সাম্প্রতিক সময়ে অন্তর্জাল জগত থেকে সংবাদপত্র সকল জায়গায় একটি বিষয় অত্যন্ত আলোচিত হইতেছে, তাহা হইলো “অভ্র কি বিজয় এর প্রতিলিপি।” প্রাথমিক দিককালে আমি ‘অভ্র’ এর প্রতি আপন দূর্বলতা পোষন করিয়াছি। ‘অভ্র’ এর সহশ্রষ্ঠা জনাব মেহেদি হাসান এর লেখনিকে বেদ বাক্য ধরিয়া ভাবিয়াছি, ‘অভ্র’ কে ‘বিজয়’ এর প্রতিলিপি বলিয়া জনাব মোস্তফা জব্বার কি নিচুতাই না দেখাইতেছেন! ‘অভ্র’ তে ব্যবহৃত ‘ইউনিবিজয়’ কোন প্রকারেই ‘বিজয়’ এর প্রতিলিপি হইতে পারে না। ইহা জনাব মোস্তফা জব্বার এর একটি অপপ্রচার মাত্র। জনাব মোস্তফা জব্বার এর এ সকল অপপ্রচার এর দরুন অন্তর্জাল জগতের অনেক বাসিন্দাই তাহার ওপর যারপরনাই বিরক্ত হইয়াছেন। তাহাকে বিভিন্ন ভাবে নিন্দা-মন্দ করিয়া বলিয়াছেন, বয়সের দরুন তাহার বুদ্ধি লোপ পাইয়াছে। তিনি বাংলা ভাষার বিকাশের পথে এক অন্তরায়। বাহান্ন সালে যেমন পাকিস্তানি সরকার বাংলা ভাষাকে দমাইয়া রাখিবার চেষ্টা করিয়াছিল, বর্তমানে জনাব মোস্তফা জব্বার তাহাই করিতেছেন। শুধু তাহাই নহে, অতি আগ্রহী ব্যক্তিগণ তাহাকে আপন পিতৃভ্রাতা এবং মাতৃভ্রাতা বলিয়া সম্বোধন করিয়াছেন। বলাই বাহুল্য, ইহা তাহার প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন স্বরূপ করা হয় নাই; তাহাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করিয়া করা হইয়াছে। অন্তর্জাল জগতের একজন সক্রিয় বাসিন্দা হওয়ার দরূন ইহা অনেক পূর্বেই আপন দৃষ্টিগোচর হইয়াছে এবং এতদিন ধরিয়া ইহা অত্যন্ত পুলকের সহিত উপভোগ করিতেছিলাম। কেননা পরিস্থিতি যথেষ্ঠ আনন্দদায়ক বলিয়াই প্রতিয়মান হইতেছিল আপনার নিকটে।
কিন্তু, আজিকে জনাব মোস্তফা জব্বার তাহার চমৎকার এক লেখনির (আইনের চোখে অভ্র ও অন্য কিছু বাংলা সফটওয়্যারের পাইরেসি) মাধ্যমে আপনার ধারনাকে ভুল বলিয়া প্রমান করিয়াছেন। তিনি সহজ বাক্যে বুঝাইয়া দিয়াছেন যে, জনাব মেহেদি হাসান তাহার কৌশলি লেখনির মাধ্যমে সাধারন জনগনকে কেমন করিয়া ভুল পথে চালিত করিবার অপচেষ্টা চালাইতেছেন। জনাব মোস্তফা জব্বার এর উক্ত সুখপাঠ্যটি আমার মুদিত চক্ষুপত্র উন্মোচন করিয়াছে এবং এখন আমি আশংকার সহিত লক্ষ্য করিলাম যে, জনাব মেহেদি হাসান জনগনকে ভ্রান্ত করার পথে কতখানি অগ্রসর হইয়া গিয়াছেন। জনাব মোস্তফা জব্বার আমাদের সামনে দেশে প্রবর্তিত মেধাস্বত্ব আইন তুলিয়া ধরিয়াছেন এবং সে আইন অনুসারে আমাদের ন্যায় অর্বাচিনদের ইহা বুঝাইবার প্রচেষ্টা লইয়াছেন যে ‘ইউনিবিজয়’ কোন কোন ক্ষেত্রে মেধাস্বত্ব লঙ্ঘন করিয়াছে। যাহারা আমার এই দীর্ঘ লেখায় বিরক্ত হইতে আরম্ভ করিয়াছেন অথবা বিরক্ত হইয়া গিয়াছেন, তাহাদের নিকট আমার অনুরোধ কিঞ্চিত ধৈর্য্য ধারন করিয়া আমার এ লেখাটি পড়িয়া সমাপ্ত করুন। ইহাতে আপনার উপকার বই অপকার হইবে না। নিচে আমি মেধাস্বত্ব আইন ও তার প্রয়োগ সম্পর্কে খানিকটা আলোকপাত করিবার চেষ্টা করিতেছি।
মেধাস্বত্ব আইন ২০০০ (২০০৫ সালে সংশোধিত) অনুসারে, ধারা ২(৮)(ঙ) তে মেধাস্বত্ব লঙ্ঘনকারী অনুলিপির সংজ্ঞা হিসেবে বলা হইয়াছে, ‘৩[(ঙ) কম্পিউটার প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে, কোন কম্পিউটার প্রোগ্রামের সম্পূর্ণ বা অংশবিশেষের পুনরুৎপাদন বা ব্যবহার।’
এইখানে “কম্পিউটার প্রোগ্রাম” বলিতে গণনাযন্ত্রকে দেয়া বিশেষ কিছু লিপিবদ্ধ নির্দেশনা-কে বোঝানো হইতেছে। বিজ্ঞ পাঠকগন নিশ্চয়ই বুঝিতে পারিয়াছেন উক্ত আইনে কি বুঝানো হইয়াছে। উক্ত আইন অনুসারে যদি কোন গণনাযন্ত্রে এমন কোন নির্দেশনা সম্পুর্ন অথবা তাহার অংশবিশেষ নির্দেশনার আসল মালিকের অনুমতি ব্যতিরেকে পুনর্ব্যবহার করা হয় যাহার মেধস্বত্ব করা রহিয়াছে তাহা হইলে তাহা আইন ভঙ্গ করিবে। এই ক্ষেত্রে যে ব্যক্তি ওই নির্দেশনা ব্যবহার করিয়াছেন অবশ্যই আইনের চোখে তিনি দোষী বলিয়া সাব্যস্ত হইবেন। যেহেতু ‘বিজয়’ এর মেধাস্বত্ব করা রহিয়াছে এবং ‘ইউনিবিজয়’ এ ‘বিজয়’ এর কিছু অংশ ব্যবহার করা হইয়াছে এবং ‘ইউনিবিজয়’ ‘অভ্র’ এর একটি অংশ, সেহেতু ‘অভ্র’ অবশ্যই মেধাস্বত্ব লঙ্ঘন করিয়াছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস জনাব মেহেদি হাসান এই বিপদ পূর্বেই অনুধাবন করিতে সমর্থ হইয়াছেন এবং নিজে আইনের হাত হইতে বাঁচিতে এখন বিভিন্ন আগডুম-বাগডুম বুলি আওড়াইতেছেন। কিন্তু আর নয়, দেশের মানুষ এখন মেধাস্বত্ব আইন জানিয়া গিয়াছে। সুতরাং জনাব মেহেদি হাসান কে আইন এর হাত থেকে আর কেউ বাঁচাতে পারবে না।
বিজ্ঞ পাঠকগন এখন নিশ্চয়ই বুঝিতে পারিয়াছেন যে, ‘অভ্র’ কিরূপে দেশের মেধাস্বত্ব আইন ভঙ্গ করিয়াছে। দেশের একজন সুনাগরিক হিসেবে আমাদের অবশ্যই আইনের প্রতি স্রদ্ধাশীল হইতে হইবে। আর জনাব মেহেদি হাসানের এ সকল হীন চক্রান্তককে নস্যাত করে দেশে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করিতে হইবেই। নতুবা আমাদের দেশ কখনোই শীর্ষ দূর্নীতিগ্রস্থ দেশের তকমা থেকে মুক্ত হইতে পারিবে না।
তবে এই ক্ষেত্রে নতুন আরেকটি বিষয় উঠিয়া আসিয়াছে। কেননা জনাব মোস্তফা জব্বার কেঁচো খুঁড়িতে গিয়া অজগর সর্প উত্তোলন করিয়া ফেলিয়াছেন। আর তাহা হইতেছে, আইন অনুযায়ী মেধাস্বত্ব আইনের আওতায় আনা হইয়াছে অর্থাৎ নিবন্ধন করা হইয়াছে এমন কোন নির্দেশিকার অংশবিশেষও ব্যবহার করা যাইবে না। আমি জানি না ‘বিজয়’ এ কোন নির্দেশক ভাষা ব্যবহার করা হইয়াছে তবে তাহা ‘সি’ নামক একটি বহুল প্রচলিত ভাষা হইবার যথেষ্ঠ সম্ভাবনা রহিয়াছে। আর তাহাই যদি হইয়া থাকে তাহা হইলে আমি এবং আমার সকল সহপাঠী বন্ধুগন এক বিরাট অন্যায় সাধন করিয়া বসিয়াছি। “গণনাযন্ত্র বিজ্ঞান” এর ছাত্র হওয়ার দরূন আমাদিগকে কতিপয় নির্দেশক ভাষা রপ্ত করানো হইয়াছে। তাহার মধ্যে ‘সি’ অন্যতম। এই ক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে ‘সি’ ভাষায় লিখিত সকল নির্দেশনার শুরুতেই “void main” অথবা “int main” বলিয়া একটি বাক্য লিখিতে হয়। এখন যদি ‘বিজয়’; ‘সি’ ভাষা কর্তৃক লিখিত হয় তাহা হইলে আমি এবং আমার সকল সহপাঠী বন্ধুগন আপন অজান্তেই দেশের আইন ভঙ্গ করিয়া বসিয়াছি। যেহেতু জনাব মোস্তফা জব্বার যারা যারা ‘বিজয়’ এর মেধাস্বত্ব ভঙ্গ করিয়াছে তাহাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করিবার বন্দোবস্ত করিতেছেন, সেহেতু আমরাও নিশ্চয়ই ইহার বাহিরে থাকিব না। কারন মেধাস্বত্ব আইন লঙ্ঘন করিবার অভিযোগ আমাদের ওপরেও বর্তায়। এমতাবস্থায় আমি জনাব মোস্তফা জব্বার এর নিকট একটি অনুরোধ করিতে চাহি; আর তাহা হইতেছে, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় এ যখন পদার্পন করিয়াছিলাম তখন নিতান্তই অবুঝ ছিলাম। শিক্ষকগন আমাদের সঠিক না বেঠিক শিক্ষা প্রদান করিতেছেন তাহার পার্থক্য নিরুপন করিবার ক্ষমতা তখনও আমাদের হইয়া উঠে নাই। সুতরাং ‘সি’ ভাষায় “void main” বাক্যটি ব্যবহার যে অবৈধ এবং তাহা মেধাস্বত্ব আইন লঙ্ঘন করে তাহা সম্পর্কে আমরা অবগত ছিলাম না। জানা থাকিলে আমরা অবশ্যই এত বড় দুরাচারে লিপ্ত হইতাম না। যেহেতু আমরা আইন ভঙ্গ করিয়াই ফেলিয়াছি সেহেতু আমাদের বিরুদ্ধে আপনি মকদ্দমা করিলে আমাদের কিছুই বলার থাকিবে না। কিন্তু আমাদিগের ন্যায় অজ্ঞদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করাটা কি আপনার ঠিক হইবে? আমার মনে হয় আমাদিগের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে যাহারা আমাদের এই হীন কার্যে লিপ্ত করাইয়াছেন তাহাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করাটাই যুক্তিযুক্ত হইবে। সেক্ষেত্রে প্রভাষক জনাব রুশদি শামস- এর নাম সবার আগে আসিবে। কেননা উক্ত শিক্ষকই আমাদের ‘সি’ ভাষা বিষয়ে জ্ঞান দান করিয়াছেন এবং শিক্ষক হইয়াও আমাদেরকে এত বড় পাপাচারের দিকে ঠেলিয়া দিয়াছেন। এর পরেই নাম আসিবে তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক জনাব ড. এম. এম. এ. হাশেম এর নাম। উনি উক্ত শিক্ষককে ইন্ধন যোগাইয়াছেন। সুতরাং আপন অনুরোধ হইতেছে, মকদ্দমা করিলে উক্ত দুই শিক্ষককে প্রধান আসামি করাই বোধহয় যুক্তিযুক্ত হইবে। কেননা উনারা আমাদিগের ন্যায় অনেক কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীর অজ্ঞানতার সুযোগ নিয়া এহেন হীন কার্যে লিপ্ত করাইয়াছেন, করাইতেছেন এবং করাইতে থাকিবেন।
আমি আরো কিছু বিষয়ে আলোকপাত করিতে ইচ্ছুক ছিলাম। কিন্তু লেখার কলেবর এতটাই বড় হইয়া গিয়াছে যে আমি ইহাকে আর বৃদ্ধি করিবার সাহস করিতেছি না। ইতোমধ্যেই আমার মনের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হইয়া গিয়াছে যে, এত বড় কলেবর এর লেখা কতজন পাঠক ধৈর্য্য ধরিয়া পড়িবেন। উক্ত কারনেই আমি আমার লেখনির এখানেই সমাপ্তি টানছি। ভবিষ্যতের কোন লেখনিতে আপনাদের সামনে আরো কিছু বিষয় তুলে ধরার ইচ্ছা পোষন করছি। লেখনির কোথাও কোন ভুল দেখিলে পাঠক তাহা আপন গুনে ক্ষমা করিয়া দিবেন বলিয়া আশা করিতেছি।
বি. দ্র.: ‘অভ্র’, ‘বিজয়’ এবং ‘সি’ আপন আপন মালিক কর্তৃক নিবন্ধিত নাম।

Bookmark and Share