে পারে তা খুব সুন্দর ভাবে তুলে ধরা হয়েছে এই সিনেমাটিতে।
৬. Oye! (2009)
পরিচালক: Anand Ranga
দেশ: ভারত
ভাষা: তেলেগু
পরিচালক আনন্দ রাঙ্গার পরিচালিত প্রথম সিনেমা এটি। শুরুতেই পরিচালক তার অনেকগুলো ভালো লাগা চলচ্চিত্রের নাম উল্লেখ করেছেন এবং সিনেমাটিতে উল্লেখিত চলচ্চিত্রের বিভিন্ন অংশের সাথেই আপনি মিল খুজে পাবেন। কিন্তু তারপরও অপ্রয়োজনীয় কিছু চটুল অংশ বাদ দিলে সিনেমাটি আপনাকে মুগ্ধ করবে বলেই আমার বিশ্বাস।
৭. অন্তহীন (২০০৯)
পরিচালক: অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরী
দেশ: ভারত
ভাষা: বাংলা
২০০৯ সালে ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কারে শেষ্ঠ চলচ্চিত্র সহ ৪ টি বিভাগে পুরষ্কার পেয়েছিল এই চলচ্চিত্রটি। যদিও কাহিনি যথেষ্ট ধীর গতিতে অগ্রসর হয় এবং অনেকের পক্ষেই হয়ত ধৈর্য্য ধরে রাখা কষ্টকর হতে পারে। কিন্তু তারপরও পরিচালক যথেষ্ট নান্দনিকতার পরিচয় দিতে পেরেছেন উপস্থাপনে। বর্তমান ভারতের শহুরে মানুষদের ধ্যান-ধারনাও বেশ ভালো ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক।
৮. Vinnaithaandi Varuvaayaa (2010)
পরিচালক: Gautham Menon
দেশ: ভারত
ভাষা: তামিল
কার্তিক নামের এক হিন্দু তরুন এবং তার চেয়ে এক বছরের বড় জেসী নামের এক খ্রীস্টান তরুনীর ভালোবাসার কাহিনিকে ঘিরেই সিনেমা এগিয়ে গিয়েছে। ভিন্নধর্মী একটি কাহিনি এবং চমৎকার পরিচালনার কারনে পৌনে ৩ ঘন্টার এই সিনেমা আপনাকে আটকে রাখবে পুরোটা সময়। সেই সাথে তৃষা কৃষ্ণান এর অভিনয়ও সত্যি প্রশংসনীয়।
আপাতত এই ৮ টি চলচ্চিত্রের নামই মনে আসছে। এর মোটামোটি সবগুলোই ড্রামা টাইপের সিনেমা। আপনি যদি এককভাবে শুধুমাত্র এ্যাকশন-এ্যাডভেঞ্চার সিনেমার ভক্ত না হয়ে থাকেন তাহলে সিনেমা গুলো আপনার ভালো লাগবে বলেই আমার বিশ্বাস। ভবিষ্যতে আরো কিছু সিনেমার নাম দেয়ার ইচ্ছে রইলো।