Posts from the ‘সাম্প্রতিক ভাবনা’ Category

‘ফেসবুক’ বন্ধ; আরও একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ


সম্প্রতি বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগের অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি বুনটস্থান; ‘ফেসবুক’ বন্ধ করিয়া দেওয়া হইয়াছে। জনমনে ইহা লইয়া যারপরনাই ক্ষোভ পরিলক্ষিত হইতেছে। অধিকাংশই (সকলেই নয়) বলিতেছেন ইহা কিরূপ কর্ম হইল। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়িবার প্রতিশ্রুতি দিয়া ক্ষমতারোহন করিয়া এখন ডিজিটাল যোগাযোগ মাধ্যমকেই রুদ্ধ করিয়া দিতেছে! সরকারের ‘ফেসবুক’ বন্ধের এই সিদ্ধান্তে বাংলাদশের face এ যে কালিমা পড়িল এবং যে সকল ফ্যাসাদ হইল তাহা সরকার কিরূপে মোচন করিবে? ইহা তো আরেকটি মৌলবাদী দেশের (নাম উল্লেখ করিতে চাহিতেছি না) ন্যায় হইয়া গেল। ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু আমার মনে হয় জনগন আরো একটি বার সরকারকে ভুল বুঝিয়াছেন। সরকার সর্বদাই দেখিয়া আসিতেছে কিসে জনগনের মঙ্গল হয়, ডিজিটাল বাংলাদেশ এর স্বপ্ন সহজে বাস্তবায়ন করা যায়। সে লক্ষ্যে যে সরকার এক কালজয়ী সিদ্ধান্ত গ্রহন করিয়াছে তাহা আমি আমার পূর্বের রচনাতে উল্লেখ করিয়াছি। অত্র রচনাতেও ডিজিটাল বাংলাদেশ এর সেই স্বপ্ন নিয়ে আরো কিছুটা আলোচনা করার প্রয়োজনীয়তা দেখিতেছি।

গত ১৫ই জৈষ্ঠ্য (২৯ মে) যখন ‘ফেসবুক’ বন্ধ করিয়া দেওয়া হয় তখন আমি রেলগাড়িতে অবস্থান করিতেছিলাম। স্বাভাবিকভাবেই আমি ‘ফেসবুক’ বন্ধের ব্যাপারে অবগত ছিলাম না। কিন্তু কিছুক্ষন এর মাঝেই আমি আমার ভ্রাম্যমান দূরালাপনীতে বেশ কয়েকটি ক্ষুদে বার্তা পেয়ে গেলাম, বাংলাদেশে ‘ফেসবুক’ বন্ধ করিয়া দেওয়া হইয়াছে এই বিষয়ে। অনেকেই আমার সহিত যোগাযোগ করিয়া জিজ্ঞাসা করিল, এখন কি হইবে? আমি তখন মুচকি হাসি দিয়া বলিয়াছিলাম, ইহা কোন ঘটনা হইল। সরকার চলে ডালে ডালে, আমি চলি পাতায় পাতায়। ‘ফেসবুক’ এ প্রবেশ করা তো কোন ব্যাপারই নয়। কিন্তু বাড়িতে আসিয়া আপন গণনাযন্ত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন ছলচাতুরী করিয়া যখন ‘ফেসবুক’ এ প্রবেশ করিতে সক্ষম হইলাম তখনই আমি বুঝিতে পারিলাম কি ভুল উক্তিটাই না আমি করিয়াছিলাম! আসলে হইবে আমি চলি পাতায় পাতায় আর সরকার চলে শিরায় শিরায়। কেন? কারন ‘ফেসবুক’ এ প্রবেশ করিয়া দেখি আমার বেশ কিছু বন্ধু (যাহারা বাংলাদেশেই অবস্থান করিতেছে) সেখানে উপস্থিত। এর মাঝে সকলেই যে প্রযুক্তি বিষয়ে যথেষ্ঠ দক্ষ তাহা নয়। তাহলে? তখনই বুঝিতে পারিলাম আসলে সরকার কি করিতে চাহিতেছে। যদিও আমার অগ্রজ এক ভ্রাতা এই বিষয়ে সামান্য আভাষ দিয়াছেন ‘ফেসবুক’ এ, কিন্তু আমি এখানে তাহা কিঞ্চিত বিস্তারিত লিখিতেছি।

যখন অন্তর্জালে কোনকিছু আটকাইয়া দেওয়া হয় তখন তাহা ব্যাবহার করিতে চাহিলে bypass (বিকল্প পথ) করিতে হয়। এই বিকল্প পথের ব্যাপারটি কিঞ্চিত জটিল, বিশেষ করিয়া যাহাদের প্রযুক্তি জ্ঞান তুলনামূলক কম তাহাদের জন্য ইহা প্রায় অসাধ্য। এই কর্মে সবচেয়ে প্রচলিত ব্যাবস্থাটি হইতেছে, proxy ব্যাবহার করা। যাহাদের প্রযুক্তি জ্ঞান সীমিত তাহারা তো বটেই, যথেষ্ঠ প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন অনেকেও এই বিষয়ে অবগত নন। কিন্তু একটি কথা, প্রয়োজন কোন আইন মানে না। জনগনও এখানে কোন আইনের তোয়াক্কা না করিয়া শিখিয়া লইয়াছে এই জটিল ব্যাপারগুলো। আর তাহার ফল; সকলেই ‘ফেসবুক’ ব্যাবহার করিতেছে, কিন্তু একটু ভিন্ন পন্থায়। ইহাতে বেশ কয়েকটি লাভ হইল; এক, যাহারা ‘ফেসবুক’ চিনিত না তাহারা চিনিয়া ফেলিল পত্রিকার সংবাদ এর সুবাদে, দুই, যাহারা ‘ফেসবুক’ ব্যাবহার করেন তাহারা নতুন একটি প্রাযুক্তিক বিষয় সম্পর্কে অবগত হইল, তিন, যাহারা proxy ব্যাবহার করিয়া ‘ফেসবুক’ এ প্রবেশ করিয়াছেন; তাহারা অন্য কোন দেশের ‘ফেসবুক’ এর মাধ্যমে প্রবেশ করিয়াছেন যাহাদের অনেকেরই প্রধান ভাষা ইংরেজী নয় (যেমন, জার্মানি, ফ্রান্স, ইউক্রেন)। সেই সুবাদে সেই দেশের ভাষা সম্পর্কেও খানিকটা জানা হইয়া গিয়ছে। আপাতত আমি এক ঢিলে তিন পক্ষী দেখিতেছি, কিন্তু আমার বিশ্বাস সরকার এক ঢিলে শতশত পক্ষী মারিয়াছে, যাহা আপন ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে আসিতেছে না।

এখন পাঠক প্রশ্ন করিতে পারেন, তা সরকার যখন শিখাইতেই ইচ্ছুক তখন এইরূপে কেন? অন্যভাবে কি পারা যাইত না? এইখানে আমার একটি গদ্যের কথা মনে পড়িতেছে। ইহা হয়তো অনেকেই শুনিয়াছেন, তথাপিও বলিতেছি।

দুই ফাঁকিবাজ ভ্রাতাকে পড়াইবার দায়িত্ব লইয়াছেন এক শিক্ষক। তিনি বিভিন্ন প্রকারে চেষ্টা করিয়া যখন কোনভাবেই তাহাদের পাঠদান করিতে সক্ষম হইলেন না তখন তিনি বুদ্ধি করিয়া ভ্রাতাদ্বয়কে ফুলবাগানে বেড়াইতে লইয়া গেলেন। খানিক হাওয়া খাইবার পর তিনি জ্যেষ্ঠ ভ্রাতাকে বলিলেন, ওই বৃক্ষটিতে কইটি ফুল আছে কহিতে পারো? জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা উত্তরে কহিল, তিনটি। তখন শিক্ষক তাহাকে বলিলেন, বৃক্ষটিতে যদি আরো দুইটি ফুল ফুটে তাহা হইলে কয়টি হইবে কহিতে পারো? সাথে সাথে কনিষ্ঠ ভ্রাতা চিৎকার দিয়া উঠিল, দাদা উত্তর দিস্‌ না কিন্তু। মাস্টারমশাই আমাদিগকে গণিত শিখাইবার চেষ্টা করিতেছেন।

আমাদিগের অবস্থাও হইয়াছে ওই ফাঁকিবাজ ভ্রাতাদ্বয়ের ন্যায়। আমরা কোন ক্রমেই আর শিক্ষা গ্রহন করিতে চাহি না। তাই সরকার এই প্রচেষ্টা লইয়াছিল বলিয়া আমার বিশ্বাস। সৌভাগ্যক্রমে জনগন এই ফাঁকিটি ধরিতে না পারিয়া শিক্ষাগ্রহন করিয়া ফেলিয়াছে। আহা! জনগনকে লইয়া এতো চিন্তা করে এমন সরকার পৃথিবীর আর কোন দেশে খুজিয়া পাওয়া যাইবে? ইহা ভাবিয়াই আনন্দে আর গর্বে বুক একশ হাত ফুলিয়া উঠিতেছে। সাধেই কি আর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য বলিয়াছিলেন,

“সাবাস্‌ বাংলাদেশ; পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়

জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার; তবু মাথা নোয়াবার নয়।”


Bookmark and Share

মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পথে এক ধাপ


কিছুদিন মাত্র গত হইয়াছে মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের। সিংহ ভাগ শিক্ষার্থীই তাহাদের জীবনে প্রথমবারের মতো এত বৃহৎ আকৃতির কোন পরীক্ষাতে অবতীর্ন হইয়াছিল। দীর্ঘ দশ বছরের সাধনার ফসল তাহারা অবশেষে পাইয়াছে। অনেকেই হয়ত কাঙ্খিত ফল পাইয়া আনন্দে আত্মহারা, কেহ হয়তো কাঙ্খিত ফল না পাইয়া দুঃখে বাক্যহারা আবার কেহবা অকৃতকার্য হইয়া গৃহ হইতে বহিষ্কৃত হইয়া সর্বহারা। বর্তমানে এই তিনটি দল প্রতীয়মান হইলেও আশা প্রকাশ করিতেছি সেই দিন আর বেশী দূরে নাই যখন শুধুমাত্র দুইটি দলই টিকিয়া থাকিবে। কোন দুইটি? প্রথম এবং শেষ দুইটি! পাঠক বোধকরি এতক্ষনে ভ্রু কুঞ্চিত করিয়া ভাবিতেছেন, এই পাগলটি কি প্রলাপ বকিতেছে! তাহলে পাঠকদিগকে আমার অনুরোধ, একটু ধৈর্য ধারন করিয়া আমার রচনাটি পড়িয়া সমাপ্ত করিলে আশা করিতেছি আপনারাও আমার সহিত একমত হইবেন।

বর্তমান সরকার যখন ক্ষমতার আরোহন করার লক্ষ্যে নির্বাচনে অবতীর্ন হইয়াছিলেন তখন তাহারা নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ করিয়াছিলেন যে, বাংলাদেশকে; ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপে গড়িয়া তুলিবেন। বর্তমান যুগটাই হইতেছে কম্পিউটার তথা গণনাযন্ত্রের যুগ। এই যুগে উক্ত যন্ত্রটি ছাড়া বাঁচিয়া থাকা প্রায় অসম্ভব হইয়া পড়িয়াছে। হাটে-ঘাটে, গ্রামে-গঞ্জে, শহর-বন্দরে সকল স্থানে উক্ত যন্ত্রটির দৌড়াত্ম। যোগাযোগ হইতে শুরু করিয়া বিনোদন সকল ক্ষেত্রে আমরা এই যন্ত্রটির উপর পূর্ণমাত্রায় নির্ভরশীল হইয়া পড়িয়াছি। পরিস্থিতি এমন হইয়া গিয়াছে যে, পূর্বকালের বিভিন্ন সময়কে যেমন বিভিন্ন নামে আখ্যায়িত করা হইতো (যথা প্রাগৈতিহাসিক যুগ, অন্ধকার যুগ, মধ্যযুগ, আধুনিক যুগ) তেমনি করিয়া বর্তমান কালের নাম হইয়া গিয়াছে “ডিজিটাল যুগ”। এই ডিজিটাল যুগের বাসিন্দা হইয়া আমদিগের দেশও ডিজিটাল হইয়া যাইবে এবং পৃথিবীকে সম্মুখপানে আগাইয়া লইয়া যাইতে সহায়তা করিবে ইহাই তো হইবে সাধারন জনগনের কামনা। এতদ কারনে সংসদ নির্বাচনের সময় ইশতেহারের উক্ত আশ্বাস এক বৃহৎ ভূমিকা পালন করিবে তাহা বলাই বাহুল্য। হইয়াছেও তাহাই। জনগন তাহাদের মঙ্গল কিসে হয় তাহা খুবই ভালো বুঝিতে পারে সর্বকালেই।

নতুন সরকার ক্ষমতা হাতে লওয়ার পর সাধারন জনগন ভাবিয়াছিল এইবার হয়তো ঘরে ঘরে এই আধুনিক গণনাযন্ত্রটি পৌছাইয়া যাইবে। আকাশে-বাতাসে ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবাতাস বইবে। কেহ কেহ হয়তো ভাবিয়াছেলেন দেশের নাম পরিবর্তন করিয়া “গণপ্রজাতন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশ” রাখা হইবে। কিন্তু জনগন অত্যন্ত হতাশ হইয়া দেখিতেছিল যে সরকার এইরূপ কোন পদক্ষেপই গ্রহন করিতেছে না। তথাপি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, বিদ্যুত সমস্যা লইয়া জনগন যারপরনাই ত্যাক্ত-বিরক্ত হইয়া উঠিয়াছিল। কিন্তু সরকার তাহাদের পরিকল্পনা যে কতটা সুচিন্তিত ভাবে করিয়াছে তাহা সাধারন জনগন অনুধাবন করিতে পারঙ্গম হয় নাই। তাহার কারনেই এই সকল অসুহিষ্ণতা তৈয়ারি হইয়াছে। কিন্তু সম্প্রতি সরকার মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ করিয়া বুঝাইয়া দিয়াছে যে তাহারা জনগনকে মিথ্যা আশ্বাস দেন নাই। পাঠক হয়তো ভাবিতেছেন, ইহা কিরূপ কথা হইলো। মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলের সহিত ডিজিটাল বাংলাদেশের কি সম্পর্ক হইতে পারে? আছে, সম্পর্ক অবশ্যই আছে।

আপনারা যাহারা ডিজিটাল ব্যবস্থাটির সম্পর্কে কিঞ্চিত অবগত আছেন, তাহারা হয়তো জানিয়া থাকিবেন যে ডিজিটাল ব্যবস্থায় ১ এবং ০ ব্যতিত অন্য কিছু নাই। ব্যপারটা আপনাদের নিকট আজব ঠেকিলেও ইহাই সত্য। ধরা যাক আপনি ইংরিজী ভাষায় লিখিতে চাহিতেছেন ‘A’ তাহা হইলে ডিজিটাল মাধ্যমে তাহা ১০০০০০১ রূপে প্রতিস্থাপিত হইয়া যাইবে এবং গণনাযন্ত্র তাহা সেই রূপেই হিসাব করিবে। ইহাই ডিজিটাল ব্যবস্থার মূল তত্ব এবং ইহার উপরই দাড়াইয়া আছে বর্তমান যুগ। সরকার এই ব্যবস্থাটিকে এখন চাহিতেছেন সকল স্থানে ছড়াইয়া দিতে। সে লক্ষ্যে তাহারা অনেকদূর অগ্রসরও হইয়া গিয়াছেন। মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলই সে কথা বলিয়া দেয়। বর্তমানে দেশে যেভাবে পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয় সেই নিয়মে সর্বোচ্চ ফলাফল হইতেছে জিপিএ ৫। স্বভাবতই সর্বোচ্চ ফলাফল অর্জন করাটা দুষ্কর হইবারই কথা, কিন্তু যখন প্রায় ৯ লক্ষ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৮২,৯৬১ জন তা অর্জন করিয়া ফেলে তখন কিঞ্চিত অবাক হইতেই হয়। ইহা দেখিয়া আমিও অবাক হইয়াছিলাম। কিন্তু ক্ষনকাল এই বিষয় লইয়া ভাবিবার পরেই আমি বুঝিতে পারিলাম সরকার নিশ্চয়ই এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহন করিয়াছে। যেহেতু একজন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় কৃতকার্য হইয়াছে ইহার চেয়ে একজন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ ফলাফল অর্জন করিয়াছে ইহা শুনিতে অধিকতর উত্তম লাগে তাই সরকার নিশ্চয়ই সিদ্ধান্ত লইয়াছে যাহারা কৃতকার্য হইবে তাহাদের সকলকে সর্বোচ্চ ফলাফল প্রদান করা হইবে। অন্য সকলকে অকৃতকার্য করা হইবে। শিক্ষার্থীরা যতদিন না সর্বোচ্চ ফলাফল অর্জনে সক্ষম হইবে ততদিন পর্যন্ত তাহাদের কৃতকার্য হইবার কোন যোগ্যতাই নাই। তাহা হইলে দেখা যাইতেছে যে পরীক্ষার ফলাফলও ১ এবং ০ এই রূপ হইয়া গিয়াছে। আর তাহাই যদি হইয়া থাকে তাহা হইলে সরকারকে অবশ্যই সাধুবাদ জানাইতে হইবে, কেননা শিক্ষিত মানুষ ব্যতিত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া কখনোই সম্ভব হইবে না। এখন যদি সেই শিক্ষিত হইবার প্রথম সোপানটাই ডিজিটাল হইয়া যায়, তাহা হইলে তো শিক্ষার্থীগণ প্রথম হইতেই ডিজিটাল ব্যবস্থা কি তাহা বুঝিয়া যাইবে। আরো কয়েক সোপান আরোহন করিবার পর তাহারাই সম্পূর্নরূপে ডিজিটাল হইয়া যাইবে। যখন মানুষ সকলই ডিজিটাল; তখন বাংলাদেশ ডিজিটাল না হইয়া যাইবে কোথায়।

আমি তাই শিক্ষার্থীগণের নিকট আবেদন করিতেছি যেন তাহারা সরকারকে সহায়তা করে যাহাতে সরকার জিপিএ ৫ এবং অকৃতকার্য এর মধ্যবর্তী যে সকল ফলাফল আছে তাহাকে বাতিল বলিয়া ঘোষনা করিতে পারে। কেননা ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে এখন তাহারাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করিতেছে।

তথ্যঃ এসএসসির ফল: সাফল্যের আনন্দ দেশজুড়ে

Bookmark and Share

ছাত্র রাজনীতি, গুজব এবং একটি বিশ্ববিদ্যালয়


মূল রচনায় যাইবার পূর্বেই আপনাদিগকে আপন বাল্যকালে পঠিত একটি গদ্য বলিয়া লই।

সে অনেক কাল পূর্বের কথা। তৎকালে রাজা-রানীদের যুগ অতিবাহিত হইতেছিল। সেই কালেরই কোন এক রাজার কাহিনী। রাজার ছিল বৃহদাকৃতির রাজত্ব। রাজ্যের সকলেই সেইখানে সুখে-শান্তিতে বসবাস করিতেছিল। তথাপিও দিনকতক ধরিয়া রাজ্যের সকলেরই আনন্দের মাত্রা কিঞ্চিত অধিক বলিয়াই প্রতীয়মান ছিল। তাহার কারন হইতেছে অতীব শীঘ্রই মহামন্য রাজা মশাই এর ঘর আলো করিয়া তাহার প্রথম সন্তান এর জন্ম হইতে যাইতেছে। রাজবদ্যি সঠিক দিনক্ষণ জানাইয়া দিয়াছেন। সকলেই অধীর আগ্রহের সহিত অপেক্ষা করিতেছিল সেই দিনটির জন্য। দেখিতে দেখিতেই সেই শুভদিন আসিয়া উপস্থিত হইল। কিন্তু নতুন নবজাতককে দেখিয়া উপস্থিত সকলেই কমবেশি মনক্ষুন্ন হইলেন। তাহার কারন আর কিছুই নহে, নবজাতকের গাত্রবর্ণ স্বাভাবিকের চাইতে কিঞ্চিত অধিক কৃষ্ণ। উক্ত সন্দেশটি যখন রাজপ্রাসাদ হইতে বাহিরে একান ওকান ঘুরিয়া প্রচার হইল তখন এইরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হইল।

প্রথম কানে গেল, রানীমা এক কৃষ্ণ বর্ণের পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়াছেন। উহা যখন প্রথম কান ঘুরিয়া দ্বিতীয় কানে গেল তখন তাহা হইল, রানীমা এক অতীব কৃষ্ণ বর্ণের সন্তানের জন্ম দিয়াছেন। তৃতীয় কানে গেল, রানীমা কুচকুচে কৃষ্ণ বর্ণের এক সন্তানের জন্ম দিয়াছেন। চতুর্থ কানে তাহা হইল, রানীমা একেবারে কাকের ন্যায় কৃষ্ণ বর্ণের এক সন্তানের জন্ম দিয়াছেন। পঞ্চম কানে, রানীমা এমনতর কৃষ্ণ বর্ণের এক সন্তানের জন্ম দিয়াছেন যে তাহাকে দেখিয়া কাক বলিয়া ভ্রম হয়। ষষ্ঠ কানে, রানীমার গর্ভ হইতে এক কাকের জন্ম হইয়াছে। সপ্তম কানে, রানীমার গর্ভ হইতে একটি কাকের জন্ম হইয়াছে এবং তাহা উড়িয়া গিয়াছে। আর শেষ পর্যন্ত অষ্টম কানে যাইয়া তাহা হইলো, রানীমার গর্ভ হইতে এক ঝাঁক কাক বাহির হইয়া উড়িয়া চলিয়া গিয়াছে।

এইবারে আমার মূল রচনায় আসিতেছি। যাহারা বাংলাদেশে অবস্থান করিতেছেন এবং যাহারা করিতেছেন না তাহারাও বিভিন্ন সন্দেশপত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশের বর্তমান ছাত্র রাজনীতি সম্পর্কে অবগত আছেন। ইহা বাংলাদেশের এক অমূল্য সম্পদ। ইহার চর্চার কারনেই হয়তো আজ আমরা একটি স্বাধীন দেশে বসবাস করার অধিকার অর্জন করিয়াছি। সুতরাং দেশের কল্যাণে ইহার অবদান অস্বীকার করিবার উপায় কোনরূপেই আমাদিগের হস্তে নাই। কোন এককালে এই দেশে বিভিন্ন শাসকরা বিভিন্ন রূপে অনাচার চালাইয়াছেন। সেইকালে এই ছাত্রগণই আমাদের দেশকে মুক্ত করিয়াছে। ইহা যে আমাদের দেশের কত বড় সম্পদ তাহার একটা উদাহরন দেই। আপনি যদি বিখ্যাত অনুসন্ধান যন্ত্র Google এর মাধ্যমে এই বিষয়ে কোন তথ্যের খোঁজ করেন তাহা হইলে যে ফলাফল গুলো আসিবে তাহার অধিকাংশই বাংলাদেশ সম্পর্কিত। কিন্তু বর্তমানে আমরা একটি স্বাধীন দেশে বসবাস করিতেছি, তাহা বলিয়া কি আমাদিগের ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজন ফুরাইয়া গিয়াছে? অবশ্যই তাহা নহে। নিম্নে আমি বর্তমান কালে আমাদিগের দেশে ছাত্র রাজনীতির কি অপার প্রয়োজনীয়তা রহিয়াছে সেই বিষয়ে আলোকপাত করিবার চেষ্টা করিতেছি।

আপনারা সকলেই জানিয়া থাকিবেন যে, বর্তমানে জনসংখ্যাকে বাংলাদেশের প্রথম এবং প্রধান সমস্যারূপে চিহ্নিত করা হইয়াছে। জনসংখ্যা এতটাই বৃদ্ধি পাইয়াছে যে আজকাল শিশু-কিশোরদের ক্রীড়া করিবার মাঠ তো দূরের কথা, মানুষের বসবাস করিবার স্থানই খুজিয়া পাওয়া দুষ্কর হইয়া উঠিয়াছে। সেই দিন হয়তো খুব বেশি দূরে নাই যেদিন উপর হইতে তাকাইলে শুধু মানুষই দেখা যাইবে, মানবের দেয়াল ভেদ করিয়া মৃত্তিকা দেখিবার কোন উপক্রম থাকিবে না। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে যাইয়া সরকারের অবস্থা হইয়াছে একেবারে মধ্য সমুদ্রে পতিত পিপিলিকার ন্যায়। এমতাবস্থায় সরকারকে সহায়তা করিতে ছাত্র সমাজ না আগাইয়া আসিলে আর কাহারা আগাইয়া আসিবে? হইয়াছেও তাহাই। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষা গ্রহনরত ছাত্ররা হইতেছে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানরা। যেকোন বিষয়ই তাহারা অত্যন্ত দ্রুততার সহিত বুঝিতে পারঙ্গম। এইখানেও তাহারা বুঝিতে পারিয়াছে যে, দেশের এই জনসংখ্যা সমস্যার যদি সমাধান না করা যায়, তাহা হইলে এই দেশ আর বসবাসের যোগ্য থাকিবে না। সেই মর্মে তাহারা একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করিয়াছে। তাহা হইলো, বর্তমানে যে জনসংখ্যা আছে তাহা কমাইতে হইবে। এই ক্ষেত্রে কি করা যায়? হ্যা, পাঠক ঠিকই ধরিয়াছেন, যাহারা জীবিত আছে তাহাদের খতম করিয়া দিলেই তো ল্যাঠা চুকিয়া যায়। বিচক্ষন ছাত্র রাজনীতিকরাও তাহাই ভাবিয়াছেন এবং এই মহৎ কর্মেই তাহাদের সময় ব্যয় করিয়া দেশের এক অশেষ উপকার সাধন করিতেছেন। তথাপিও কিছু কিছু ব্যক্তি অর্বাচিন এর ন্যায় বক্তব্য দিতেছেন যে, ছাত্ররা বেপরোয়া হইয়া উঠিয়াছে, তাহাদের এই মূহুর্তে থামানো উচিৎ। কিন্তু ইহা বলিয়া তাহারা যে তাহাদের জ্ঞানের মাঝে এক সুবিশাল ঘাটতি রহিয়াছে ইহাই প্রমান করিতেছেন তাহা বুঝিতে সমর্থ হইতেছেন না। শুধু খতম করিয়াই নয়, এই সকল মহান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আরো একটি চমৎকার পন্থা অবলম্বন করিতেছেন। তাহা হইতেছে বিভিন্ন নারীদের (বিশেষ করিয়া তাহাদেরই সহপাঠিনীদের) বিভিন্ন রূপে অপদস্থ করিতেছেন। ইহাতে অনেক নারীই তাহাদের মূল্যহীন জীবন দীর্ঘায়িত করার কোনরূপ বাসনা আর পোষন করিতেছে না। ইহাতে যেমন দেশের একজন মানুষ কমিয়া উপকার হইলো, তেমনি ভবিষ্যতেও আরো কিছু জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা হইতেও দেশ আশঙ্কামুক্ত হইলো। কতই না সুগঠিত চিন্তা এই সকল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের। আহা, মধু মধু!

শুধু কি এইখানেই শেষ? না না, তাহা হইবে কেন। আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, ‘দৌড়’ স্বাস্থের জন্য একটি অত্যন্ত উপকারী ব্যায়াম। কিন্তু নাগরিক এই ব্যস্ত জীবনে নিয়ম করিয়া দৌড়াইবেন এমন সময় কাহার আছে। সেই কারনেই ছাত্র রাজনীতিকরা সকলের সুস্বাস্থ সুনিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থা করেছেন ‘ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া’ নামক এক চমকপ্রদ ব্যবস্থার। ইহা একটি অতিশয় সুন্দর বন্দোবস্ত। এই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মাঝে পড়িলে আপনাকে চাচা, আপন প্রাণ বাঁচা; এই বাক্যটি মনে করিয়া দৌড়াইতেই হইবে। ইহাতে একদিকে যেমন আপনার ব্যায়ামও হইবে অন্যদিকে তেমন মনও ভালো থাকিবে। কেননা সকলেই অবগত, সুস্থ দেহ; সুন্দর মন।

আমি নিজে যে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অধ্যয়নরত তাহাতে অতীতে ছাত্র রাজনীতি বিদ্যমান ছিল না। ছাত্র-ছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আসিয়া তাহাদের শিক্ষার পাট চুকাইয়া যাইত মাত্র চারটি বছরে। কিন্তু ইহাতে যে এক বিপদের সম্ভাবনা রহিয়াছে তাহা ছাত্র রাজনীতিকগণ ব্যতিত আর কেহ আঁচ করিতে সমর্থ হন নাই। ভাবিতেছেন ইহাতে আবার কিরূপ বিপদ উপস্থিত হইতে পারে? তাহা হইলে বলিতেছি। একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্পন করে যখন তাহার বয়স অষ্টাদশ কিংবা উনবিংশ বৎসরহয়। মাত্র চারটি বছরে শিক্ষা জীবনের সমাপ্তি ঘটিলে দ্বাবিংশ অথবা ত্রয়োবিংশ বৎসর বয়স হইতে না হইতেই সে অর্থ উপার্জনের সক্ষমতা অর্জন করিয়া ফেলে। আর এইখানেই বিপত্তি ঘটিয়া যায়। বর্তমান যুগে দূরালাপনি অত্যন্ত সহজলভ্য হওয়ার দরূন বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকেই দেখা যায় জুটি পাতাইয়া আলাপচারিতায় মাতিয়া উঠিতে। ইহাদের মাঝে অনেকেই হয়তো শুধুমাত্র আনন্দের নিমিত্তে এই কর্মে সময় ব্যয় করিয়া থাকেন, কিন্তু সত্যিকার অর্থেই ভবিষ্যতের কথা ভাবিয়া একে অপরকে মন দিয়া বসিয়াছেন এমন জুটিও কম খুজিয়া পাওয়া যাইবে না। তাহা হইলে কি দাড়াইতেছে, সম্পর্ককে একটি সামাজিকভাবে স্বীকৃত বন্ধন দিতে হইলে বিবাহ করা আবশ্যক। কিন্তু আমাদের যে সমাজ ব্যবস্থা বিদ্যমান, তাহাতে পুরুষ যদি অর্থ উপার্জনে নিয়োজিত না থাকেন তবে বিবাহ করা চলে না। তাই যখন আমাদের এই সকল ছাত্ররা এত অল্প বয়সে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করিয়া কর্মজীবনে পদার্পন করিয়া স্বাবলম্বী হইতেছেন তখন তাহার মনের স্বপ্নের রানীকে সত্বর নিজ গৃহে আনার লক্ষ্যে বিবাহ করিবার কথা ভাবিতেছেন। আপনারা হয়তো ভাবিতেছেন ইহাতে সমস্যা কোথায়। হ্যা, সমস্যা আছে বৈকি। জনসংখ্যা সমস্যা নিরসনে সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। তাহার মধ্যে বাল্যবিবাহ রোধও একটি। পূর্বে বিবাহের যে ন্যূনতম বয়স নির্ধারন করা হইয়াছিল শুনিতেছি বর্তমানে তাহা আরো বাড়াইয়া দেয়া হইবে। কিন্তু সত্যি কথা বলিতে কি, অর্থোপার্জনক্ষম একজন ব্যক্তির যখন বিবাহ করিবার বাসনা হইবে তখন কি এই আইন আর তাহাকে নিরস্থ করিতে পারিবে? সেই ক্ষেত্রে একটাই প্রতিকার, বিশ্ববিদ্যালয় জীবন যথাসম্ভব দীর্ঘায়িত করিতে হইবে। পারিলে শেষই হইতে দেওয়া যাইবে না। এক্ষেত্রে ছাত্র রাজনীতি এক অমূল্য ভূমিকা পালন করিতেছে। ভবিষ্যতের এই সমস্যাটি পূর্বেই অনুধাবন করিয়া তা প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য আমি এই সকল রাজনীতিকদের প্রতি কৃতজ্ঞ।

খালি করিয়া যাইতেছে কুয়েটের ছাত্ররা

কিছুদিন পূর্বেই এই রাজনীতির জের ধরিয়া আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ হইয়া গিয়াছে। কিন্তু ইহা যে দেশের এক অমোঘ উপকার সাধনের নিমিত্তে করা হইয়াছে তাহা অনেকেই বুঝিতে সমর্থ হয় নাই, আর তাই তাহারা বিভিন্নরূপে কোলাহল তৈয়ারি করিয়াছে কবে বিশ্ববিদ্যালয় খুলিবে এই বলিয়া। সেই সকল অজ্ঞানীরা বিভিন্নরূপে গুজব ছড়াইয়াছেন যে, বিশ্ববিদ্যালয় খুলিয়া যাইতেছে। তাহাদের গুজব কতটা বৃহৎ রূপ ধারন করিয়াছিল তাহা নিশ্চয় পাঠক রচনার শুরুতেই আমি যে গদ্যটি লিখিয়াছিলাম তাহা থেকে ধারনা করিতে পারিতেছেন। এইসব গুজব প্রচারকারীগণ ধারনা করিয়াছিলেন গুজবে কান লাগাইয়া সকল শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত হইবে আর তখন বিশ্ববিদ্যালয় আপনাতেই খুলিয়া যাইবে। কিন্তু দেশের এই ক্ষতিটি তাহারা কেন করিতে চাহিতেছেন? ইহাতে নিশ্চয়ই তাহাদের কোন গুপ্ত উপকার সাধিত হইবে। না হইলে নিজের দেশের এত বড় ক্ষতিসাধন তাহারা কেন করিতে চাহিবেন? কিন্তু তাহাদেরকে বলিতেছি, গুজব ছড়াইয়া কোন লাভ হইবে না। কারন ইহা আমাদিগের মঙ্গলের নিমিত্তেই করা হইয়াছে। আর আপন ভালো যদি কেহ না বুঝিতে পারে তখন তাহাকে কি বলিব। কেননা বলা হইয়া থাকে, আপন ভালো পাগলেও বোঝে।

পুনশ্চ: সম্প্রতি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় খুলিয়া দেয়ার ঘোষনা দেওয়া হইয়াছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছাত্র রাজনীতিকগণ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করিয়া আবারো দেশের উপকার সাধনে নিমিত্ত হইবেন।

Bookmark and Share

অভ্র কর্তৃক আইন ভঙ্গ ও কিছু কথা…


সাম্প্রতিক সময়ে অন্তর্জাল জগত থেকে সংবাদপত্র সকল জায়গায় একটি বিষয় অত্যন্ত আলোচিত হইতেছে, তাহা হইলো “অভ্র কি বিজয় এর প্রতিলিপি।” প্রাথমিক দিককালে আমি ‘অভ্র’ এর প্রতি আপন দূর্বলতা পোষন করিয়াছি। ‘অভ্র’ এর সহশ্রষ্ঠা জনাব মেহেদি হাসান এর লেখনিকে বেদ বাক্য ধরিয়া ভাবিয়াছি, ‘অভ্র’ কে ‘বিজয়’ এর প্রতিলিপি বলিয়া জনাব মোস্তফা জব্বার কি নিচুতাই না দেখাইতেছেন! ‘অভ্র’ তে ব্যবহৃত ‘ইউনিবিজয়’ কোন প্রকারেই ‘বিজয়’ এর প্রতিলিপি হইতে পারে না। ইহা জনাব মোস্তফা জব্বার এর একটি অপপ্রচার মাত্র। জনাব মোস্তফা জব্বার এর এ সকল অপপ্রচার এর দরুন অন্তর্জাল জগতের অনেক বাসিন্দাই তাহার ওপর যারপরনাই বিরক্ত হইয়াছেন। তাহাকে বিভিন্ন ভাবে নিন্দা-মন্দ করিয়া বলিয়াছেন, বয়সের দরুন তাহার বুদ্ধি লোপ পাইয়াছে। তিনি বাংলা ভাষার বিকাশের পথে এক অন্তরায়। বাহান্ন সালে যেমন পাকিস্তানি সরকার বাংলা ভাষাকে দমাইয়া রাখিবার চেষ্টা করিয়াছিল, বর্তমানে জনাব মোস্তফা জব্বার তাহাই করিতেছেন। শুধু তাহাই নহে, অতি আগ্রহী ব্যক্তিগণ তাহাকে আপন পিতৃভ্রাতা এবং মাতৃভ্রাতা বলিয়া সম্বোধন করিয়াছেন। বলাই বাহুল্য, ইহা তাহার প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন স্বরূপ করা হয় নাই; তাহাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করিয়া করা হইয়াছে। অন্তর্জাল জগতের একজন সক্রিয় বাসিন্দা হওয়ার দরূন ইহা অনেক পূর্বেই আপন দৃষ্টিগোচর হইয়াছে এবং এতদিন ধরিয়া ইহা অত্যন্ত পুলকের সহিত উপভোগ করিতেছিলাম। কেননা পরিস্থিতি যথেষ্ঠ আনন্দদায়ক বলিয়াই প্রতিয়মান হইতেছিল আপনার নিকটে।
কিন্তু, আজিকে জনাব মোস্তফা জব্বার তাহার চমৎকার এক লেখনির (আইনের চোখে অভ্র ও অন্য কিছু বাংলা সফটওয়্যারের পাইরেসি) মাধ্যমে আপনার ধারনাকে ভুল বলিয়া প্রমান করিয়াছেন। তিনি সহজ বাক্যে বুঝাইয়া দিয়াছেন যে, জনাব মেহেদি হাসান তাহার কৌশলি লেখনির মাধ্যমে সাধারন জনগনকে কেমন করিয়া ভুল পথে চালিত করিবার অপচেষ্টা চালাইতেছেন। জনাব মোস্তফা জব্বার এর উক্ত সুখপাঠ্যটি আমার মুদিত চক্ষুপত্র উন্মোচন করিয়াছে এবং এখন আমি আশংকার সহিত লক্ষ্য করিলাম যে, জনাব মেহেদি হাসান জনগনকে ভ্রান্ত করার পথে কতখানি অগ্রসর হইয়া গিয়াছেন। জনাব মোস্তফা জব্বার আমাদের সামনে দেশে প্রবর্তিত মেধাস্বত্ব আইন তুলিয়া ধরিয়াছেন এবং সে আইন অনুসারে আমাদের ন্যায় অর্বাচিনদের ইহা বুঝাইবার প্রচেষ্টা লইয়াছেন যে ‘ইউনিবিজয়’ কোন কোন ক্ষেত্রে মেধাস্বত্ব লঙ্ঘন করিয়াছে। যাহারা আমার এই দীর্ঘ লেখায় বিরক্ত হইতে আরম্ভ করিয়াছেন অথবা বিরক্ত হইয়া গিয়াছেন, তাহাদের নিকট আমার অনুরোধ কিঞ্চিত ধৈর্য্য ধারন করিয়া আমার এ লেখাটি পড়িয়া সমাপ্ত করুন। ইহাতে আপনার উপকার বই অপকার হইবে না। নিচে আমি মেধাস্বত্ব আইন ও তার প্রয়োগ সম্পর্কে খানিকটা আলোকপাত করিবার চেষ্টা করিতেছি।
মেধাস্বত্ব আইন ২০০০ (২০০৫ সালে সংশোধিত) অনুসারে, ধারা ২(৮)(ঙ) তে মেধাস্বত্ব লঙ্ঘনকারী অনুলিপির সংজ্ঞা হিসেবে বলা হইয়াছে, ‘৩[(ঙ) কম্পিউটার প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে, কোন কম্পিউটার প্রোগ্রামের সম্পূর্ণ বা অংশবিশেষের পুনরুৎপাদন বা ব্যবহার।’
এইখানে “কম্পিউটার প্রোগ্রাম” বলিতে গণনাযন্ত্রকে দেয়া বিশেষ কিছু লিপিবদ্ধ নির্দেশনা-কে বোঝানো হইতেছে। বিজ্ঞ পাঠকগন নিশ্চয়ই বুঝিতে পারিয়াছেন উক্ত আইনে কি বুঝানো হইয়াছে। উক্ত আইন অনুসারে যদি কোন গণনাযন্ত্রে এমন কোন নির্দেশনা সম্পুর্ন অথবা তাহার অংশবিশেষ নির্দেশনার আসল মালিকের অনুমতি ব্যতিরেকে পুনর্ব্যবহার করা হয় যাহার মেধস্বত্ব করা রহিয়াছে তাহা হইলে তাহা আইন ভঙ্গ করিবে। এই ক্ষেত্রে যে ব্যক্তি ওই নির্দেশনা ব্যবহার করিয়াছেন অবশ্যই আইনের চোখে তিনি দোষী বলিয়া সাব্যস্ত হইবেন। যেহেতু ‘বিজয়’ এর মেধাস্বত্ব করা রহিয়াছে এবং ‘ইউনিবিজয়’ এ ‘বিজয়’ এর কিছু অংশ ব্যবহার করা হইয়াছে এবং ‘ইউনিবিজয়’ ‘অভ্র’ এর একটি অংশ, সেহেতু ‘অভ্র’ অবশ্যই মেধাস্বত্ব লঙ্ঘন করিয়াছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস জনাব মেহেদি হাসান এই বিপদ পূর্বেই অনুধাবন করিতে সমর্থ হইয়াছেন এবং নিজে আইনের হাত হইতে বাঁচিতে এখন বিভিন্ন আগডুম-বাগডুম বুলি আওড়াইতেছেন। কিন্তু আর নয়, দেশের মানুষ এখন মেধাস্বত্ব আইন জানিয়া গিয়াছে। সুতরাং জনাব মেহেদি হাসান কে আইন এর হাত থেকে আর কেউ বাঁচাতে পারবে না।
বিজ্ঞ পাঠকগন এখন নিশ্চয়ই বুঝিতে পারিয়াছেন যে, ‘অভ্র’ কিরূপে দেশের মেধাস্বত্ব আইন ভঙ্গ করিয়াছে। দেশের একজন সুনাগরিক হিসেবে আমাদের অবশ্যই আইনের প্রতি স্রদ্ধাশীল হইতে হইবে। আর জনাব মেহেদি হাসানের এ সকল হীন চক্রান্তককে নস্যাত করে দেশে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করিতে হইবেই। নতুবা আমাদের দেশ কখনোই শীর্ষ দূর্নীতিগ্রস্থ দেশের তকমা থেকে মুক্ত হইতে পারিবে না।
তবে এই ক্ষেত্রে নতুন আরেকটি বিষয় উঠিয়া আসিয়াছে। কেননা জনাব মোস্তফা জব্বার কেঁচো খুঁড়িতে গিয়া অজগর সর্প উত্তোলন করিয়া ফেলিয়াছেন। আর তাহা হইতেছে, আইন অনুযায়ী মেধাস্বত্ব আইনের আওতায় আনা হইয়াছে অর্থাৎ নিবন্ধন করা হইয়াছে এমন কোন নির্দেশিকার অংশবিশেষও ব্যবহার করা যাইবে না। আমি জানি না ‘বিজয়’ এ কোন নির্দেশক ভাষা ব্যবহার করা হইয়াছে তবে তাহা ‘সি’ নামক একটি বহুল প্রচলিত ভাষা হইবার যথেষ্ঠ সম্ভাবনা রহিয়াছে। আর তাহাই যদি হইয়া থাকে তাহা হইলে আমি এবং আমার সকল সহপাঠী বন্ধুগন এক বিরাট অন্যায় সাধন করিয়া বসিয়াছি। “গণনাযন্ত্র বিজ্ঞান” এর ছাত্র হওয়ার দরূন আমাদিগকে কতিপয় নির্দেশক ভাষা রপ্ত করানো হইয়াছে। তাহার মধ্যে ‘সি’ অন্যতম। এই ক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে ‘সি’ ভাষায় লিখিত সকল নির্দেশনার শুরুতেই “void main” অথবা “int main” বলিয়া একটি বাক্য লিখিতে হয়। এখন যদি ‘বিজয়’; ‘সি’ ভাষা কর্তৃক লিখিত হয় তাহা হইলে আমি এবং আমার সকল সহপাঠী বন্ধুগন আপন অজান্তেই দেশের আইন ভঙ্গ করিয়া বসিয়াছি। যেহেতু জনাব মোস্তফা জব্বার যারা যারা ‘বিজয়’ এর মেধাস্বত্ব ভঙ্গ করিয়াছে তাহাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করিবার বন্দোবস্ত করিতেছেন, সেহেতু আমরাও নিশ্চয়ই ইহার বাহিরে থাকিব না। কারন মেধাস্বত্ব আইন লঙ্ঘন করিবার অভিযোগ আমাদের ওপরেও বর্তায়। এমতাবস্থায় আমি জনাব মোস্তফা জব্বার এর নিকট একটি অনুরোধ করিতে চাহি; আর তাহা হইতেছে, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় এ যখন পদার্পন করিয়াছিলাম তখন নিতান্তই অবুঝ ছিলাম। শিক্ষকগন আমাদের সঠিক না বেঠিক শিক্ষা প্রদান করিতেছেন তাহার পার্থক্য নিরুপন করিবার ক্ষমতা তখনও আমাদের হইয়া উঠে নাই। সুতরাং ‘সি’ ভাষায় “void main” বাক্যটি ব্যবহার যে অবৈধ এবং তাহা মেধাস্বত্ব আইন লঙ্ঘন করে তাহা সম্পর্কে আমরা অবগত ছিলাম না। জানা থাকিলে আমরা অবশ্যই এত বড় দুরাচারে লিপ্ত হইতাম না। যেহেতু আমরা আইন ভঙ্গ করিয়াই ফেলিয়াছি সেহেতু আমাদের বিরুদ্ধে আপনি মকদ্দমা করিলে আমাদের কিছুই বলার থাকিবে না। কিন্তু আমাদিগের ন্যায় অজ্ঞদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করাটা কি আপনার ঠিক হইবে? আমার মনে হয় আমাদিগের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে যাহারা আমাদের এই হীন কার্যে লিপ্ত করাইয়াছেন তাহাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করাটাই যুক্তিযুক্ত হইবে। সেক্ষেত্রে প্রভাষক জনাব রুশদি শামস- এর নাম সবার আগে আসিবে। কেননা উক্ত শিক্ষকই আমাদের ‘সি’ ভাষা বিষয়ে জ্ঞান দান করিয়াছেন এবং শিক্ষক হইয়াও আমাদেরকে এত বড় পাপাচারের দিকে ঠেলিয়া দিয়াছেন। এর পরেই নাম আসিবে তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক জনাব ড. এম. এম. এ. হাশেম এর নাম। উনি উক্ত শিক্ষককে ইন্ধন যোগাইয়াছেন। সুতরাং আপন অনুরোধ হইতেছে, মকদ্দমা করিলে উক্ত দুই শিক্ষককে প্রধান আসামি করাই বোধহয় যুক্তিযুক্ত হইবে। কেননা উনারা আমাদিগের ন্যায় অনেক কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীর অজ্ঞানতার সুযোগ নিয়া এহেন হীন কার্যে লিপ্ত করাইয়াছেন, করাইতেছেন এবং করাইতে থাকিবেন।
আমি আরো কিছু বিষয়ে আলোকপাত করিতে ইচ্ছুক ছিলাম। কিন্তু লেখার কলেবর এতটাই বড় হইয়া গিয়াছে যে আমি ইহাকে আর বৃদ্ধি করিবার সাহস করিতেছি না। ইতোমধ্যেই আমার মনের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হইয়া গিয়াছে যে, এত বড় কলেবর এর লেখা কতজন পাঠক ধৈর্য্য ধরিয়া পড়িবেন। উক্ত কারনেই আমি আমার লেখনির এখানেই সমাপ্তি টানছি। ভবিষ্যতের কোন লেখনিতে আপনাদের সামনে আরো কিছু বিষয় তুলে ধরার ইচ্ছা পোষন করছি। লেখনির কোথাও কোন ভুল দেখিলে পাঠক তাহা আপন গুনে ক্ষমা করিয়া দিবেন বলিয়া আশা করিতেছি।
বি. দ্র.: ‘অভ্র’, ‘বিজয়’ এবং ‘সি’ আপন আপন মালিক কর্তৃক নিবন্ধিত নাম।

Bookmark and Share