Posts tagged ‘কুয়েট’

দুইজন মানুষ(!) এবং দলছুট হওয়ার গল্প


মূল রচনায় যাইবার পূর্বেই আপনাদিগকে একটি গল্প বলিয়া নেই। সে অনেক কাল পূর্বের কথা। তৎকালে বর্তমানের ন্যায় আগ্নেয়াস্ত্র, আধুনিক যানবাহন কিছুই আবিষ্কৃত হয় নাই। পদযুগলই একমাত্র ভরসা ছিল এক স্থান হইতে অন্যত্র গমন করিবার। ঈদৃশ কালে একদল ব্যক্তি যাইতেছিলেন এক শ্বাপদস্বঙ্কুল জঙ্গলের মধ্য দিয়া। উক্ত জঙ্গল বাঘ-ভাল্লুকের জন্য অতি কুখ্যাত ছিল। প্রায়শই সেখানে উহাদের দেখা মিলিত। তো ভ্রমনকারী দলে দুইজন ব্যক্তির নিকট যথেষ্ট মূল্যবান কিছু স্বর্ণালঙ্কার ছিল। তাহারা দেখিলেন যে গতিতে তাহারা অগ্রসর হইতেছেন তাহাতে গন্তব্যে পৌছাইবার পূর্বেই সন্ধ্যা ঘনাইয়া আসিবার সম্ভাবনা প্রবল। ইহাতে তস্করের হাতে পড়িয়া না আবার স্বর্ণালঙ্কার হারাইতে হয়? এরূপ পরিস্থিতি বিবেচনা করিয়া তাহারা দুইজন দ্রুত অগ্রসর হইবার বন্দোবস্ত করিলেন। কিয়ৎক্ষন গত হইতে না হইতেই তাহারা দুইজন যথেষ্ট আগাইয়া গেলেন এবং সমগ্র দলকে পিছনে রাখিয়া গন্তব্যের খুব কাছাকাছি চলিয়া গেলেন ক্ষুদ্র সময়ের ব্যাবধানে। তাহারা যারপরনাই আনন্দিত হইয়া নিজেদের মধ্যে আলোচনা করিতে লাগিলেন, পশ্চাতে যাহারা পড়িয়া আছেন তাহারা নির্ঘাত আজ ব্যাঘ্রের কবলে পড়িয়া প্রাণ হারাইবেক। ইহা বলিতে না বলিতেই তাহারা দেখিলেন তাহাদের সামনে এক বৃহদাকৃতির ব্যাঘ্র আসিয়া উপস্থিত। উহাকে দেখিয়াই আন্দাজ করা যাইতেছিল যে, ক্ষুধার্ত হইয়া সে শিকারের অণ্বেষনে বাহির হইয়াছে। সামনে এরূপ ব্যাঘ্র দেখিয়া অগ্রগামী ব্যক্তিদ্বয় যারপরনাই ভীত হইয়া উঠিলেন এবং তাহারা কোনরূপ কর্ম নির্ধারনের পূর্বেই ব্যাঘ্র তাহাদের বধ করিয়া ক্ষুধার জ্বালা মিটাইয়া উক্ত স্থান পরিত্যাগ করিল। পড়িয়া রহিল ব্যক্তিদ্বয়ের পরিধেয় পোশাক এবং তাহাদের আহরিত স্বর্ণালঙ্কারসমূহ। অন্যদিকে পশ্চাতে পড়িয়া থাকা দল এক স্থানে তাঁবু খাটাইয়া রাত্রি যাপন করিয়া উষালগ্নে আবার যাত্রা শুরু করিল। পথিমধ্যে তাহারা উক্ত ব্যক্তিদ্বয়ের কাপড় এবং স্বর্ণালঙ্কার পাইয়া গেল। তাহারা তখন স্বর্ণালঙ্কারসমূহ নিজেদের মধ্যে বাটোয়ারা করিয়া পুনরায় গন্তব্যের দিকে যাত্রা করিলেন। আর ইহা হইতেই “আগে গেলে বাঘে খায়, পিছে গেলে সোনা পায়” বাগধারাটির উৎপত্তি হইলো।

যাহা হোক, উপরের গল্পটি সম্পূর্নরূপেই বানোয়াট। আমি ইহা আপন মনের মাধুরী মিশাইয়া ফাদিয়া বসিয়াছি। কিন্তু ইহার অন্তরালের ঘটনা এরূপই কিছু হইবে বলিয়া আমার বিশ্বাস। এখন পাঠক হয়তো ভাবিতেছেন হঠাৎ করিয়া আমি আপনাদিগকে বাগধারার শানে নযুল কেন ব্যাখ্যা করিতেছি, বলিতেছি তাহা এখনই। আজিকে এক ঘটনার কারনে আমরা হঠাৎ করিয়া এক বৃহদাকৃতির দল হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া পড়িয়াছি। আমরা গুটিকতক অর্বাচিন ভাবিতেছিলাম ইহাতে আমাদিগের অবস্থাও তো ওই বাঘে খাওয়া দুই ব্যক্তির ন্যায় হইয়া যাইবে। ভবিষ্যতে যখন ব্যাঘ্র আসিয়া আমাদিগের উপর হামলা চালাইবে তখন তো পিছনে পড়িয়া থাকা দল কিছুই করিবে না অথবা করিতে পারিবে না। কিন্তু না! আমাদিগের মধ্যে থাকা কতিপয় মহাজ্ঞানী-মহাজন আপনার ঈদৃশ ভ্রান্তি দূর করিতে সক্ষম হইয়াছেন। তাহারা বলিবার পড় আমি ভাবিয়া দেখিলাম, বাস্তবিকই আমি তো এরূপ চিন্তা করিয়া দেখি নাই। প্রথমত ব্যাঘ্র হইতেছে বিড়াল গোত্রীয় প্রাণী। আর কে না জানে বিড়াল অত্যন্ত আরামপ্রিয়। সুতরাং ব্যাঘ্রও তাহার ব্যতিক্রম নহে। উহা ভক্ষন করিবার উদ্দেশ্যে আসিলে উহাকে খানিক আদর করিয়া দিলে, বুকে-পিঠে হাত বুলাইয়া দিলে তাহা খুব সহজেই মানিয়া যাইবে (অথবা মানিয়া যাইবার কথা)! সঠিকরূপে তোয়াজ করিলে কে না মানে? অন্যত্র ইহা হইতেছে তৈলমর্দনের যুগ। সুতরাং ইহা ভাবিবার কোন কারনই নাই যে ব্যাঘ্রও ইহার ব্যতিক্রম হইবে। সুতরাং ব্যাঘ্রকে সঠিকরূপে তৈলমর্দন করিতে পারিলেই কেল্লাফতে। ব্যাঘ্র তো আমাদিগকে ভক্ষন করিবেই না বরং ইহাকে ব্যাবহার করিয়া আরো কর্ম সম্পাদন করিয়া লওয়া যাইবে। ঈদৃশ কর্ম সম্পাদনকালে ব্যাঘ্র হয়তো কিঞ্চিত কোপ প্রদর্শন করিয়া দুই একজনকে আচড় দিয়া বসিতে পারে, উহা কোন ব্যাপার না। ভক্ষন যে করিতেছে না ইহাই তো বেশি। এরূপ আরো বিভিন্ন সম্ভাবনা আমাদের নিকট আসিয়া উপস্থিত হইবে যদি আমরা দলছুট হইয়া আগাইয়া যাই। তখন পিছনে পড়িয়া থাকা দলই বরং আমাদিগের দিকে তাকাইয়া বলিবে,

“আগে গেলে সব পায়, পিছে গেলে ধরা খায়!”

‘মুক্তবুদ্ধি’র চর্চা এবং একজন বোকা মানব


বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রবেশ করিয়াছি তাহা প্রায় আড়াই বৎসর হইয়াছে। সবকিছু সঠিক পথে চলিলে হয়তো দেখা যাইবে আর দেড় কি দুই বৎসরের মাথায়ই আপন নামের শেষে প্রকৌশলী শব্দটি বসাইবার অধিকার অর্জন করিয়া ফেলিব। আহা, কি আনন্দের ব্যাপারই না হইবে তাহা। কিন্তু একটি দুঃখ কিন্তু মনে সবসময়ই তাড়াইয়া বেড়াইবে, তাহা হইলো; এমনই এক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্জন করিলাম যেখানে ‘মুক্তবুদ্ধি’র চর্চার কোন সুযোগই নাই। সারাক্ষন সকলেই শুধু পড়িবার কথাই বলে। ইহা কোন কথা হইলো? বিশ্ববিদ্যালয়ে আসিয়া যদি আপন জ্ঞান চতুর্দিকে বিকশিত করার সুযোগ না’ই পাই তাহা হইলে আর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কি সার্থকতা?

ইহাই ভাবিতাম আমি চার-পাঁচদিন পূর্বেও। কিন্তু হঠাৎই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পদের কিছু রদবদল ঘটিয়া গেল। ভাবিলাম, দেখা যাক এইবার কি হয়। নতুন ব্যক্তি, নিশ্চয়ই নতুন কিছু করিবেন। আমার ধারনা যে একেবারেই সঠিক তাহা একদিন গত হইতে না হইতেই প্রমান হইয়া গেল। ছাত্রাবাসে দেখিলাম উপাচার্য মহোদয় হইতে বার্তা আসিয়াছে,”আর কোন বাঁধা নাই; এখন সকল ছাত্র ‘মুক্তবুদ্ধি’র চর্চা করিতে পারিবে। আমাদিগের বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সঠিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ তৈয়ারি করিতে হইবে।” ইহা জানিয়া আমি যারপরনাই প্রীত হইয়া গেলাম। ভাবিলাম, যাক এইবার বুঝি আমার অপূর্ন সাধ কিঞ্চিত মিটিবে। কেননা কুয়েটের প্রোগ্রামিং প্রতিযোগীতা বিষয়ক সংগঠন SGIPC এবং আলোকচিত্রী সমিতি KUETPS এই দুইটির প্রতিষ্ঠার সাথেই আমি প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত। এইবার আর পায় কে? প্রতিষ্ঠা যখন করিয়াছি আর ‘মুক্তবুদ্ধি’র চর্চাও যখন উন্মুক্ত, তখন তো এইবার কোমরে দড়ি বাঁধিয়া নামিতে হইবে। শুধু প্রতিষ্ঠা করিলেই কি চলিবে নাকি, তাহাদের শক্ত অবস্থানে লইয়া যাইতে হইবে না। মনে মনে ইহাও ভাবিতেছিলাম, দুই দুইটা ‘মুক্তবুদ্ধি’র চর্চা হয় এমন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন আমি, উপাচার্য খুশি হইয়া আমাকে বিশেষ কোন পুরষ্কার না দিয়া দেন। ইহা ভাবিতে ভাবিতে আমি যখন ছাত্রাবাসের বিভিন্ন কক্ষে ঘুরিয়া বেড়াইতেছিলাম তখন দেখি বিভিন্নজন বিভিন্ন অপপ্রচার চালাইতেছে এই ‘মুক্তবুদ্ধি’র চর্চার উন্মুক্তকরন লইয়া। মনে মনে ভাবিলাম, এই সকল ছাত্র হইতে দেশ কি পাইবে? ইহারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্পন করিয়াছে, অথচ এখনো বাল্যকালের বিদ্যালয়ের মনোভাব ছাড়িতে সমর্থ হয় নাই। হায় কি দুঃখ!

দুঃখিত মন লইয়া আনসারী ভাই এর দোকনে নাস্তা করিতে যাইয়া দেখি এলাহী কান্ড। ছাত্ররা দলে দলে ‘মুক্তবুদ্ধি’র চর্চা করিতে নামিয়া পড়িয়াছে। তাহারা দেখি রীতিমতো মিছিল করিয়া ইহা উদযাপন করিতেছে। ইহা দেখিয়া আমার দুঃখ গায়েব হইয়া গেল। এত মানুষ ‘মুক্তবুদ্ধি’র চর্চা করিতে নামিয়াছে, আর আমি কিনা কিছু কূপমন্ডুক এর কথায় মন খারাপ করিয়া ঘুরিতেছি। কি বোকা আমি!

খানিক সময় মিছিলটি পর্যবেক্ষন করিবার পর বুঝিতে পারিলাম ইহা একটি রাজনৈতিক মিছিল। এইবারে ধন্দে পড়িয়া গেলাম। আমি তো জানতাম আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক কোন কর্মকান্ড চালানো সম্পুর্ন নিষিদ্ধ। তাহলে এই মিছিল কোন স্পর্ধায় বাহির করিল তাহারা? ছাত্রাবাসে আসিয়া আবার খুজিলাম যে রাজনীতিও কি আমাদিগের বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্মুক্ত করা হইয়াছে নাকি? কিন্তু কিছুই খুজিয়া পাহিলাম না। মনে একটা ক্ষীন সন্দেহ উঁকি দিতেছিল, ইহার সাথে আবার ‘মুক্তবুদ্ধি’ চর্চার কোন সম্পর্ক নাই তো? কালবিলম্ব না করিয়া অন্তর্জাল জগতে আসিয়া উঁকি দিলাম ছাত্র রাজনীতি বিষয়ে। বিস্ময়ের সাথে লক্ষ করিলাম, এই বিষয়ে যাহাই দেখি সব বাংলাদেশ সম্পর্কিত। ইহা আবার কি ব্যাপার? খানিক সময় ইহা লইয়া মাথা খাটাইবার পর মনে হইল যে, রাজনীতিও বোধহয় ‘মুক্তবুদ্ধি’ চর্চারই একটা অংশ। কতিপয় জ্ঞানী ব্যক্তির সহিত আলাপ করিয়া জানিতে পারিলাম যে, রাজনীতি নাকি অতি উচ্চশ্রেনীর ‘মুক্তবুদ্ধি’র চর্চা। আর তাহাতেই সকলে এত আনন্দিত হইয়া ‘মুক্তবুদ্ধি’র চর্চা করিতে ঝাপাইয়া পড়িয়াছে। আবারো আমি যে এক গন্ডমূর্খ, তাহার প্রমান পাইলাম।

ভাবিতেছি আর বিলম্ব করা চলে না। যেহেতু আমি কুয়েটে ‘মুক্তবুদ্ধি’ চর্চার একজন অগ্রনী সৈনিক সেহেতু এক্ষনই নতুন কোন রাজনৈতিক সংগঠন তৈয়ারি করিয়া মাঠে নামিয়া যাইতে হইবে। নতুবা আমার পুরষ্কারটা না অন্য কেহ ছিনাইয়া লইয়া যায়!

Bookmark and Share

ছাত্র রাজনীতি, গুজব এবং একটি বিশ্ববিদ্যালয়


মূল রচনায় যাইবার পূর্বেই আপনাদিগকে আপন বাল্যকালে পঠিত একটি গদ্য বলিয়া লই।

সে অনেক কাল পূর্বের কথা। তৎকালে রাজা-রানীদের যুগ অতিবাহিত হইতেছিল। সেই কালেরই কোন এক রাজার কাহিনী। রাজার ছিল বৃহদাকৃতির রাজত্ব। রাজ্যের সকলেই সেইখানে সুখে-শান্তিতে বসবাস করিতেছিল। তথাপিও দিনকতক ধরিয়া রাজ্যের সকলেরই আনন্দের মাত্রা কিঞ্চিত অধিক বলিয়াই প্রতীয়মান ছিল। তাহার কারন হইতেছে অতীব শীঘ্রই মহামন্য রাজা মশাই এর ঘর আলো করিয়া তাহার প্রথম সন্তান এর জন্ম হইতে যাইতেছে। রাজবদ্যি সঠিক দিনক্ষণ জানাইয়া দিয়াছেন। সকলেই অধীর আগ্রহের সহিত অপেক্ষা করিতেছিল সেই দিনটির জন্য। দেখিতে দেখিতেই সেই শুভদিন আসিয়া উপস্থিত হইল। কিন্তু নতুন নবজাতককে দেখিয়া উপস্থিত সকলেই কমবেশি মনক্ষুন্ন হইলেন। তাহার কারন আর কিছুই নহে, নবজাতকের গাত্রবর্ণ স্বাভাবিকের চাইতে কিঞ্চিত অধিক কৃষ্ণ। উক্ত সন্দেশটি যখন রাজপ্রাসাদ হইতে বাহিরে একান ওকান ঘুরিয়া প্রচার হইল তখন এইরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হইল।

প্রথম কানে গেল, রানীমা এক কৃষ্ণ বর্ণের পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়াছেন। উহা যখন প্রথম কান ঘুরিয়া দ্বিতীয় কানে গেল তখন তাহা হইল, রানীমা এক অতীব কৃষ্ণ বর্ণের সন্তানের জন্ম দিয়াছেন। তৃতীয় কানে গেল, রানীমা কুচকুচে কৃষ্ণ বর্ণের এক সন্তানের জন্ম দিয়াছেন। চতুর্থ কানে তাহা হইল, রানীমা একেবারে কাকের ন্যায় কৃষ্ণ বর্ণের এক সন্তানের জন্ম দিয়াছেন। পঞ্চম কানে, রানীমা এমনতর কৃষ্ণ বর্ণের এক সন্তানের জন্ম দিয়াছেন যে তাহাকে দেখিয়া কাক বলিয়া ভ্রম হয়। ষষ্ঠ কানে, রানীমার গর্ভ হইতে এক কাকের জন্ম হইয়াছে। সপ্তম কানে, রানীমার গর্ভ হইতে একটি কাকের জন্ম হইয়াছে এবং তাহা উড়িয়া গিয়াছে। আর শেষ পর্যন্ত অষ্টম কানে যাইয়া তাহা হইলো, রানীমার গর্ভ হইতে এক ঝাঁক কাক বাহির হইয়া উড়িয়া চলিয়া গিয়াছে।

এইবারে আমার মূল রচনায় আসিতেছি। যাহারা বাংলাদেশে অবস্থান করিতেছেন এবং যাহারা করিতেছেন না তাহারাও বিভিন্ন সন্দেশপত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশের বর্তমান ছাত্র রাজনীতি সম্পর্কে অবগত আছেন। ইহা বাংলাদেশের এক অমূল্য সম্পদ। ইহার চর্চার কারনেই হয়তো আজ আমরা একটি স্বাধীন দেশে বসবাস করার অধিকার অর্জন করিয়াছি। সুতরাং দেশের কল্যাণে ইহার অবদান অস্বীকার করিবার উপায় কোনরূপেই আমাদিগের হস্তে নাই। কোন এককালে এই দেশে বিভিন্ন শাসকরা বিভিন্ন রূপে অনাচার চালাইয়াছেন। সেইকালে এই ছাত্রগণই আমাদের দেশকে মুক্ত করিয়াছে। ইহা যে আমাদের দেশের কত বড় সম্পদ তাহার একটা উদাহরন দেই। আপনি যদি বিখ্যাত অনুসন্ধান যন্ত্র Google এর মাধ্যমে এই বিষয়ে কোন তথ্যের খোঁজ করেন তাহা হইলে যে ফলাফল গুলো আসিবে তাহার অধিকাংশই বাংলাদেশ সম্পর্কিত। কিন্তু বর্তমানে আমরা একটি স্বাধীন দেশে বসবাস করিতেছি, তাহা বলিয়া কি আমাদিগের ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজন ফুরাইয়া গিয়াছে? অবশ্যই তাহা নহে। নিম্নে আমি বর্তমান কালে আমাদিগের দেশে ছাত্র রাজনীতির কি অপার প্রয়োজনীয়তা রহিয়াছে সেই বিষয়ে আলোকপাত করিবার চেষ্টা করিতেছি।

আপনারা সকলেই জানিয়া থাকিবেন যে, বর্তমানে জনসংখ্যাকে বাংলাদেশের প্রথম এবং প্রধান সমস্যারূপে চিহ্নিত করা হইয়াছে। জনসংখ্যা এতটাই বৃদ্ধি পাইয়াছে যে আজকাল শিশু-কিশোরদের ক্রীড়া করিবার মাঠ তো দূরের কথা, মানুষের বসবাস করিবার স্থানই খুজিয়া পাওয়া দুষ্কর হইয়া উঠিয়াছে। সেই দিন হয়তো খুব বেশি দূরে নাই যেদিন উপর হইতে তাকাইলে শুধু মানুষই দেখা যাইবে, মানবের দেয়াল ভেদ করিয়া মৃত্তিকা দেখিবার কোন উপক্রম থাকিবে না। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে যাইয়া সরকারের অবস্থা হইয়াছে একেবারে মধ্য সমুদ্রে পতিত পিপিলিকার ন্যায়। এমতাবস্থায় সরকারকে সহায়তা করিতে ছাত্র সমাজ না আগাইয়া আসিলে আর কাহারা আগাইয়া আসিবে? হইয়াছেও তাহাই। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষা গ্রহনরত ছাত্ররা হইতেছে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানরা। যেকোন বিষয়ই তাহারা অত্যন্ত দ্রুততার সহিত বুঝিতে পারঙ্গম। এইখানেও তাহারা বুঝিতে পারিয়াছে যে, দেশের এই জনসংখ্যা সমস্যার যদি সমাধান না করা যায়, তাহা হইলে এই দেশ আর বসবাসের যোগ্য থাকিবে না। সেই মর্মে তাহারা একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করিয়াছে। তাহা হইলো, বর্তমানে যে জনসংখ্যা আছে তাহা কমাইতে হইবে। এই ক্ষেত্রে কি করা যায়? হ্যা, পাঠক ঠিকই ধরিয়াছেন, যাহারা জীবিত আছে তাহাদের খতম করিয়া দিলেই তো ল্যাঠা চুকিয়া যায়। বিচক্ষন ছাত্র রাজনীতিকরাও তাহাই ভাবিয়াছেন এবং এই মহৎ কর্মেই তাহাদের সময় ব্যয় করিয়া দেশের এক অশেষ উপকার সাধন করিতেছেন। তথাপিও কিছু কিছু ব্যক্তি অর্বাচিন এর ন্যায় বক্তব্য দিতেছেন যে, ছাত্ররা বেপরোয়া হইয়া উঠিয়াছে, তাহাদের এই মূহুর্তে থামানো উচিৎ। কিন্তু ইহা বলিয়া তাহারা যে তাহাদের জ্ঞানের মাঝে এক সুবিশাল ঘাটতি রহিয়াছে ইহাই প্রমান করিতেছেন তাহা বুঝিতে সমর্থ হইতেছেন না। শুধু খতম করিয়াই নয়, এই সকল মহান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আরো একটি চমৎকার পন্থা অবলম্বন করিতেছেন। তাহা হইতেছে বিভিন্ন নারীদের (বিশেষ করিয়া তাহাদেরই সহপাঠিনীদের) বিভিন্ন রূপে অপদস্থ করিতেছেন। ইহাতে অনেক নারীই তাহাদের মূল্যহীন জীবন দীর্ঘায়িত করার কোনরূপ বাসনা আর পোষন করিতেছে না। ইহাতে যেমন দেশের একজন মানুষ কমিয়া উপকার হইলো, তেমনি ভবিষ্যতেও আরো কিছু জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা হইতেও দেশ আশঙ্কামুক্ত হইলো। কতই না সুগঠিত চিন্তা এই সকল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের। আহা, মধু মধু!

শুধু কি এইখানেই শেষ? না না, তাহা হইবে কেন। আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, ‘দৌড়’ স্বাস্থের জন্য একটি অত্যন্ত উপকারী ব্যায়াম। কিন্তু নাগরিক এই ব্যস্ত জীবনে নিয়ম করিয়া দৌড়াইবেন এমন সময় কাহার আছে। সেই কারনেই ছাত্র রাজনীতিকরা সকলের সুস্বাস্থ সুনিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থা করেছেন ‘ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া’ নামক এক চমকপ্রদ ব্যবস্থার। ইহা একটি অতিশয় সুন্দর বন্দোবস্ত। এই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মাঝে পড়িলে আপনাকে চাচা, আপন প্রাণ বাঁচা; এই বাক্যটি মনে করিয়া দৌড়াইতেই হইবে। ইহাতে একদিকে যেমন আপনার ব্যায়ামও হইবে অন্যদিকে তেমন মনও ভালো থাকিবে। কেননা সকলেই অবগত, সুস্থ দেহ; সুন্দর মন।

আমি নিজে যে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অধ্যয়নরত তাহাতে অতীতে ছাত্র রাজনীতি বিদ্যমান ছিল না। ছাত্র-ছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আসিয়া তাহাদের শিক্ষার পাট চুকাইয়া যাইত মাত্র চারটি বছরে। কিন্তু ইহাতে যে এক বিপদের সম্ভাবনা রহিয়াছে তাহা ছাত্র রাজনীতিকগণ ব্যতিত আর কেহ আঁচ করিতে সমর্থ হন নাই। ভাবিতেছেন ইহাতে আবার কিরূপ বিপদ উপস্থিত হইতে পারে? তাহা হইলে বলিতেছি। একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্পন করে যখন তাহার বয়স অষ্টাদশ কিংবা উনবিংশ বৎসরহয়। মাত্র চারটি বছরে শিক্ষা জীবনের সমাপ্তি ঘটিলে দ্বাবিংশ অথবা ত্রয়োবিংশ বৎসর বয়স হইতে না হইতেই সে অর্থ উপার্জনের সক্ষমতা অর্জন করিয়া ফেলে। আর এইখানেই বিপত্তি ঘটিয়া যায়। বর্তমান যুগে দূরালাপনি অত্যন্ত সহজলভ্য হওয়ার দরূন বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকেই দেখা যায় জুটি পাতাইয়া আলাপচারিতায় মাতিয়া উঠিতে। ইহাদের মাঝে অনেকেই হয়তো শুধুমাত্র আনন্দের নিমিত্তে এই কর্মে সময় ব্যয় করিয়া থাকেন, কিন্তু সত্যিকার অর্থেই ভবিষ্যতের কথা ভাবিয়া একে অপরকে মন দিয়া বসিয়াছেন এমন জুটিও কম খুজিয়া পাওয়া যাইবে না। তাহা হইলে কি দাড়াইতেছে, সম্পর্ককে একটি সামাজিকভাবে স্বীকৃত বন্ধন দিতে হইলে বিবাহ করা আবশ্যক। কিন্তু আমাদের যে সমাজ ব্যবস্থা বিদ্যমান, তাহাতে পুরুষ যদি অর্থ উপার্জনে নিয়োজিত না থাকেন তবে বিবাহ করা চলে না। তাই যখন আমাদের এই সকল ছাত্ররা এত অল্প বয়সে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করিয়া কর্মজীবনে পদার্পন করিয়া স্বাবলম্বী হইতেছেন তখন তাহার মনের স্বপ্নের রানীকে সত্বর নিজ গৃহে আনার লক্ষ্যে বিবাহ করিবার কথা ভাবিতেছেন। আপনারা হয়তো ভাবিতেছেন ইহাতে সমস্যা কোথায়। হ্যা, সমস্যা আছে বৈকি। জনসংখ্যা সমস্যা নিরসনে সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। তাহার মধ্যে বাল্যবিবাহ রোধও একটি। পূর্বে বিবাহের যে ন্যূনতম বয়স নির্ধারন করা হইয়াছিল শুনিতেছি বর্তমানে তাহা আরো বাড়াইয়া দেয়া হইবে। কিন্তু সত্যি কথা বলিতে কি, অর্থোপার্জনক্ষম একজন ব্যক্তির যখন বিবাহ করিবার বাসনা হইবে তখন কি এই আইন আর তাহাকে নিরস্থ করিতে পারিবে? সেই ক্ষেত্রে একটাই প্রতিকার, বিশ্ববিদ্যালয় জীবন যথাসম্ভব দীর্ঘায়িত করিতে হইবে। পারিলে শেষই হইতে দেওয়া যাইবে না। এক্ষেত্রে ছাত্র রাজনীতি এক অমূল্য ভূমিকা পালন করিতেছে। ভবিষ্যতের এই সমস্যাটি পূর্বেই অনুধাবন করিয়া তা প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য আমি এই সকল রাজনীতিকদের প্রতি কৃতজ্ঞ।

খালি করিয়া যাইতেছে কুয়েটের ছাত্ররা

কিছুদিন পূর্বেই এই রাজনীতির জের ধরিয়া আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ হইয়া গিয়াছে। কিন্তু ইহা যে দেশের এক অমোঘ উপকার সাধনের নিমিত্তে করা হইয়াছে তাহা অনেকেই বুঝিতে সমর্থ হয় নাই, আর তাই তাহারা বিভিন্নরূপে কোলাহল তৈয়ারি করিয়াছে কবে বিশ্ববিদ্যালয় খুলিবে এই বলিয়া। সেই সকল অজ্ঞানীরা বিভিন্নরূপে গুজব ছড়াইয়াছেন যে, বিশ্ববিদ্যালয় খুলিয়া যাইতেছে। তাহাদের গুজব কতটা বৃহৎ রূপ ধারন করিয়াছিল তাহা নিশ্চয় পাঠক রচনার শুরুতেই আমি যে গদ্যটি লিখিয়াছিলাম তাহা থেকে ধারনা করিতে পারিতেছেন। এইসব গুজব প্রচারকারীগণ ধারনা করিয়াছিলেন গুজবে কান লাগাইয়া সকল শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত হইবে আর তখন বিশ্ববিদ্যালয় আপনাতেই খুলিয়া যাইবে। কিন্তু দেশের এই ক্ষতিটি তাহারা কেন করিতে চাহিতেছেন? ইহাতে নিশ্চয়ই তাহাদের কোন গুপ্ত উপকার সাধিত হইবে। না হইলে নিজের দেশের এত বড় ক্ষতিসাধন তাহারা কেন করিতে চাহিবেন? কিন্তু তাহাদেরকে বলিতেছি, গুজব ছড়াইয়া কোন লাভ হইবে না। কারন ইহা আমাদিগের মঙ্গলের নিমিত্তেই করা হইয়াছে। আর আপন ভালো যদি কেহ না বুঝিতে পারে তখন তাহাকে কি বলিব। কেননা বলা হইয়া থাকে, আপন ভালো পাগলেও বোঝে।

পুনশ্চ: সম্প্রতি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় খুলিয়া দেয়ার ঘোষনা দেওয়া হইয়াছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছাত্র রাজনীতিকগণ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করিয়া আবারো দেশের উপকার সাধনে নিমিত্ত হইবেন।

Bookmark and Share