আসিফ এবার মাত্র নার্সারীতে পড়ে। খুবই চঞ্চল। সারাদিন শুধু হইচই করে কাটায়। ওর মা মুনিরার সারাটা দিনই চলে যায় আসিফ এর পেছনে। আসিফ মাকে যেমন যন্ত্রনা দেয় ঠিক তেমনি ভালোবাসে। মা ওর যন্ত্রনায় অস্থির হয়ে মাঝে মাঝে বলে বসে, বেশি যন্ত্রনা করলে কিন্তু তোকে এতিমখানায় নিয়ে রেখে আসবো। আসিফ তখন ছুটে এসে মায়ের বুকে মাথা গুজে কাঁদতে শুরু করে।

মুনিরা তখন ওকে সান্ত্বনা দেয়, পাগল ছেলে আমার। তুই হচ্ছিস আমার বুকের ধন। তোকে কি কখনো আমি এতিমখানায় রেখে আসতে পারি। তোকে ছাড়া যে আমি বাঁচতেই পারব না।

মায়ের আশ্বাস পেয়ে খানিকটা শান্ত হয় আসিফ।

আসিফের বাবা রকিব একজন ব্যাবসায়ী। ব্যাবসার খাতিরে তাকে মাঝেমাঝেই ঢাকার বাইরে ছুটতে হয়। আসিফকে দেয়ার মতো সময় সে খুব বেশী বের করতে পারে না। তারপরও চেষ্টা করে অন্তত বন্ধের দিনগুলো ছেলের সঙ্গে কাটাতে। আসিফও মুখিয়ে থাকে সেই দিনগুলোর জন্য। বাবাকে সে প্রচন্ড ভালোবাসে। বাবার সাথে বাইরে গেলেই মজা। শুধু যদি বাবাকে একবার বলা হয়, বাবা ওই জিনিসটা চাই, সেটা খেতে ইচ্ছে করছে। বাবা সাথে সাথে তা কিনে দেবে। আসিফের বাবা রকিব মানুষটাও খুবই ভালো। কখনোই ছেলেকে বকাঝকা করেন না। মুনিরা যখন আসিফকে বকাঝকা করেন তখন রকিব হাসতে হাসতে বলেন, বকছ কেন? এই বয়সের বাচ্চারা যদি একটু দুষ্টুমি না করে তাহলে কখন করবে? বাবার আস্কারা পেয়ে আসিফও নতুন উদ্যমে নেমে পড়ে। মুনিরা তখন তার রাগ ঝাড়তে শুরু করেন রকিব এর উপর। রকিব সব কিছু হাসি মুখে শুনে যান।

এভাবেই চলছিল তিন সদস্যের এই ছোট্ট পরিবারের জীবন।

 

মুনিরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স শেষ করলেও এখন পুরোদস্তুর গৃহিনী। আসিফ যে সময়টা স্কুলে থাকে তখন তার করার মতো কিছু থাকে না। তাই টুকটাক হাতের কাজ কিছু করার চেষ্টা করে। রকিব অনেকদিন ধরে যদিও বলছে যে, ঘরে বসে না থেকে চাকরী-বাকরী কিছু কর। তোমার সময়টাও ভালো কাটবে তাছাড়া নিজেও কিছুটা স্বাবলম্বী হতে পারবে। কিন্তু মুনিরা তাতে কান দেয় নি। তার ধারনা চাকরী করলে যদি আসিফ এর প্রতি অযত্ন হয়!

সেদিন আসিফকে স্কুলে দিয়ে বাসায় ফিরছিল মুনিরা। রাস্তায় হঠাৎই তার ভার্সিটি জীবনের বান্ধবী যুথীর সাথে দেখা হয়ে গেল। ভার্সিটিতে থাকা অবস্থায় দুজনে খুবই কাছের বান্ধবী ছিল। কিন্তু মুনিরার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর থেকে আর খুব বেশি যোগাযোগ ছিল না দুজনের মধ্যে। একথা সেকথার পর মুনিরা জানতে পারলো, পাগলীটা বিয়ে করেছে। ভার্সিটিতে থাকতে সবসময় বলতো, বিয়ে আমি জীবনেও করব না। একজন পুরুষ মানুষের সাথে এক বিছানায় থাকা আমার পক্ষে অসম্ভব। আর তাছাড়া পুরুষ মানুষকে কোন বিশ্বাস আছে নাকি। আজ এই মেয়ের সাথে কাল ওই মেয়ের সাথে।

মুনিরা তাই একটু খোঁচা দিয়ে বললো, কিরে, খুব না বলতি জীবনেও বিয়ে করবো না। এখন কেন?

যুথী একটু হেসে উত্তর দেয়, নাহ্‌, জাহিদ অন্য সব পুরুষদের মতো না। অন্য কোন মেয়ের দিকে ও তাকায়ই না। সে কথা বাদ দে। কাছেই আমি নতুন একটা বিউটি পার্লার খুলেছি, চল তোকে নিয়ে যাই।

মুনিরার হাতে কোন কাজ নেই, তাই সে আর আপত্তি করলো না। বিউটি পার্লারে গিয়ে ঢুকতেই দেখতে পেল বেশ সুদর্শন একজন পুরুষ বসে আছে। যুথী পরিচয় করিয়ে দিলো, এই হচ্ছে জাহিদ। মুনিরা মনে মনে প্রশংসা না করে পারলো না। পাগলীটা বেশ হ্যান্ডসাম এক হাসব্যান্ড পেয়েছে। রকিব এর সবদিকই ভালো শুধু গায়ের রংটা একটু ময়লা। সেটা নিয়ে মুনিরার মনে একটা গোপন অতৃপ্তি থাকলেও কখনো কাউকে কিছু বলে নি। কিন্তু যুথীর হাসব্যান্ড জাহিদ সত্যিই একজন পছন্দ হওয়ার মতো ছেলে। পুরনো বান্ধবীর সাথে আড্ডা মেরেই সেদিন আসিফ এর স্কুলের সময়টুকু কাটিয়ে দিল মুনিরা।

পরদিন আসিফকে স্কুলে দিয়ে আবার যুথীর বিউটি পার্লারে যায় মুনিরা। সেদিন যুথী ছিলনা সেখানে। বদলে জাহিদ সবকিছু দেখাশোনা করছিল। জাহিদ এর সাথেই কথা বলে ঘন্টাখানেক কাটিয়ে দিল মুনিরা।

পরদিন আবারো বিউটি পার্লারে গিয়ে উপস্থিত হলো মুনিরা। আজকেও যুথী ছিল না। জাহিদের সাথেই খানিক সময় গল্প করে কাটিয়ে দিল মুনিরা। এভাবেই চলতে লাগলো বেশ কিছুদিন। প্রায়ই বিউটি পার্লারে যুথী থাকতো না। তখন জাহিদ থাকতো। ওর সাথে কথা বলতে বেশ লাগতো মুনিরার। জাহিদেরও যে বেশ ভালোই লাগতো তা মুনিরা পরিষ্কার বুঝতে পারতো।

 

(আগামী পোস্টে সমাপ্য)